সরকারি সাহায্যপুষ্ট গ্রন্থাগারে কোন কোন সংবাদপত্র রাখা যাবে, প্রশাসনিক নির্দেশ দিয়ে রাজ্য সরকার তা স্থির করতে পারে কি না, কলকাতা হাইকোর্ট সেটা জানতে চাইল। গ্রন্থাগারের জন্য সংবাদপত্র নির্বাচনের ক্ষেত্রে রাজ্যের মাপকাঠি কী, কীসের ভিত্তিতেই বা কোনও সংবাদপত্রের ‘নিরপেক্ষতা’ নির্ধারিত হচ্ছে, এবং এই পুরো ব্যবস্থায় হাইকোর্টের হস্তক্ষেপের এক্তিয়ার কতটা, আদালতের তা-ও জিজ্ঞাস্য। শুক্রবার সরকার ও সংশ্লিষ্ট জনস্বার্থ-মামলার আবেদনকারীর কাছে এ সব জানতে চেয়েছে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির ডিভিশন বেঞ্চ।
সরকারি সাহায্যপুষ্ট গ্রন্থাগারগুলোয় কোন কোন সংবাদপত্র রাখা যাবে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল পশ্চিমবঙ্গে শাসনক্ষমতায় আসার কিছু দিন পরে সে সম্পর্কে প্রশাসনিক নির্দেশিকা জারি হয়। নির্বাচিত তালিকা থেকে রাজনৈতিক দলের দলীয় সংবাদপত্র যেমন বাদ পড়ে, তেমন রাজ্যে সর্বাধিক প্রচারিত সংবাদপত্রেরও সেখানে ঠাঁই হয়নি। অন্য দিকে জায়গা পেয়ে যায় তখনও অপ্রকাশিত সংবাদপত্রের নাম। ওই প্রশাসনিক নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে জনস্বার্থ-মামলা দায়ের করেছিলেন আইনজীবী বাসবী রায়চৌধুরী। এ দিন তার শুনানি হয়।
সওয়ালে আবেদনকারীর কৌঁসুলি সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, গ্রন্থাগারে কী কী সংবাদপত্র পাঠকদের জন্য রাখা হবে, তা নির্ধারণের অধিকার সরকারের নেই। প্রতি গ্রন্থাগারে নির্বাচিত কমিটি রয়েছে। পাঠকদের আগ্রহ অনুসারে তারাই ঠিক করবে, কোন কাগজ রাখা হবে। তাঁর বক্তব্য: পাঠক বা নির্বাচিত কমিটির মতামতকে মূল্য না-দিয়েই রাজ্য সরকার কিছু কাগজের নাম বেঁধে দিয়েছে। দেখা যাচ্ছে, যে সব কাগজ রাজ্য সরকারের কাজকর্ম সমর্থন করে, সেগুলোকেই রাখা হয়েছে। “শাসকদলের এক সাংসদ একটি সংবাদপত্র গোষ্ঠীর সিইও, সেই সংবাদপত্রের স্থান হয়েছে। শাসকদলের আর এক সাংসদের সম্পাদনায় একটি কাগজ প্রকাশিত হয়, সেটাও তালিকায় জায়গা পেয়েছে। ওই সাংসদই আবার শাসকদলের দলীয় মুখপত্র সম্পাদনা করেন। অথচ রাজ্যের সর্বাধিক প্রচারিত সংবাদপত্রের ঠাঁই হয়নি তালিকায়।” অভিযোগ বাদী কোঁসুলির।
পাল্টা সওয়ালে সরকারি আইনজীবী অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এটা রাজ্য সরকারের প্রশাসনিক নির্দেশ। তাঁর দাবি, পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারও চারটি সংবাদপত্রকে চিহ্নিত করে দিয়েছিল, যার মধ্যে ছিল তদানীন্তন শাসকদলের মুখপত্র। আর ছিল একটি ইংরেজি, একটি বাংলা ও একটি সরকারি সংবাদপত্র।
দু’পক্ষের সওয়াল শুনে ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সব দিক থেকে খতিয়ে দেখার জন্য মামলার সবিস্তার শুনানি জরুরি। হাইকোর্ট কোন এক্তিয়ারে এখানে হস্তক্ষেপ করতে পারে, আবেদনকারীর আইনজীবীর কাছে তার ব্যাখ্যা চেয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ।
পনেরো দিন বাদে মামলার ফের শুনানি হবে। |