|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ২... |
|
যথার্থই নব-ভারতের অন্যতম স্রষ্টা |
স্বামী বিবেকানন্দকে নিয়ে বেরিয়েছে আর্যপত্র-র (সম্পা: মানস চক্রবর্তী) প্রথম সংখ্যা। তাতে প্রকাশিত ১৮৯৩-এর শিকাগো-বক্তৃতায় স্বামীজি বলছেন: ‘যদি কেহ এরূপ স্বপ্ন দেখেন যে, অন্যান্য ধর্ম লোপ পাইবে এবং তাঁহার ধর্মই টিকিয়া থাকিবে, তবে তিনি বাস্তবিকই কৃপার পাত্র; তাঁহার জন্য আমি আন্তরিক দুঃখিত, তাঁহাকে আমি স্পষ্টভাবে বলিয়া দিতেছি, তাঁহার ন্যায় লোকেদের বাধাপ্রদান সত্ত্বেও শীঘ্রই প্রত্যেক ধর্মের পতাকার উপর লিখিত হইবে— ‘বিবাদ নয়, সহায়তা; বিনাশ নয়, পরস্পরের ভাবগ্রহণ; মতবিরোধ নয়, সমন্বয় ও শান্তি।’ নানান দৃষ্টিকোণে দেখা হয়েছে বিবেকানন্দকে। যেমন রবীন্দ্রনাথ, বিদ্যাসাগর, শ্রীঅরবিন্দ প্রমুখ সমকালীন ব্যক্তিত্বের সঙ্গে তাঁর তুলনামূলক আলোচনা। ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত, ই এম এস নাম্বুদ্রিপাদ, বিনয় চৌধুরী, হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের মতো মার্কসবাদীরাই বা কী চোখে দেখতেন তাঁকে, তারও একটা হদিশ পাওয়া যাবে এঁদের লেখা থেকে। আবার ‘নানা রং-এর স্বামীজি’ বিভাগে বিবেকানন্দের সংগীত-ভাবনা, সাংবাদিকতার সঙ্গে আছে তাঁর রসবোধেরও উল্লেখ তারাপদ রায়ের কলমে: ‘‘... কাশী-বৃন্দাবনের দেবতারাও, বিশেষ করে দেবতার পূজারিরা, বিবেকানন্দের কঠোর শ্লেষ ও কটাক্ষের বিষয়। বিবেকানন্দের একটি রচনা থেকে... ‘ঘণ্টার ওপরে চামর চড়ানো বা ভাতের থালা সামনে ধরে দশ মিনিট বসব কি আধঘণ্টা বসব, এ বিচারের নাম ধর্ম নয়, ওর নাম পাগলা গারদ। এই ঠাকুর কাপড় ছাড়ছেন, তো এই ঠাকুর ভাত খাচ্ছেন, তো এই ঠাকুর আঁটকুড়ির ব্যাটাদের গুষ্টির পিণ্ডি করছেন... পাগলা গারদ দেশময়।’” আছে দুর্লভ অনেক ছবি। |
|
এ পর্যন্ত পাওয়া স্বামীজির প্রথম আলোকচিত্র (১৮৮৫-’৮৬)।
ডান দিকে, প্রয়াণের ক’দিন আগে তোলা শেষ ছবি। আর্যপত্র থেকে। |
‘যতদিন ভারতের কোটি কোটি লোক দারিদ্র্য ও অজ্ঞানান্ধকারে ডুবে রয়েছে, ততদিন তাদের পয়সায় শিক্ষিত অথচ যারা তাদের দিকে চেয়েও দেখছে না, এরূপ প্রত্যেক ব্যক্তিকে আমি দেশদ্রোহী বলে মনে করি।’ বিবেকানন্দের সাম্যবাদী চিন্তার এই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে অমৃতলোক-এর (সম্পা: সমীরণ মজুমদার) ‘সার্ধশততমজন্মবর্ষে বিবেকানন্দ অনুশীলন’ সংখ্যার অতিথি সম্পাদক সুধাংশুশেখর মুখোপাধ্যায় তাঁর ‘তত্ত্বজ্ঞের এ নহে বারতা’য় স্বামীজি সম্পর্কে লিখছেন ‘তিনি সাধারণ মানুষের অন্তরের সঙ্গে আপন অন্তর মিলিয়েছেন।’ তাঁর সমগ্রের এক আভাস তুলে ধরার চেষ্টা এ-পত্রে, ফলত বিবেকানন্দের ব্যক্তিপরিচয়, শিক্ষাভাবনা, দর্শনচিন্তা, ধর্মবোধ, নারীমনন, মানবধর্ম, বিশ্ববোধ, সাহিত্যকৃতি ইত্যাদি নানান বিষয় নিয়ে রচনাদি। নির্মলকুমার বসু যেমন তাঁর ‘স্বামী বিবেকানন্দ ও সমাজ-সংস্কার’-এ লিখছেন: ‘স্বামী বিবেকানন্দ যথার্থই নব-ভারত স্রষ্টাদের অন্যতম।’ সঙ্গে স্বামীজির বংশলতিকা এবং তাঁর কর্ম ও জীবনপঞ্জি। আর তাঁর বাল্যজীবন নিয়ে অনুজ মহেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা: ‘নরেন্দ্রনাথ অল্পসময়ের মধ্যে বই পড়িতে পারিত এবং মুখস্থ করিয়া ফেলিত।... তাহার মেধা অদ্ভুত ছিল।’
স্বামীজির মন বা মননটুকুও তো নতুন করে জানা দরকার, অন্তত তাঁর জন্মের দেড়শো বছর পূর্তিতে তাঁকে নিয়ে নতুন করে চর্চার জন্যেই। সে কাজে সহায়তা করবে সত্যম রায়চৌধুরী সম্পাদিত ও সংকলিত টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপ-এর উদ্যোগে প্রকাশিত বিবেকানন্দ ফর ইউ (দীপ প্রকাশন, ৭০০.০০)। এতে পাওয়া যাবে বিবেকানন্দের চিঠিপত্র, রচনা ও বক্তৃতাদি, কথোপকথন। অদ্বৈতাশ্রমের অধ্যক্ষ স্বামী বোধসারানন্দ মুখবন্ধে জানিয়েছেন ‘উই বিলিভ দিস বুক উইল ইন্ট্রোডিউস স্বামীজিস থটস টু মেনি মোর পিপল।’ শুরুতে নিবেদিতার ভূমিকা, আর তারও আগে আছে স্বামীজির অমোঘ বাণী: ‘গিভ মি ফিউ মেন অ্যান্ড উইমেন হু আর পিওর অ্যান্ড সেল্ফলেস অ্যান্ড আই শ্যাল শেক দ্য ওয়ার্ল্ড।’
শমিত কর সম্পাদিত সোশ্যাল থট অব স্বামী বিবেকানন্দ (ডায়রেক্টেড ইনিশিয়েটিভ, ২৫০.০০) আধুনিক ভারতবর্ষের সমাজ-সংস্কারক হিসেবে বিবেকানন্দের মূল্যায়ন পৌঁছে দেবে পাঠকের কাছে। সম্পাদক-সহ একাধিক প্রাবন্ধিকের একগুচ্ছ রচনা নিয়ে এ-বই। মুখবন্ধে দ্য রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচার-এর সম্পাদক স্বামী সর্বভূতানন্দ জানিয়েছেন ‘দ্য প্রপোজড চ্যাপটারস অব দ্য বুক আর এক্সট্রিমলি রেলেভেন্ট অ্যান্ড ইউজফুল ফর টুডেজ ইউথ...।’ |
|
|
|
|
|