|
|
|
|
হঠাৎ অন্ধকার স্টেডিয়াম |
সৌরভের টিম ইন্ডিয়া হতে পারল না ধোনির ভারত |
প্রিয়দর্শিনী রক্ষিত • রাজকোট |
মঞ্চ তৈরিই ছিল। নতুনত্বের গন্ধে মোড়া ঝাঁ-চকচকে স্টেডিয়াম। বিপুল জনসমর্থন। ৩২৫ তাড়া করে জেতার উত্তেজনা। গ্যালারি জুড়ে শুধু তিনটে রংগেরুয়া, সাদা, সবুজ। কিন্তু দিনের শেষে টিম ইন্ডিয়ার প্রাপ্তির খাতায় কী লেখা থাকল? না, ‘এ বিগ ফ্যাট জিরো’!
পাকিস্তানের সঙ্গে ওয়ান ডে সিরিজে হারতে হয়েছিল। আর নতুন বছরের নতুন সিরিজেও কুক-বাহিনীর বিরুদ্ধে শুরু হল সেই হার দিয়েই। যে হার কাকতালীয় ভাবে রাজকোটে ফিরিয়ে আনল ২০০২-র লর্ডসের স্মৃতি, আর অনন্ত আক্ষেপ।
১৩ জুলাই ২০০২ন্যাটওয়েস্ট ফাইনালের সেই ঐতিহাসিক ম্যাচে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের টিম ইন্ডিয়া-র সামনে টার্গেট ছিল ৩২৫। প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড। রান তাড়া করতে নেমে দুর্দান্ত খেলছিলেন যুবরাজ সিংহ।
১১ জানুয়ারি ২০১৩-র রাজকোটে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ভারতের সামনেও লক্ষ্য দাঁড়াল সেই ৩২৫। মাঝের ওভারগুলোয় দলকে প্রায় একা কাঁধে টানলেন সেই যুবরাজ। প্রতিপক্ষও এক, ইংল্যান্ড। তার উপর দেশের মাঠে ম্যাচ, উইকেট যেন ব্যাটসম্যানের স্বপ্নপূরণের রূপরেখা ভেবে তৈরি।
তবু হল না।
কেন? কারণ, গম্ভীর বলুন বা রাহানে, যুবরাজ বা রায়নাসবাই ভাল শুরু করেও ইনিংস টানতে পারলেন না। চার-ছয় এল যথেচ্ছ। কিন্তু যখন লম্বা জুটি দরকার, তখনই নিয়ম করে ইংরেজদের উইকেট উপহার দিয়ে এল ভারত। ধোনি যখন নামলেন, তখন ১৫ ওভারে চাই ১২৮। পারলে তিনিই পারতেন। গ্যালারির হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দেওয়া চারটে ছক্কা মারলেনও ধোনি (২৫ বলে ৩২)। কিন্তু ক্ষণিকের স্ফুলিঙ্গ নয়, আজ দরকার ছিল অবিরাম অগ্নিবর্ষণ। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যা পাওয়া গিয়েছিল চেন্নাইয়ে। সমালোচকদের মুখ বন্ধ করার দুর্দান্ত সুযোগটা মাঠেই ফেলে এলেন ধোনি। ডার্নবাখকে ছয় মারতে গিয়ে লং অফের হাতে তালুবন্দি হলেন। ম্যাচেরও ওখানেই অপমৃত্যু। |
|
টিভি ক্যামেরার আলোয় কুকের সাংবাদিক বৈঠক। ছবি: টুইটার। |
ধোনি যখন ফিরলেন, ৩৪ বলে তখন চাই আরও ৫৫। টি-টোয়েন্টির বাজারে হামেশাই উঠছে। কিন্তু এখানে আর তুলবেন কে? পড়ে ছিলেন শুধু রবীন্দ্র জাডেজা। কিন্তু তাঁর ন্যাটওয়েস্টের মহম্মদ কাইফ হতে ঢের দেরি।
একে হার, তার উপর হারের পিছু পিছু রাশি-রাশি সমস্যা। ওপেনিং জুটি আর লম্বা পার্টনারশিপের ব্যবধান কমল না এই ম্যাচেও। আবার ভাল শুরু এবং মাঝরাস্তায় হোঁচট। ট্রেডওয়েলের দুই ওভার প্যাভিলিয়নে ফেরাল গম্ভীর-রাহানেকে। তিন নম্বরে নেমে দেশের সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিমান ব্যাটসম্যানের আজ অবদান ২২ বলে ১৫!
