১০০ দিনের প্রকল্পের কাজ করানোর নামে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, যে পরিমাণ টাকা বরাদ্দ হয়েছে, তার ১৭ শতাংশ খরচ হয়নি। পরিণতিতে জেলায় যতজনের জব কার্ড রয়েছে, তাঁদের সিংহভাগই কাজ পাননি। বিধি অনুযায়ী, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ দিতে না-পারলে তাঁদের ক্ষতিপূরণ বাবদ মজুরি দিতে হবে। তাও দেওয়া হয়নি। এমনকী, যাঁদের কাজ দেওয়া হয়েছে, তাঁদেরও নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে মজুরি বিলি করা হয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ হল, কাজকর্ম ঠিকঠাক হচ্ছে কি না তে দেখার কথা যাঁদের, তাঁরা তদারকি বাবদ প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা খরচ দেখিয়েছেন। এ হেন অনিয়মের সূত্রেই বড় মাপের দুর্নীতির আশঙ্কা করছেন আবেদনকারীদের অনেকেই। ওই অনিয়ম ধরা পড়েছে কম্পট্রোলার অ্যানড অডিটর জেনারেলের (ক্যাগ) তরফে যে অডিট হয়েছে তাতেও। ২০০৬-০৭ থেকে ২০১০-১১ পর্যন্ত পর পর ৬টি আর্থিক বছরের অডিটে ওই তথ্য ধরা পড়েছে। অডিটে বলা হয়েছে, ওই সময়কালের মধ্যে কাজের দাবি করেও ১০০ দিনের প্রকল্পে ৯২ থেকে ৯৯.৭১ শতাংশ মানুষকে কাজ দেওয়া যায়নি। ওই অডিট রিপোর্টেও স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, জেলায় ১০০ দিনের প্রকল্পে তদারকি চালাতে গাড়ি ভাড়া ও জ্বালানি বাবদ ১৩ লক্ষ ৫৩ হাজার টাকা খরচ করেছে জেলা এনআরইজিএ সেল। এত বিপুল টাকা খরচ করা হলেও তার সপক্ষে কোনও নথিপত্র অডিট অফিসারদের দিতে পারেননি ওই সেলের কর্তারা। |
ক্যাগের রিপোর্টে বলা হয়েছে, তাই বার্ষিক কর্মপরিকল্পনার লক্ষ্যমাত্রা পূরণের হার ছিল খুব সামান্য। প্রত্যেক পরিবারকে ১০০ দিনের কাজ দেওয়ার মূল লক্ষ্য পূরণ হয়নি। দেরিতে মজুরি দেওয়া ও কাজ দিতে না-পারলে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি বলেও ক্যাগ জানিয়েছে। শুধু তাই নয়, ওই প্রকল্পের তদারকির কাজও ঠিক মতো হয়নি বলে ক্যাগ জানিয়েছে। অফিসারদের মন্তব্য, “সার্বিক ভাবে ১০০ দিনের প্রকল্প রূপায়ণে ঘাটতি ছিল।”
এই ব্যাপারে দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক দুর্গাদাস গোস্বামী এ সম্পর্কে বলেছেন, “প্রকল্পের অগ্রগতিতে নানা সমস্যা রয়েছে। বেশির ভাগ মানুষ জব কার্ড করলেও কাজের সময় অনেক কম লোককে দেখা যায়। কাজের তদারকিতে খরচের হিসাব না দেওয়ার বিষয়টি দেখা হচ্ছে।” তিনি জানান, চলতি আর্থিক বছরে ১০০ দিনের প্রকল্পে ব্যাক্তিগত সবজি চাষে উপভোক্তাদের যুক্ত করায় প্রকল্পের গতি বাড়বে।
২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে জাতীয় গ্রামীণ কর্মনিশ্চিতকরণ আইন বিধিবদ্ধ হয়। জেলা স্তরে ডিস্ট্রিক্ট প্রোগ্রাম কো অর্ডিনেটর, পঞ্চায়েত সমিতি এবং গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে প্রকল্প আধিকারিকদের মাধ্যমে প্রকল্প রূপায়ণ করেন। প্রকল্পটির উদ্দেশ্য, গ্রামীণ পরিবারের প্রাপ্তবয়স্ক সদস্যরা স্বেচ্ছায় কায়িক শ্রমযুক্ত অদক্ষ কাজ করতে চাইলে প্রত্যেককে প্রতি আর্থিক বছরে কমপক্ষে ১০০ দিনের কাজের মজুরি নিশ্চিত করতে হবে। আবেদনকারীর জীবিকার সুরক্ষার স্বার্থে দ্রুত তাদের মজুরি মিটিয়ে দেওয়াও বাধ্যতামূলক। কাজের নিরীক্ষা করতে গিয়ে ক্যাগ ধরেছে একাধিক অসঙ্গতি। কাজ শেষ করেও শ্রমিকেরা সময় মতো মজুরি পাননি। গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি মজুরি দিতে দেরি করেছে। অথচ শ্রমিকদের সাপ্তাহিক ভিত্তিতে এবং কাজ শেষ হওয়ার ১৪ দিনের মধ্যে মজুরি দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। কোনও পঞ্চায়েত প্রকল্পের নিয়ম না মানলে শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ক্যাগ রিপোর্টে প্রকাশ, ২০০৮-১০ সময়কালের সিপিএম পরিচালিত গোপালবাটি পঞ্চায়েত এবং কংগ্রেস পরিচালিত ভাটপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েত ওই নিয়ম মানেনি। তারা ৮৮৭ জন শ্রমিককে মজুরির ৪ লক্ষ ৫১ হাজার টাকা দিতে ৩৫ দিন পর্যন্ত দেরি করেছে। ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি। নমুনা গ্রাম পঞ্চায়েত দুটি নির্দেশিকা লঙ্ঘন করে ২৭ হাজার ৭৯৬ টি জবকার্ডের মধ্যে ১৯ হাজার ১২৪ টি জবকার্ডে ছবি লাগায়নি। ক্যাগের আশঙ্কা, ছবি না থাকার জন্য কোনও মানুষকে একাধিক জবকার্ড দেওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। জেলার ৬৫ টি গ্রাম পঞ্চায়েতে এ ধরনের অনিয়ম ধরা পড়েছে। |