পুস্তক পরিচয় ৩...
দ্বিচারিতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে
দিনের শেষে সবই যেন সংখ্যা! দিন, মাস, বছরে সে সংখ্যা শুধু পাল্টে পাল্টে যায়। ক্রিকেটের স্কোরবোর্ডের মতো জানানো হতে থাকে, এ বছরে রাজনৈতিক সংঘর্ষে মৃত্যুর সংখ্যা এত, গত বছর ছিল অত, তার আগের বছর... তারও আগের বছর...।
পশ্চিমবঙ্গে ফের রাজনৈতিক হিংসার বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে গভীর অনিশ্চয়তা ও অবিশ্বাস। আর সেই পরিপ্রেক্ষিতেই একটি বই বহু পুরনো কথা মনে পড়িয়ে দিল। দুই মানবাধিকার কর্মী ও সমাজ-বিশ্লেষক সুজাত ভদ্র ও পূর্ণেন্দু মণ্ডলের পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক হত্যা/১৯৭৭-২০১০/ একটি সমীক্ষা (ক্যাম্প, ২৫০.০০) একটি অনালোচিত প্রান্তে আলো ফেলল। সমীক্ষার সময়কাল বলে দিচ্ছে, এই গোটা সময়টায় এ রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল বামফ্রন্ট সরকার। এই ৩৩ বছরে সব ক’টি রাজনৈতিক দলের বহু কর্মী-সমর্থকের মৃত্যু হয়েছে। যেমন, সিপিএমের দৈনিক মুখপত্র ‘গণশক্তি’ পত্রিকার হিসাব অনুযায়ী ১৯৭৭-এ বামফ্রন্ট সরকার গঠনের পর থেকে ২০১০-এর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সংঘর্ষে মোট ২৭৪৯ জন পার্টিকর্মী, নেতা ও সদস্য-সমর্থকের মৃত্যু হয়েছে।
কিন্তু এখানে আলোচ্য বইটির তাত্‌পর্য কোথায়?
তাত্‌পর্য ঠিক এখানেই যে, তথ্যানুসন্ধানের সময় এই দুই গবেষক পরিসংখ্যান থেকে ব্যক্তিমানুষকে বার করে আনার চেষ্টা করেছেন। যতটা সম্ভব তথ্যনিষ্ঠ থেকে ওই সময়কালের ইতিহাসকে ধরার প্রয়াস চালিয়েছেন। ভবিষ্যতের সমাজ গবেষকরা এখানে তালিকাভুক্ত মানুষদের সামাজিক অবস্থানেরও হদিশ পাবেন। এই বইয়ের পরিসংখ্যান বলছে, প্রত্যেক দলেরই অসংখ্য দরিদ্র সদস্য-সমর্থক মারা গিয়েছেন। কেউ চাষি, কেউ কারখানার শ্রমিক, কেউ চা বাগানের শ্রমিক এক কথায় সমাজের প্রান্তিক মানুষজন। বিভিন্ন দলের মুখপত্র, সংবাদপত্র, মানবাধিকার সংগঠনের রিপোর্ট, এমনকী, তথ্য জানার অধিকার আইনে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে এই তালিকা। পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক সংঘর্ষে নিহতদের নিয়ে এমন বই বিরল।
গত কয়েক বছরে মাওবাদী হিংসার কথাই ফলাও করে প্রচার হয়েছে বটে। কিন্তু গ্রন্থকারদ্বয় বলছেন, ‘মাওবাদীদের ‘হিংসা’ পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে রাজনৈতিক খুনের অধ্যায়ের সূচনা করেনি, কেবল সংযোজন করেছে মাত্র।’ তাঁরা বলছেন, ‘সব সংসদীয় দল প্রশাসন ও পুলিশকে সাধ্যমতো ও সুযোগমতো ব্যবহার করে, অস্ত্র মজুত করে গুন্ডাবাহিনী, ঘাতকবাহিনী, হার্মাদবাহিনী, ঝটিকাবাহিনী, ভৈরববাহিনী গড়ে তোলে...। বিরোধী দলও ক্ষমতাসীন হওয়ার পরে রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন নামিয়ে আনে...। সমীক্ষা এই দ্বিচারিতাকে স্পষ্ট করার চেষ্টা করেছে।’


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.