বিপর্যয়ের গুরুভার ভারত অধিনায়ক এ দিন নিজেই নিলেন। বললেন, “আমার আরও কয়েক ওভার থাকা উচিত ছিল।” এ-ও বললেন, তাঁর আউটটাই ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। কিন্তু বোলিংয়ের বহুমুখী ফাটলের মুখে ‘আমিই দোষী’ গোছের কথাবার্তা কতটা আর পাঁচিল হয়ে দাঁড়াচ্ছে? এই পিচে রানের উৎসব হওয়ার কথা ছিল ঠিক। ইংরেজরা যথেচ্ছ পিটিয়েওছেন। কিন্তু ডেথ-এ যে ভারতীয় বোলিং এ ভাবে মুখ থুবড়ে পড়বে, ভাবা যায়নি। ৪৮ ওভারে যখন ইংল্যান্ড ২৮৭, ওয়াসিম আক্রম কমেন্ট্রি বক্স থেকে নেমে পরিচিত এক জনকে বললেন, “তিনশো পাঁচ বা দশ হবে।” পাক কিংবদন্তিকে ভুল প্রমাণ করার দায়িত্ব নিল ভারতীয় বোলিং। ৪৯তম ওভারে ইশান্ত দিলেন কুড়ি। আর শেষ ওভারে ভুবনেশ্বরকে উড়িয়ে দিয়ে সমিত পটেলরা তুললেন ১৮।
শুধু তাই নয়, অশ্বিন যে ঠিক কী চাইলেন, বোঝা গেল না। উইকেট তো পানইনি। এমন দশা হল, ক্যাপ্টেন দশ ওভারও তাঁকে দিতে পারলেন না। যুবরাজ সিংহ বিকল্প হতে পারতেন, কিন্তু ধোনি তাঁকে ডাকলে তো? উল্টে এলেন বিরাট কোহলি! আরও আছে। কেউ জানে না কোন যুক্তিতে আজ সামি আহমেদ বাদ। কেউ জানে না, ঠিক কেন ডেথ ওভারে আজ এলেন না দিন্দা। ডেথ ওভার স্পেশ্যালিস্ট হিসেবে রাতারাতি নাম করে ফেলার পরেও।
ভুল হল। ধোনি জানেন। কিন্তু শ্রীনিবাসনের রাজত্বে কে আর তাঁর কাছে জবাবদিহি চাইবে? খুব বেশি হলে প্রাক্তনরা মুন্ডুপাত করবেন। তাতে থোড়াই কেয়ার! একুশে আইন যেমন চলছে, চলবে। |
বিরক্তিতে বেরিয়ে গেলেন ধোনি
প্রিয়দর্শিনী রক্ষিত • রাজকোট |
বাইশ গজে মুখ থুবড়ে পড়ল মহেন্দ্র সিংহ ধোনির টিম ইন্ডিয়া। আর একই দিনে মাঠের বাইরে মুখ পুড়ল ভারতীয় বোর্ডের।
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে পাঁচ ম্যাচের ওয়ান ডে সিরিজ নিয়ে ভারতীয় বোর্ডের বৃহত্তর রূপরেখায় ছিল দেশের ছোট ছোট কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নিয়ে যাওয়া। প্রথম ম্যাচেই তার যা নমুনা পাওয়া গেল, তাতে ভারতীয় বোর্ডকে একশোয় শূন্য দেওয়াটাও বড্ড কম। নিরাপত্তা তো বটেই, প্রশ্ন উঠছে সৌরাষ্ট্র ক্রিকেট সংস্থার প্রশাসনিক পরিকাঠামো নিয়েও।
