শহরের গ্রন্থাগার পরিচালন সমিতির ক্ষমতা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সিপিএম পেয়েছে। তার জের কাটতে না কাটতেই ফের সেই মানবাজারেই কলেজের ছাত্র সংসদও কার্যত বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় এসএফআই দখলে রাখতে চলেছে। মানবাজার ব্লকের এই মানভূম কলেজের ১৮টি আসনের ১২টিতেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এসএফআই জিততে চলেছে। এই কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও স্বনিযুক্তি মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো। তিনি অবশ্য এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
জেলার অন্যান্য কলেজের মতো মানভূম কলেজেও ১৮ জানুয়ারি ছাত্র সংসদের নির্বাচন হওয়ার কথা। মঙ্গলবার ও বুধবার মনোনয়ন পত্র তোলা ও জমা দেওয়া হয়। শুক্রবার ছিল মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। এ দিন বেলা তিনটায় নাম প্রত্যাহারের সময় সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পর কলেজ কর্তৃপক্ষ মনোনয়ন পত্র স্কুটিনি করে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে। তখনই জানা যায়, ১৮টি আসনের মধ্যে টিএমসিপি-র ১৬ জন প্রার্থীর নাম বাদ পড়েছে। তারা মাত্র দু’টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। আবার ছাত্র পরিষদ চারটি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। এসএফআই ১৮টি আসনেই প্রার্থী দিয়েছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, সামগ্রিক ভাবে ১৮টি আসনের মধ্যে ১২টি আসনে শুধু একটি প্যানেলের প্রার্থী রয়েছে। তাই ওই ১২টি আসনে নির্বাচন হচ্ছে না। বাকি ৬টি আসনের চারটিতে এসএফআই-র সঙ্গে ছাত্র পরিষদ ও দু’টিতে টিএমসিপি-র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। ওই ছ’টি আসনের ফল যাই হোক, সিংহ ভাগ আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিততে চলায় এসএফআই-র এই কলেজের ছাত্র সংসদ দখলে রাখার পথ মসৃন হল।
এসএফআই-র মানবাজার জোনাল কমিটির সম্পাদক কালিচরণ রজক বলেন, “ওই ১২টি আসনে আমরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেছি। ফলে এ বারও ছাত্র সংসদ আমাদের হাতেই রইল।” মানবাজার বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলই জিতেছে। তার পরেও মানভূম কলেজে কেন ওই ঘটনা ঘটল তা নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। টিএমসিপি-র মানবাজার ব্লক সভাপতি অপূর্ব সিংহ ওই সংগঠনের তরফে ওই কলেজের দায়িত্বে রয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, “মনোনয়ন পত্র পূরণ করার সময় কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আমাদের বিভ্রান্ত করেছেন। সে কারণেই আমাদের ১৬টি মনোনয়ন পত্র বাতিল হয়ে গেল।” তিনি জানান, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করবেন। ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে, তৃণমূলের অন্দরেও। তৃণমূলের মানবাজার ব্লক সভাপতি দেবেন্দ্রনাথ মাহাতো বলেন, “কী ভাবে এতগুলো মনোনয়ন পত্র বাতিল করা হল, বুঝতে পারছি না। এর বিরুদ্ধে আমরা আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছি।”
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আশুতোষ বিশ্বাস অবশ্য দাবি করেছেন, “মনোনয়ন পত্র স্ক্রুটিনি করতে গিয়ে দেখা গিয়েছে আবেদনকারীর রোল নম্বরের জায়গায় প্রস্তাবকের রোল নম্বর লেখা রয়েছে। এমনই নানা ভুল তথ্য থাকায় কিছু মনোনয়ন পত্রগুলি বাতিল করা হয়েছে। বিভ্রান্ত করার অভিযোগ ভিত্তিহীন।” ইতিপূর্বে মানবাজার টাউন লাইব্রেরির পরিচালন সমিতির নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী দিতে না পারায় গ্রন্থাগার পরিচালন সমিতির দখল সিপিএমের হাতে চলে যায়। তার পরেই মানবাজার গার্লস হাইস্কুলের নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েও তৃণমূল সিপিএমের কাছে সব ক’টি আসনে পরাজিত হন। বিধায়ক তৃণমূলের সন্ধ্যারানি টুডুও মন্তব্য করতে চাননি। |