দক্ষিণ কলকাতা: গড়িয়া, সোনারপুর
গড়িয়া স্টেশন
দখলনামা
ট্রেন ঢুকলে প্ল্যাটফর্মে আর পা ফেলার জায়গা থাকে না। ধাক্কাধাক্কি লেগেই থাকে। কারণ, পুরো প্ল্যাটফর্মটাই হকারদের দখলে। এই দখলদারির জন্য অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা করতে হয় যাত্রীদের। গড়িয়া স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম নিয়ে অনেক দিন ধরেই এই অভিযোগ নিত্যযাত্রীদের। তাঁদের বক্তব্য: দিনের পর দিন পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলে সমস্যার কথা জানিয়েও লাভ হয়নি। উল্টে বিষয়টি নিয়ে রেল এবং রেলপুলিশের চাপানউতোর চলছেই।
নিত্যযাত্রীদের এই অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায় গড়িয়া স্টেশনে পা রাখলেই। প্ল্যাটফর্ম চত্বর জুড়ে রয়েছে একাধিক দোকান। হকারদের দখলদারির জন্য অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে ট্রেন ঢুকলে যাত্রীদের ওঠানামা করার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা থাকে না। অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরে এই রকম অবহেলার মধ্যে পড়ে রয়েছে গড়িয়া স্টেশন। অথচ প্রতি দিন এই স্টেশন দিয়ে কলকাতা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকায় কয়েক লক্ষ মানুষ যাতায়াত করেন।
গড়িয়া স্টেশন দিয়ে নিয়মিত শিয়ালদহে যাতায়াত করেন স্থানীয় বাসিন্দা কমল নস্কর। তাঁর কথায়: “গড়িয়া স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম জুড়ে দখলদারির জন্য ট্রেন ঢুকলে আর চলার জায়গা থকে না। দিনের পর দিন এই ভাবেই ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছি। পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে তাতে যে কোনও দিন ব্যস্ত সময়ে একটা বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।” বাসিন্দারা জানান, বহু বার গড়িয়া স্টেশনকে দখলদারমুক্ত করার কথা শোনা গিয়েছে। কিন্তু কিছুই হয়নি। বাসিন্দাদের একাংশের মতে, প্ল্যাটফর্মে দখলদারির পিছনে রাজনৈতিক মদত রয়েছে। তাই চেষ্টা করেও দখলমুক্ত করা যাচ্ছে না।
গড়িয়া স্টেশনটি রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার এক ও দুই নম্বর ওয়ার্ড সংলগ্ন এলাকার অর্ন্তগত। এক নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং পুরসভার প্রাক্তন উপ-পুরপ্রধান সিপিআইয়ের তড়িৎ চক্রবর্তী বলেন, “ওই এলাকার সমস্ত দখলদার সরিয়ে নেওয়ার জন্য একটি অত্যাধুনিক মার্কেট গড়ার পরিকল্পনা করেছিলাম। বর্তমান বোর্ডের কী পরিকল্পনা তা আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়।” সোনারপুর (উত্তর) বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক এবং পুরসভার বর্তমান উপ-পুরপ্রধান ফিরদৌসী বেগম বলেন, ‘‘প্ল্যাটফর্মের সমস্যা রেলের, আমাদের নয়। আমরা পুর-এলাকার বিভিন্ন অঞ্চল দখলমুক্ত করার জন্য একাধিক পরিকল্পনা করেছি। শীঘ্রই সে সব পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করার জন্য কাজ শুরু হবে।”
কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে গড়িয়ার মতো একটি ব্যস্ত স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে দখলদারি থাকে কী করে? পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সমীর গোস্বামী বলেন, “এই সমস্যা দেখার দায়িত্ব আমাদের নয়। এটি দেখবে রেলপুলিশ।” কিন্তু, শিয়ালদহের রেলপুলিশ সুপার উৎপল নস্কর বলেন, “গড়িয়া প্ল্যাটফর্মের এই সমস্যা সমাধানের সিদ্ধান্ত রেলকেই নিতে হবে। দখলদারেরা রেলের সম্পত্তিই দখল করে রেখেছে। সেই সমস্যার সমাধানে রেল আমাদের সাহায্য চাইলে আমরা সাহায্য করতে রাজি আছি।”

ছবি: সুব্রত রায়




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.