বিধায়ক তহবিলের টাকায় এলাকায় কিঞ্চিত উন্নয়নের আশায় বুক বেঁধেছিল নলহাটি। সে আশা মুখ থুবড়ে পড়েছে।
খান পাঁচেক সেতু, দুটি কলেজ, গঙ্গার পাড় বরাবার স্পার, নদী সংস্কার, খান কয়েক কালভার্ট তৈরি--ইংরেজবাজারের উন্নয়নের এই দীর্ঘ তালিকাও আপাতত ‘প্রতিশ্রুতি-বন্দি’। থমকে গিয়েছে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর শিল্যান্যাসের অনুষ্ঠান। এমনকী হাজার খানেক সাইকেল বিলিও।
শুক্রবার, মুর্শিদাবাদের রেজিনগর, বীরভূমের নলহাটি কিংবা মালদহের ইংরেজবাজারে তিনটি উপনির্বাচনের ধাক্কায় হিসেবটাই ‘ওলটপালট’ হয়ে গিয়েছে। তিন জেলায় সার্বিক ভাবেই স্তব্ধ উন্নয়নমূলক কাজের ঘোষণা। নির্বাচন কমিশনের অনুশাসনে এক ধাক্কায় দাঁড়ি পড়ে গিয়েছে ছোটখাটো রাস্তা সংস্কার কিংবা একশো দিনের কাজে নিছক বন সৃজনও। বাস্তবিকই হিসেবটাই ওলটপালট হয়ে গিয়েছে। মন্ত্রীসভার এক তাবড় সদস্য তাই বলছেন, “একেবারে কর্মনাশা!”
কাজের অগ্রগতি নয় শুক্রবার থেকে বরং নতুন কাজ শুরুর ‘ভূত’ দেখছেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা। পদস্থ এক জেলা-কর্তা বলছেন, “কে আর সাধ করে নির্বাচন কমিশনের চোখ রাঙানির সামনে পড়তে চায় বলুন!” উল্টে তাঁরা খোঁজ নিচ্ছেন, বিধি ভেঙে অজান্তে কেউ ফিতে কেটে বসল নাতো! ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে যাওয়া কিংবা বিশেষ জরুরি কোনও কাজ ছাড়া তিন জেলায় ‘কর্মসংস্কৃতি’ আপাতত তাই থমকে।
বীরভূমের জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা বলেন, “নির্বাচনী বিধি কার্যকর হয়ে যাওয়ায় নতুন করে কোনও কাজ করা যাবে না। না, সাইকেলও দিতে পারব না। সব তোলা থাকল নির্বাচন পরবর্তী দিনের জন্য।” নলহাটির প্রাক্তন বিধায়ক তথা জঙ্গিপুরের সাংসদ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের বিধায়ক থাকাকালীন তাঁর তহবিল থেকে প্রায় ১৭ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন এলাকা উন্নয়নের জন্য। কোন খাতে কী খরচ হবে, তাও জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। সে সব এখন শিকেয়।
ইংরেজবাজার অবশ্য ভাগ্যবান। জেলাশাসক শ্রীমতি অর্চনা বলেন, “সেন্ট্রাল বাস টার্মিনাস, লক্ষ্মীপুর ড্রেনেজ প্রকল্প, সংখ্যালঘু দফতরের ভবন নির্মাণ ভাগ্যিস এই কাজগুলি শুরু হয়ে গিয়েছিল।” না হলে এ সব প্রকল্পেরও দিনের আলো দেখতে দু-মাস কেটে যেত। তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের নারী ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রের গলায় আফশোস, “ভুতনি সেতুর শিলান্যাস করার কথা ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। আপাতত তা-ও আটকে যাবে জানেন!” আর যাঁর জন্য এউ উপনির্বাচনের ধাক্কা, রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী তথা ইংরেজবাজার উপনিবার্চনের তৃণমূল প্রার্থী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী বলেন, “উপনিবার্চন ঘোষণা হতেই আমি সরকারি গাড়ি ছেড়ে দিয়েছি।”
আর সদ্য কংগ্রেস-ত্যাগী হুমায়ুন কবীর? ঘনিষ্ঠ মহলে কবুল করেছেন, ক’টা দিন সময় পেলে ভাল হত। এ ক’দিনে কাজ তো তেমন করাই গেল না! |