সেট টপে আপত্তি
জেদের মাসুল বছরে ৫০ কোটি, জানেন মন্ত্রীও
র্থের অভাবে সব কাজ করা যাচ্ছে না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রায় নিয়মিত ভাবে এই আক্ষেপ করে চলেছেন। অথচ কেব্ল টেলিভিশনে ডিজিট্যাল সম্প্রসারণ চালু করতে না-দিয়ে তাঁরই সরকার কর বাবদ বছরে প্রায় ৫০ কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে!
এবং মুমূর্ষু রাজকোষকে চাঙ্গা করার এমন সুবর্ণ সুযোগ হাতে পেয়েও তা হাতছাড়া করার বিষয়টি এখন অস্বীকার করছেন না রাজ্যের পুর-নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও। যদিও তাঁর বক্তব্য, ডিজিট্যাল সম্প্রচারের খাতিরে সেট টপ বক্সের খরচের ভার গ্রাহকদের উপরে সরকার চাপিয়ে দিতে চায় না। “আমরা কোনও রকম জোর-জবরদস্তির বিরুদ্ধে।” মন্তব্য তাঁর।
সরকারের এ হেন মনোভাবেরই মাসুল গুণছে রাজ্যের কোষাগার। সরকারি তথ্য বলছে, শুধু কলকাতা মেট্রো এলাকায় অন্তত ৪২ লক্ষ টেলিভিশন সেটে কেব্ল সংযোগ রয়েছে। এক গ্রাহকের একটাই টেলিভিশন ধরে এ নিতান্তই প্রাথমিক হিসেব। এর মধ্যে ডিরেক্ট টু হোম (ডিটিএইচ) পরিষেবা রয়েছে অন্তত ৮ লক্ষ সেটে। এগুলি থেকে প্রাপ্য কর আদায়ে কোনও অসুবিধে নেই। কিন্তু কেব্ল-সংযোগের বাকি গ্রাহকের সংখ্যা নিয়ে ভীষণ রকম অস্পষ্টতা থেকে গিয়েছে, যার জেরে প্রাপ্য করের প্রায় কিছুই সরকারের হাতে আসছে না। কেন?
সরকার ও সম্প্রচারকারী মহল দায়ী করছে বর্তমানের অ্যানালগ ব্যবস্থাকে। তাঁদের আক্ষেপ, এতে প্রকৃত কেব্ল-গ্রাহকের সংখ্যা নিরূপণের কোনও উপায় নেই, তার জন্য অপারেটরদের ‘মুখের কথার’ উপরে ভরসা করে থাকতে হয়। আর এই প্রাযুক্তিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির অপারেটর গ্রাহকের সংখ্যা বিস্তর কমিয়ে দেখাচ্ছেন বলে অভিযোগ। ফলে কেব্ল খাতে রাজস্ব আদায় মার খাচ্ছে।
যেমন, হিসেব অনুযায়ী ডিটিএইচ বাদে ৩৪ লক্ষ টেলিভিশন সেটের জন্য কেব্ল-পরিষেবা কর পাওয়ার কথা থাকলেও ৩০ হাজারের বেশি সেট থেকে তা মিলছে না। এখানেই রাজ্য হারাচ্ছে বছরে অন্তত ৭ কোটি টাকা। কী ভাবে?
অর্থ দফতরের এক কর্তার ব্যাখ্যা: টেলিভিশনপিছু গড়ে মাসিক দু’শো টাকা গ্রাহক চাঁদা ধরলে ৩৪ লক্ষ সেট থেকে বছরে মোট যে ভাড়া ওঠে, সে বাবদ প্রাপ্ত পরিষেবা করের টাকার (যা কেন্দ্র আদায় করে) ভাগ হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের কোষাগারে অন্তত সাড়ে ৭ কোটি টাকা আসার কথা। কিন্তু গ্রাহক সংখ্যা কমিয়ে দেখানোয় আসছে বড়জোর ১০ লক্ষ। “অর্থাৎ ফি বছরে নয় নয় করে সাত কোটি টাকা চোখের সামনে দিয়ে গলে যাচ্ছে!” মন্তব্য করেন এক অর্থ-কর্তা।
উপরন্তু নিজস্ব প্রমোদ-করেও বঞ্চিত হচ্ছে রাজ্য। কেব্ল সংযোগ বাবদ টেলিভিশনপিছু মাসে ১০ টাকা প্রমোদ-কর রাজ্য সরকারের প্রাপ্য। এর ভিত্তিতে ৩৪ লক্ষ টেলিভিশনের জন্য বছরে প্রায় ৪১ কোটি টাকা রাজ্য কোষাগারে আসার কথা। সেখানে চেয়ে-চিন্তে আদায় ১৫-১৭ লক্ষের বেশি দাঁড়াচ্ছে না। মানে, চোখ বুজে ৪০ কোটি গুনাগার!
অর্থাৎ পরিষেবা করের অংশ ও প্রমোদ-কর মিলিয়ে কেব্ল টেলিভিশনে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বার্ষিক খেসারতের অঙ্কটা কম করে ৪৭ কোটি টাকা। প্রচুর গ্রাহকের একাধিক টেলিভিশন সেটে কেব্ল কানেকশন আছে ধরলে অঙ্কটা স্বচ্ছন্দে ৫০ কোটি ছাড়িয়ে ফেলবে বলে সরকারি মহলই মনে করছে। এ শুধু কলকাতা মেট্রো এলাকার হিসেব। সরকারি কর্তাদের একাংশের দাবি, ছুতমার্গ ছেড়ে কেন্দ্রীয় নির্দেশ মেনে অন্তত মেট্রো এলাকায় কেব্লে ডিজিট্যাল সম্প্রচার চালু করলে এই খেসারত দিতে হতো না। কারণ, সেট টপ বক্সের প্রযুক্তির সুবাদে গ্রাহকের সংখ্যা কমিয়ে দেখানোর কোনও সুযোগ থাকত না। সরকারের ঘরেও ন্যায্য রাজস্ব জমা পড়ত।
হিসেবটা অবশ্য নগরোন্নয়ন মন্ত্রীও জানেন। কিন্তু সেট টপ নিয়ে এখনই এগোতে তাঁরা রাজি নন। “তবে কলকাতার অনেক জায়গায় তো পুরো ডিজিট্যাল সম্প্রচার হচ্ছে শুনছি।” বলেন ফিরহাদ হাকিম।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.