ম্যাচ শেষে প্রথামতো সাংবাদিক সম্মেলন করতে এসেছিলেন ভারত অধিনায়ক। তার মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই কি না মাঠ জুড়ে বাজতে লাগল ডিজে-র কানফাটানো বাজনা! কয়েক সেকেন্ড পরে মাঠে হাজির মিডিয়াকে আরও অবাক করে দিয়ে গোটা মাঠ ডুবে গেল অন্ধকারে! তখন ধোনি কোনও একটা প্রশ্নের উত্তরের মাঝপথে। আশেপাশে নিরাপত্তারক্ষী কেউ নেই। রয়েছেন শুধু টিম ইন্ডিয়ার মিডিয়া ম্যানেজার সতীশ। যে টিম ইন্ডিয়ার জন্য সর্বোচ্চ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বহাল থাকে, সেই টিমের অধিনায়ক কি না অন্ধকার ঘরে এক ঝাঁক অচেনা লোকের সঙ্গে আটক! আর উৎসবের বহর দেখে কে বলবে এই মাঠেই একটু আগে জিততে জিততে হেরে গিয়েছে হোম টিম।
অবস্থা স্বাভাবিক হয় কি না দেখার জন্য মিনিটখানেক অন্ধকারেই বসে থাকলেন ধোনি। কিন্তু ততক্ষণে মাঠে শুরু হয়ে গিয়েছে লেজার শো। ফাটছে একের পর এক আতসবাজি। আলো জ্বলার কোনও সম্ভাবনাই নেই দেখে সতীশ বেরিয়ে গেলেন ধোনিকে নিয়ে। ইংল্যান্ড অধিনায়ক অ্যালিস্টার কুক তখন সাংবাদিক সম্মেলনের জন্য কনফারেন্স রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে। সেখানেই সারতে হল প্রশ্নোত্তর পর্ব। মোবাইল ফোনের ক্ষীণ আলোয়!
অব্যবস্থার নানান নিদর্শন বুধবার থেকেই মজুত ছিল সৌরাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে। যার জেরে ম্যাচের আগের দিনও সাংবাদিক সম্মেলনের মাঝপথে বেরিয়ে গিয়েছিলেন কুক। নতুন স্টেডিয়ামে উদ্বোধনী ম্যাচ আয়োজনে প্রশাসনিক অনভিজ্ঞতার কথা মাথায় রাখলে তা-ও কিছুটা ছাড় দেওয়া যায়। কিন্তু শুক্রবার রাতের এই তামাশা আইপিএলের দেশেও অভূতপূর্ব। |
|
|
ইংল্যান্ড |
কুক ক রাহানে বো রায়না ৭৫
বেল রান আউট ৮৫
পিটারসেন ক কোহলি বো দিন্দা ৪৪
মর্গ্যান ক ও বো দিন্দা ৪১
কেইসওয়েটার ন:আ: ৪৪
পটেল ন:আ: ৪৪
অতিরিক্ত ১২
মোট ৫০ ওভারে ৩২৫-৪
পতন: ১৫৮, ১৭২, ২৪৮, ২৫৫।
বোলিং: ভুবনেশ্বর ৭-০-৫২-০, ইশান্ত ১০-২-৮৬-০, দিন্দা ৮-০-৫৩-২,
অশ্বিন ৯-০-৬১-০, জাডেজা ১০-০-৪৬-০, রায়না ৫-০-১৮-১, কোহলি ১-০-৯-০।
|
ভারত |
রাহানে ক ডার্নবাখ বো ট্রেডওয়েল ৪৭
গম্ভীর ক বেল বো ট্রেডওয়েল ৫২
কোহলি ক কেইসওয়েটার বো ব্রেসনান ১৫
যুবরাজ ক ডার্নবাখ বো ট্রেডওয়েল ৬১
রায়না ক ও বো ট্রেডওয়েল ৫০
ধোনি ক রুট বো ডার্নবাখ ৩২
জাডেজা বো ডার্নবাখ ৭
অশ্বিন ক কেইসওয়েটার বো ফিন ১৩
ভুবনেশ্বর ন:আ: ২০
দিন্দা বো ব্রেসনান ৩
ইশান্ত ন:আ: ৭
অতিরিক্ত ৯
মোট ৫০ ওভারে ৩১৬-৯
পতন: ৯৬, ১০২, ১৩৮, ১৯৮, ২৪৩, ২৭১, ২৭৩, ২৯৭, ৩০৭।
বোলিং: ফিন ১০-০-৬৩-১, ডার্নবাখ ১০-০-৬৯-২, ব্রেসনান ৮-০-৬৭-২,
ট্রেডওয়েল ১০-০-৪৪-৪, রুট ৯-০-৫১-০, পটেল ৩-০-২১-০। |
|
|
|
|
|
|
|