শীতের দাপটে জবুথবু কর্মচঞ্চল বিড়ি শিল্পাঞ্চল। কার্যত থমকে গিয়েছে সেখানের জীবনযাত্রা।
শীতের জন্য গত ৪ দিনে এক ধাক্কায় বিড়ি উৎপাদন কমেছে প্রায় ৩৫ শতাংশ। বিড়ি মালিক জাকির হোসেন বলেন, “ঠান্ডার দাপটে শ্রমিকেরা কাহিল। ফলে বিড়ি উৎপাদনের পরিমাণও ক্রমশ কমছে। কারখানাগুলিতেও শ্রমিকেরা ঠিক মতো কাজ করতে পারছে না। সন্ধ্যের পর ঘরবন্দি হয়ে পড়ায় বিড়ি বাঁধার কাজও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।” তিনি বলেন, “প্রতিবছরই শীতে বিড়ির উৎপাদন কিছুটা কমে। কিন্তু এ বার কনকনে ঠান্ডা সঙ্গে হিমেল হাওয়া। যার ফলে ইতিমধ্যেই উৎপাদন ৩০-৩৫ শতাংশ কমেছে। আরও কয়েকটা দিন এমন ঠান্ডা থাকলে উৎপাদন অর্ধেকে নেমে আসবে।
বিড়ি মালিক মুন্সি রেজাউল আলির কথায়, “এক লক্ষের কোটা রয়েছে আমার। কিন্তু গত ৩-৪ দিনে ৬০-৬২ হাজারের বেশি বিড়ি পাওয়া যায়নি। উৎপাদন কমে গেলে অন্য সময় শ্রমিকেরা অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা কাজ করেন। শীতে সেই সময়টা কমে গিয়েছে। ফলে উৎপাদন কমছে। কমছে কমিশনও। পরে বাড়তি সময় খেটে সেই ঘাটতি পুষিয়ে দেওয়াও যাচ্ছে না। আর এত ঠান্ডায় শ্রমিকদেরও চাপ দেওয়া যাচ্ছে না।”
ধুলিয়ান, অরঙ্গাবাদ-সহ আশপাশের এলাকা মিলিয়ে প্রায় ৮১টি ছোট-বড় বিড়ি কারখানা রয়েছে। দৈনিক প্রায় ৬০ কোটি বিড়ি উৎপাদন হয়। প্রায় ৬ লক্ষ শ্রমিক এই শিল্পে জড়িত। এখান থেকেই বিড়ি যায় দিল্লি, ওড়িশা, কর্নাটক, অন্ধ্রপ্রদেশে। উৎপাদন কমে যাওয়ায় আগামী সপ্তাহ থেকে সেখানে বিড়ির যোগানও কমবে। ধুলিয়ান এবং অরঙ্গাবাদ-সহ বিড়ি শিল্পাঞ্চলের প্রায় সবটাই গঙ্গা, পদ্মার তীরবর্তী হওয়ায় ঠান্ডার প্রকোপ বরাবরই একটু বেশি থাকে। এ বার যেন গত ছ’বছরের রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে।
অরঙ্গাবাদের সাগিনা বিবি ও জুবেরা খাতুন মা ও মেয়ে মিলে দৈনিক প্রায় দেড় হাজার বিড়ি বাঁধেন। ৪ জনের সংসারে এই একটিই আয়ের পথ। গত ৩-৪ দিনে ঠান্ডা বেড়ে যাওয়ায় দু’দিন ধরে কাজ করেও দেড় হাজার বিড়ি বাঁধা যায়নি। সাগিনা বলেন, “তিন বেলা বিড়ি বাঁধার কাজ করে সবাই। কিন্তু শীতে সকালে এবং সন্ধ্যায় উঠোনে বসাই যাচ্ছে না। একটা মাত্র ঘর। তার মধ্যে কাজ করব কী করে! তাই অন্ধকার হলেই কাজ বন্ধ। ফলে সারা দিনে আটশোর বেশি বিড়ি বাঁধা যাচ্ছে না।”
গঙ্গার পাড়েই বাড়ি জাকির শেখের। বাড়ির ১১ জন সদস্যের মধ্যে এখন ৫ জন বিড়ি বাঁধে। বিড়ির সংখ্যা দৈনিক আড়াই হাজার থেকে কমে দেড় হাজারে ঠেকেছে। জাকির বলেন, “এত ঠান্ডা গত ৫-৬ বছরের মধ্যে বোধহয় পড়েনি। তার উপর গঙ্গার পাড়ে বাড়ি। এর মধ্যে উঠোনে বসে কাজ করা যাচ্ছে না। দু’টো মাত্র ঘর। বিড়ি বাঁধার মতো জায়গা কোথায়!” সিটুর জেলা সভাপতি আবুল হাসনাৎ খান বলেন, “এ বার জাকিয়ে ঠান্ডা পড়েছে। দিন ছোট। কাজ করার সময়ও কম। ফলে উৎপাদন কমছে। এমনটা আর কিছু দিন চললে উৎপাদন আরও কমবে।” আইএনটিইউসি-র রাজ্য বিড়ি শ্রমিক সংগঠনের সম্পাদক বাদশার আলি বলেন, “শীতের জন্য কাজ করতে পারছেন না শ্রমিকেরা। এখনও মাস দুই ঠান্ডা থাকবে। কিন্তু এমন চরম ঠান্ডা থাকলে উৎপাদন অর্ধেকে দাঁড়াবে।” |