বাবার সঙ্গে লড়াই করে শেষতক পড়াশোনার অধিকার আদায় করে নিল সে। আঞ্জুরা খাতুন। বয়স বারো।
বিড়ি বাঁধার যৎসামান্য আয় ফুরিয়ে যেত চাল-নুন কেনার গার্হস্থ্য অনুশাসনে। তার উপর মা-মরা ভাই-বোনদের দেখভাল, সংসারের আরও পাঁচটা খরচ, প্রায় সবই সামাল দিতে হত এক রত্তি আঞ্জুরাকে। এ সবের মধ্যে দম ফেলা বলতে, সন্ধেয় স্কুলছুটদের নিয়ে স্বেচ্ছাসেবী এক সংগঠনের স্কুলে পড়াশোনা। সেই স্কুলেই পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত নিখরচায় পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিল সে। কিন্তু বাধ সাধল ষষ্ট শ্রেণিতে উঠে। স্কুলের শিক্ষকেরা জানিয়ে দিয়েছিলেন, এ বার তো বাবা ভর্তি হতে ১৭০ টাকা লাগবে।
আঞ্জুরা অদম্য। পড়াশোনা সে ছাড়বে না। অথচ মদ্যপ বাবা পড়ার কথা বললেই খড়্গ হস্ত। তারউপর টাকা চাইতে গেলে তো হাঁসুয়া নিয়ে তেড়ে আসেন! হ্যাঁ, মিথ্যে নয়, পড়শিরাও জানিয়েছেন মা-মরা মেয়েটি পড়া চালিয়ে যাওয়ার কথা বলতেই একাধিকবার তার বাবার হাতে মার খেয়েছে। কখনও বা দেখা গিয়েছে হাঁসুয়া নিয়ে টলমল পায়ে মেয়েকে তাড়াও করছেন। শুধু তাই নয়, দিন কয়েক আগে এমনই এক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বাড়ি ফিরে মেয়ের জমানো একশো টাকাও কেড়ে নিয়েছিলেন তিনি। সুতির চন্দ্রপাড়ার আঞ্জুরা কাঁদতে কাঁদতে হাজির হয়েছিল এক সহপাঠীর বাড়িতে। রাতটা সেখানে কাটিয়ে শুক্রবার সকালেই সে হাজির হয়েছিল ব্লক অফিসে। তারপর বিডিও-র কাছে খুলে বলে সব ঘটনা। |
কাজ হয় তাতেই। বিডিও মেয়েটির পড়ার ইচ্ছে দেখে অবাক। আঞ্জুরার তখনও ফুঁপিয়ে চলেছে। নালিশ তার, “বাবা বলে তুই পড়াশুনো করলে সংসার দেখবে কে? আমার টাকাও কেড়ে নিয়েছে। বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে রাত কাটিয়েই বিডিও-র কাছে এসেছি। আমি পড়তে চাই।” তার বান্ধবী সাবানা ইয়াসমিন বলেন, “আঞ্জুরার মুখে ঘটনা শুনে চমকে উঠি। তারপর কয়েকজনকে নিয়ে আমরা যাই এক শিক্ষকের কাছে। তিনি সব শুনে আমাদের নিয়ে যান সুতি-২ ব্লকের বিডিও-র কাছে।” বিডিও প্রবীর বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য ব্যাপারটা এড়িয়ে যাননি। তিনি বলেন, “মেয়েটির কাছ থেকে সব কথা শুনে তার বাড়িতে পুলিশ পাঠানো হয়। আমিও গিয়ে মেয়েটির বাবাকে বোঝাই। তাতে অন্তত ও বাবার শুভবুদ্ধি হয়েছে।” প্রশাসনের উদ্যোগেই শেষ পর্যন্ত আঞ্জুরা ভর্তির হচ্ছে অরঙ্গাবাদ গার্লস স্কুলে।” দেরিতে হলেও মেয়েটির বাবা বুঝেছেন তাঁর দোষ। তিনিও বলেন, “বড় ভুল হয়ে গিয়েছে। মেয়ের পড়াতে আর বাধা দেব না আমি।” কিন্তু কত দিন? সেটাই দেখার। |