মুরারী স্মৃতি সম্মিলনীর আয়োজনে প্রথম পর্বে প্রতিষ্ঠাতা পণ্ডিত মনোজ মোহন মিশ্র-র জন্মতিথি উদযাপন ও পদ্মভূষণ বুদ্ধদেব দাশগুপ্তকে সম্মাননা জ্ঞাপন এবং নির্মলা মিশ্রের স্মৃতিচারণা, চন্দনা চক্রবর্তীর ও কৌশিকী দেশিকানের উপস্থিত দু’ চার কথা অনুষ্ঠানের প্রারম্ভিক ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি পায়। ভারতী মিশ্রের পরিচালনায় সম্মিলনীর ছাত্রছাত্রীদের উদ্বোধনী সঙ্গীত যথেষ্ট আনন্দদায়ক হয়। দ্বিতীয়ার্ধে বুদ্ধদেবের শিষ্য দেবাশিস ভট্টাচার্যের সরোদে রাগ কামোদ পরিবেশিত হয়। আলাপ সাবলীল। বোলবাণী এবং কিছু তেহাই গতটিকে উল্লেখ্য করে। পরবর্তী নিবেদন গোরখকল্যাণের ত্রিতাল বন্দিশ সুমধুর হয়। অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের তবলা সহযোগিতা এক কথায় অনবদ্য। অজয় চক্রবর্তীর সুতালিমের উদাহরণ বজ্রেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের পরিবেশনার ছত্রে ছত্রে। গেয়েছিলেন রাগেশ্রী খেয়াল। একটি ঠুমরি গেয়ে অনুষ্ঠান শেষ করেন।
|
সম্প্রতি ভারতীয় জাদুঘরের উদ্যোগে পরিবেশিত হল ‘রূপে রূপান্তরে বন্দেমাতরম’। রচনা ও নির্মাণে দেবজিত্ বন্দ্যোপাধায়। অনুষ্ঠানে শোনা গেল আনন্দমঠ উপন্যাসে বঙ্কিমের মাতৃবন্দনা কালান্তরে কেমন করে রূপ নিল দেশবন্দনার। কণ্ঠে গীত হল বঙ্কিমের সঙ্গীতগুরু যদুনাথ ভট্টাচার্য অর্থে যদুভট্ট-কৃত ‘মল্লার’ রাগে নিবদ্ধ প্রথম সুর। ১৮৮২ তে বই আকারে উপন্যাস প্রকাশের পরের বছর মঞ্চায়িত হয় আনন্দমঠ। সে মঞ্চায়নের প্রেক্ষিতে এ গানে মিলল তিলককামোদের ছোঁওয়া। গাইলেন দেবজিত্। ১৮৮৫-র বালক পত্রিকায় প্রকাশিত হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কন্যা প্রতিভাসুন্দরীর স্বরলিপি ঠাঁই পেল ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিবেদনে। ১৮৯৬তে রবীন্দ্রনাথের সুরে সে গানের রাগ নির্দেশিত হল ‘দেশ’। বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে সে গানে লাগল দেশাত্মবোধের নতুন জিগির। কালীপ্রসন্ন কাব্যবিশারদের ‘বন্দেমাতরম সম্প্রদায়’ হল তার প্রবর্তক। দেবজিতের কণ্ঠে শোনা গেল সে গানের নতুন দ্যোতনা। সে গান একদা প্রার্থনা সঙ্গীত ছিল নিবেদিতার বিদ্যালয়ে। সে দিন থেকে শুরু করে স্বাধীনতার প্রাক্কালে সুভাষচন্দ্রের অনুরোধে তিমিরবরণকৃত ‘দুর্গা’ রাগে নিবদ্ধ এ গানের প্রকাশ ঘটল এ দিনও। এ ভাবেই একে একে বন্দেমাতরমের নানান রূপের সঙ্গে সে গানের ভাবনায় ভিন্ন কাব্য গড়ে ওঠে রবীন্দ্রনাথ-দ্বিজেন্দ্রলালের রচনায়। শ্রোতারা মুগ্ধ দেবজিতের গান শুনে। কথায়-ভাষ্যে বহু অজানা তথ্যের সন্ধান দিলেন গৌতমমোহন চক্রবর্তী।
|
সম্প্রতি কলামন্দিরে একটি মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানে নির্মাল্য রায় এবং মনোজ মুরলী নায়ারের একটি সুন্দর অনুষ্ঠান শোনা গেল। নির্মাল্য রাগসঙ্গীতে অসাধারণ নৈপুণ্যের পরিচয় দিলেন। আর মনোজ নির্বাচিত কিছু রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনিয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করলেন। সবচেয়ে বড় কথা নির্মাল্যর রাগসঙ্গীত এবং মনোজের রবীন্দ্রগান দুইয়ের মেলবন্ধনে অনুষ্ঠানটি একটা অন্য মাত্রা পেয়েছিল। রবীন্দ্রনাথের গানে রাগসঙ্গীতের ব্যবহার কত মাধুর্য আনে তা শোনা গেল মনোজের কণ্ঠে কতগুলো মনোজ্ঞ বন্দিশ ও রাগ অলঙ্কারে। সেখানে নির্মাল্যর পরিপূর্ণতা ছিল অটুট। ভায়োলিনে বিশ্বজিৎ ও তবলাতে প্রদ্যুৎ শিল্পীদের সহযোগিতা করেন। পরবর্তীতে রবীন্দ্রনাথের গান শোনালেন অজন্তা সিংহ। শুরু থেকে শেষ প্রতিটি মুহূর্তই খুব উপভোগ্য হয়েছিল। |