‘আইপিপি-৮’ প্রকল্পে অন্তত দেড় কোটি টাকার ওষুধ শিলিগুড়ি পুরসভার মাতৃসদনের গুদামে পড়ে থেকে নষ্ট হল। এর দায় কার তা নিয়ে বর্তমান পুর বোর্ড এবং বিরোধী বামেদের চাপানউতোর শুরু হয়েছে। মূলত, ২০০০-২০০৯ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে সে সব ওষুধ। অল্প হলেও ২০১০ এবং ২০১১ সালে মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধও রয়েছে। ‘আয়রণ-ফোলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট’, প্যারাসিটামল, মেট্রোনিডাজোল-সহ অন্তত ২৫ রকমের প্রচুর ওষুধ ট্রাক বোঝাই করে গত ৩ দিন ধরে পুরসভার ডাম্পিং গ্রাউন্ডে ফেলতে দেখে বিষয়টি নজরে এসেছে। শুক্রবারও ২ গাড়ি ওষুধ ফেলা হয়েছে। ৩ দিনে ফেলা হয়েছে প্রায় ৬ ট্রাক ওষুধ। তবে কোন ওষুধ, কত পরিমাণে রয়েছে, কবে সেগুলি আনা হয়েছিল সে ব্যাপারে কোনও নথিই নেই পুরসভার কাছে। তা ছাড়া ডাম্পিং গ্রাউন্ডে ফেলে দেওয়া কিছু ওষুধ মাটিতে পুঁতে ফেলা হলেও অধিকাংশ তা করা হয়নি। তাতে ওই চত্বরে কুড়নিরা সেগুলি তুলে নিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এলাকার বাসিন্দাদের একাংশও। মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে ওষুধ নষ্ট করার যে প্রক্রিয়া রয়েছে তা মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
ওষুধ ফেলে দেওয়ার ঘটনা অবশ্য পুর-ইতিহাসে নতুন নয়। ২০০৯ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত বামেরা পুরসভায় ক্ষমতায় ছিলেন। সে সময় ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে পুরসভার হেল্থ পোস্ট থেকে প্রায় ৫০ হাজার টাকার মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ মাটিতে পুঁতে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। জিতে এর পর ক্ষমতায় আসেন কংগ্রেস-তৃণমূল জোট। এত ওষুধ নষ্ট হওয়ার দায় তাই বামেদের ঘাড়েই চাপিয়েছে বর্তমান পুর বোর্ড। বিরোধী দলনেতা মুন্সি নুরুল ইসলাম বলেন, “যে সময়েরই ওষুধ হোক তা এ ভাবে নষ্ট হওয়া উদ্বেগের। কিছুটা দায় আমাদের আছে।” |
তিনি জানান, বিশ্বব্যাঙ্কের আর্থিক সহায়তায় আইপিপি-৮ প্রকল্পে ওই ওষুধগুলি সুডার তরফে পুরসভার মাতৃসদনে পাঠানো হয়েছিল। চাহিদা না-থাকলেও বিপুল পরিমাণ ওষুধ কেন পাঠানো হয়েছিল তা দেখা দরকার। এর সঠিক ব্যবহার কী ভাবে করা যেত তা জানা প্রয়োজন। উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত চেয়েছেন নুরুলবাবু।
মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত বলেন, “বামেদের জমানায় ওই সমস্ত ওষুধ কেনা হয়েছিল। আমাদের সময় থেকে সুডার তরফে কোনও ওষুধ আসেনি। বর্তমানে মাতৃসদনে ওষুধ দরকার পড়লে টেন্ডার ডেকে প্রয়োজন মতো ওষুধ কেনা হয়।” মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধগুলি ফেলে রাখা হয়েছিল কেন? স্বাস্থ্য বিভাগের মেয়র পারিষদ মৈত্রেয়ী চক্রবর্তী জানান, কী করা হবে তা ঠিক করা যায়নি বলে সেগুলি পড়ে ছিল। এ সবই বাম জমানায় আনা হয়েছিল। তাঁরা সেগুলি ঠিক মতো ব্যবহার করতে পারেনি। মাতৃসদনের পাশে সে ঘরে ওষুধগুলি মজুত করা ছিল সেখানে ৩ নম্বর বরো অফিস স্থানান্তর করা হবে। ঘর পরিষ্কার করতে ওষুধগুলি এখন ফেলা হচ্ছে। বর্তমানে মাতৃসদনে কর্মরত আধিকারিক এবং কর্মীরা নতুন বলে তাঁরা ওষুধের ব্যাপারে কিছু বলতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের আধিকারিক সুনীল দাস অবশ্য বাম জমানা থেকেই দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি জানান, বিশ্বব্যাঙ্কের আর্থিক সহায়তায় প্রয়োজনের অতিরিক্ত প্রচুর ওষুধ ২০০২-২০০৩ সালে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে জেলা স্বাস্থ্য দফতরও অনেক ওষুধ তাদের দিয়েছে। পরবর্তীতে এমন কিছু ওষুধ দেওয়া হয় যেগুলির মেয়াদ কয়েক মাসের মধ্যেই ফুরিয়ে যাবে। সে সময় হাসপাতালে ও পুরসভার ৬১টি হেল্থ পোস্টগুলিতে ওষুধের একাংশ পাঠানো হয়। পরে মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ সেখান থেকে ফেরত-ও আসে। সেগুলি পড়েছিল। তবে কর্মীর অভাবে ওষুধের বিস্তারিত হিসাব সঠিকভাবে নথিভুক্ত করা যায়নি। জেলার অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তুলসি প্রামাণিক জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য দফতরের তরফে মাতৃসদনে কখনও তাঁরা ওষুধ পাঠাননি। |