দক্ষিণ কলকাতা
বডি বিল্ডিং
সাফল্যের আড়ালে
স্পনসর নেই। চাকরি নেই। নেই সরকারি সহযোগিতাও। কিন্তু সাফল্য আছে। এ ছবি এ রাজ্যের বডি বিল্ডিংয়ের। অভিযোগ, তাই সাড়া জাগিয়েও হারিয়ে যাচ্ছেন অনেকেই। ওয়েস্টবেঙ্গল বডি বিল্ডিং অ্যান্ড ফিজিক স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন-এর এ বারের সিনিয়র রাজ্য প্রতিযোগিতায়ও একই কথা শোনা গেল।
সাউথ কলকাতা ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড ফিজিক স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত এ বারের রাজ্য বডি বিল্ডিং ও মেয়েদের ফিটনেস প্রতিযোগিতায় কলকাতা-সহ নানা জেলার প্রায় ৩০০ প্রতিযোগী অংশ নেন। পশ্চিম সাহাপুর কলোনির মাঠে আলো ঝলমলে মঞ্চে সঙ্গীতের তালে তালে প্রতিযোগীরা দেহসৌষ্ঠব আর ফিটনেস প্রদর্শন করেন। মিস্টার বেঙ্গল পুরস্কার নিয়ে প্রসেনজিৎ সাউ-এর আক্ষেপ: “৮০ কেজি বিভাগে নামি। প্রতি দিন দু’কেজি মাংস, ২০টি ডিম, শাক-সব্জি, ফল মিলিয়ে ৭০০-৮০০ টাকা খরচ। চাকরি না-পেলে চালিয়ে যেতে পারব না। এটাই হয়তো আমার শেষ লড়াই।”
এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসবেন ৬০ কেজি বিভাগে চ্যাম্পিয়ন আন্দুলের দিব্যেন্দু ভৌমিক। তাঁর কথায়: “খুব খরচ। এখনও বাবাই খরচ দেন। এর পরে কী হবে জানি না।” খরচ সামলাতে না পেরে ৬৫ কেজি বিভাগে গত বারের রাজ্য চ্যাম্পিয়ন বেলঘরিয়ার সুজয় রায় এ বার প্রতিযোগিতায় নামেননি। মঞ্চের পাশে দাঁড়িয়ে বললেন, “একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করতাম। অনুশীলনের জন্য তাও ছেড়ে দিই। বাবা নেই। সরকারি চাকুরে মা সাহায্য করতেন। মাসে কুড়ি-পঁচিশ হাজার টাকা খরচ। খরচ চালাতে পারিনি বলে নামিনি।”
একই অবস্থা আসানসোলের সোমনাথ পালের। ৬০ কেজিতে গত বারের রাজ্য চ্যাম্পিয়ন সোমনাথ বললেন, “বাবা অবসর নিয়েছেন। গত মরসুমে নিজেকে তৈরি করতে লাখখানেক খরচ হয়েছে। আর পারছি না। পঞ্জাব, মহারাষ্ট্র, দিল্লি, অন্ধ্রপ্রদেশের মতো রাজ্যে বডি বিল্ডিং করলে সরকারি চাকরি পাওয়া যায়। এ রাজ্যে কিছুই পাই না।” আয়োজক সংস্থার সচিব সঞ্জীব পাল জানালেন, এই প্রতিযোগিতা থেকে আগামী মার্চে কেরলের জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য বাংলা দল নির্বাচন করা হবে।
মেয়েদের পাঁচ ফুট এবং পাঁচ ফুট ঊর্ধ্ব এই দুই বিভাগে লড়াই হল। পাঁচ ফুট বিভাগে হুগলির সোনিয়া মিত্র আর পাঁচ ফুট ঊর্ধ্ব বিভাগে শ্যামনগরের অমৃতা মণ্ডল জিতলেন। মেয়েদের ফিটনেস কোচ নতুন চক্রবর্তী বললেন, “দুঃস্থ পরিবার থেকে অনেক মেয়ে প্রশিক্ষণ নিতে আসে। এদের একটু সরকারি সাহায্য দরকার।” উপস্থিত ছিলেন আবাসন ও যুবকল্যাণমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, স্থানীয় কাউন্সিলর জুঁই বিশ্বাস, বিশ্বশ্রী মনোহর আইচ প্রমুখ।

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.