ইচ্ছে থাকলে যে উপায় হয়, বেহালা থানার পুলিশ অন্তত সেটা প্রমাণ করল। একের পর এক ধর্ষণ, শ্লীলতাহানি, কটূক্তির ঘটনায় রাজ্য যখন জেরবার, তখন কিছু মহিলা পুলিশকে সামনে রেখে নজরদারি চালিয়ে শনিবার ঘণ্টাদুয়েকের মধ্যে ৩ ইভ-টিজারকে ধরে ফেলল বেহালা থানার পুলিশ। হাতেনাতে ফল মেলায় রীতিমতো উৎসাহিত পুলিশ অফিসারেরা জানিয়েছেন, এমন নজরদারি চলবে।
খাতায় কলমে কোনও অভিযোগ জমা না পড়লেও বেহালা পুলিশের কাছে খবর আসছিল, ওই এলাকাতেও রাস্তাঘাটে হেনস্থা হচ্ছেন মহিলারা। স্বতঃপ্রণোদিত ভাবেই নজরদারি শুরু করেন পুলিশ অফিসারেরা।
কী ভাবে? থানার ৩ মহিলা পুলিশকর্মী সাদা পোশাকে রাস্তায় ঘোরাঘুরি শুরু করেন। মূলত স্কুল-কলেজ-অফিস শেষে যে সময় মহিলারা বাড়ি ফেরেন, দুপুর থেকে সন্ধ্যার সেই সময়টাতেই বেহালার কয়েকটি নির্দিষ্ট জায়গায় টহল দিতে থাকেন তাঁরা। যেমন বেহালা ব্লাইন্ড স্কুলের সামনে, ট্রাম ডিপো, চৌরাস্তা ইত্যাদি এলাকা। জনবহুল ওই সব জায়গায় সাধারণ পোশাকের পুলিশকে পথচলতি আর পাঁচ জন সাধারণ মহিলা দুষ্কৃতীরা ভুল করবে এবং হেনস্থা করতে এগিয়ে এলেই তাদের হাতেনাতে ধরা হবে, এমন ভাবনা থেকেই এই পরিকল্পনা। পরিকল্পনা বিফলে গেল না। প্রথম ঘটনা ঘটল শনিবার দুপুর দুটো নাগাদ। পুলিশ সূত্রের খবর, ব্লাইন্ড স্কুলের সামনে সাদা পোশাকে দাঁড়িয়ে ছিলেন এক মহিলাকর্মী। তাঁকে দেখে এগিয়ে আসে বছর ত্রিশের এক যুবক। প্রথমে চোখের ইশারা। তার পরে শুরু হয় বন্ধুত্বের প্রস্তাব দেওয়া এবং নানা রকম অশালীন ইঙ্গিত।
কাছেই সাদা পোশাকে ছিলেন বেহালা থানার ওসি সুদীপ্ত নাগ। সাধারণ নাগরিক হিসেবেই রুখে দাঁড়ান তিনি। কিন্তু তাতে বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে ওসি-কেই ওই যুবক পাল্টা প্রশ্ন করে, “তুই এর মধ্যে আসছিস কেন? বোন হয় না কি তোর!” ব্যাস! বিরাশি সিক্কার এক থাপ্পড়ে অনুপ চৌরাসিয়া নামে ঠাকুরপুকুরের বাসিন্দা ওই যুবককে রাস্তায় চিৎপাত করে কলার ধরে পুলিশ ভ্যানে তোলেন সুদীপ্তবাবু।
পরের ঘটনা বিকেল চারটেয়। ট্রাম ডিপোর কাছে অনেকটা একই ঢঙে সাদা পোশাকের এক মহিলা পুলিশকর্মীর উদ্দেশে কটূক্তি ও অশালীন ইঙ্গিত করে তারাতলার বাসিন্দা ওমপ্রকাশ পাণ্ডে। মহিলা পুলিশকর্মী ও তাঁর সহকর্মী প্রকাশ মিশ্র হাতেনাতে ধরে ফেলেন তাকে। তার মিনিট ২০-র মধ্যে ধরা পড়ে সমরেশ সিংহ নামে আরও এক যুবক। দিল্লি গণধর্ষণ কাণ্ডের পরে পুলিশ কমিশনার রঞ্জিতকুমার পচনন্দা পুলিশ কর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন, যে যার এলাকায় নিজের মতো করে নজরদারি চালান। দিল্লির মতো ঘটনা যাতে কিছুতেই না ঘটতে পারে, সে জন্য সতর্ক থাকারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তার পরেই বেহালা থানার এই উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন পুলিশ অফিসারেরা। তাঁরা জানান, রাস্তাঘাটে তো বটেই, ওই এলাকার বিভিন্ন রুটের বাসেও একই ভাবে নজরদারি চলছে, চলবে। অফিসারদের আশা, কিছুটা হলেও এতে ইভটিজারদের দৌরাত্ম্য কমানো যাবে। |