পেরিয়ে গিয়েছে দীর্ঘ ছ’মাস। কিন্তু, ঘোষণা রয়ে গিয়েছে ঘোষণাতেই!
বেহালার বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালের পরিকাঠামো উন্নয়ন দূর অস্ৎ, কমে গিয়েছে চিকিৎসক ও কর্মীর সংখ্যা।
গত বছরের অগস্টে এই হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির সঙ্গে বৈঠকে বসেন শিল্পমন্ত্রী তথা হাসপাতালের পরিচালন পর্ষদের চেয়ারম্যান পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি সেখানে পরিকাঠামো উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেন। বলা হয়, নতুন কয়েকটি ইউনিটও খোলা হবে। হাসপাতাল সুপারকে দ্রুত একটি বাজেট তৈরি করে স্বাস্থ্যভবনে পাঠাতে নির্দেশ দেন তিনি। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, এর পরেও কিছুই হয়নি।
রাজ্যের স্টেট জেনারেল হাসপাতালগুলির পরিকাঠামো উন্নয়নের কথা পূর্বতন বাম সরকারের আমল থেকেই বলা হচ্ছে। এই সরকারের আমলেও একই কথা বলা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা এবং হাসপাতাল সূত্রে খবর, মূলত দক্ষিণ শহরতলির মানুষ চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালের উপরে নির্ভর করেন। একে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু বারে বারে অভিযোগ ওঠে, রোগ জটিল হলেই এখান থেকে কলকাতার অন্যান্য সরকারি হাসপাতালে রোগীদের ‘রেফার’ করে দেওয়া হয়। কারণ, পরিকাঠামোর অভাব। তাই পরিকাঠামো উন্নয়নের উপরে জোর দেওয়া হয়। কিন্তু হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, চিকিৎসক এবং অন্যান্য কর্মীর সংখ্যা না বাড়িয়ে নতুন ইউনিট খুলেও লাভ হবে না। |
ওই বৈঠকের পরে তিন জন চিকিৎসক এবং পাঁচ জন সাধারণ কর্মী অবসর নিয়েছেন। কিন্তু নতুন চিকিৎসক বা কর্মী নিয়োগ করা হয়নি। ফলে অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। যদিও হাসপাতালের সুপার পরমার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “নতুন ইউনিট খুলতে এবং পরিকাঠামোর উন্নয়নের জন্য বাজেট তৈরি করে স্বাস্থ্যভবনে পাঠানো হয়েছে। এখন অনুমতির অপেক্ষা।” হাসপাতাল সূত্রে খবর, শয্যাসংখ্যা আগের মতোই ২৮৬ রয়ে গিয়েছে। অভিযোগ, আরএমও পোস্ট নেই। নেই কোনও হাউস স্টাফ। অ্যাকাউন্টস বিভাগেও কর্মী নেই।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংখ্যাও প্রয়োজনের তুলনায় কম। স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞ আছেন তিন জন। আগে ছিলেন চার জন। সাধারণ চিকিৎসক এক জন। এ ছাড়া এক জন চক্ষু চিকিৎসক, এক জন করে ইএনটি এবং অস্থিবিশেষজ্ঞ আছেন। অস্থিবিশেষজ্ঞকে অবসরের পরে পুনর্বহাল করা হয়েছে। অভিযোগ, অসুস্থতার জন্য তিনি নিয়মিত হাসপাতালে আসতে পারেন না। |
হাসপাতাল সূত্রে খবর, রোগীর চাপে দু’জন শল্য চিকিৎসককে সপ্তাহের ছ’দিন অস্ত্রোপচার করতে হয়। চক্ষু বিশেষজ্ঞ সপ্তাহে তিন দিন বহির্বিভাগে রোগী দেখেন। বাকি তিন দিনের দু’দিন ছানি এবং এক দিন ছোটখাটো অস্ত্রোপচার করেন। অস্ত্রোপচারের আগে তাঁকেই অ্যানাস্থেসিয়া করতে হয়। কোনও অপ্টোমেট্রিস্টস না থাকায় চশমার পাওয়ার ঠিক আছে কি না, তা-ও তাঁকেই দেখতে হয়। আগে এক সহকারী চিকিৎসক থাকলেও আট মাস আগে তিনি বদলি হয়ে গিয়েছেন। তিন জন অ্যানাস্থেটিস্টের মধ্যে দু’জন রয়েছেন। কিন্তু, রোগীর চাপে তাঁরাও ফুরসত পান না।
এ দিকে অগস্ট মাসে যে নতুন ইউনিটগুলি চালু করার কথা বলা হয়েছিল, সেগুলি হল সদ্যোজাত শিশুদের জন্য এসএনএসইউ ইউনিট, ডায়ালেসিস ইউনিট, সিটি স্ক্যানের ইনভেস্টিগেশন সেন্টার এবং ব্লাড ব্যাঙ্ক। এর মধ্যে সিটি স্ক্যান ইনভেস্টিগেশন সেন্টারটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে করা হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। এ ছাড়া, হাসপাতালের ভবন তিন তলা থেকে বাড়িয়ে চার তলা করার কথাও ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ঘোষণা এখনও ঘোষণাই রয়ে গিয়েছে। |
রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেন, “নতুন ইউনিটগুলি খোলার জন্য যন্ত্রপাতি কেনার দরকার। সেই যন্ত্রপাতির জন্য দরপত্র (টেন্ডার) ডাকা হয়েছে।” চিকিৎসক কিংবা কর্মী নিয়োগের ব্যাপারে তিনি জানান, যে যে ইউনিট খোলা হবে, সেই বিভাগের জন্য পদ সৃষ্টি করা হবে। তার জন্য অর্থমন্ত্রকের কাছে তথ্য পাঠানো হয়েছে। অনুমতি পেলেই নিয়োগ হবে।
বিদ্যাসাগর হাসপাতালে সংস্কারের কাজ পূর্ত দফতরের সমস্যায় কিছু দিন আটকে ছিল মেনে নিয়েই রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, কাজ ফের শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, “বিদ্যাসাগর হাসপাতালের উন্নয়নে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। পূর্ত দফতরের সঙ্গে কথা হয়েছে। পাঁচিল সরিয়ে পাশের ব্রাহ্ম সমাজ রোড সম্প্রসারণ করা হবে। এমারজেন্সির কাজও শুরু হবে দ্রুত। সরশুনা উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য বিধায়ক তহবিল থেকে ১০ লক্ষ টাকা দিয়েছি। এই অঞ্চলের মানুষ যাতে ভাল পরিষেবা পান, সে দিকে অগ্রাধিকার
দেওয়া হবে।”
|