কী রকম একটা অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে ভারতীয় ডেভিস কাপ টিম ঘোষিত হওয়ার খবরে। একবার মনে হচ্ছে এগারোই জানুয়ারি, ২০১৩ ভারতীয় টেনিসের চরম দুঃখের দিন। হয়তো বা কালো দিন হিসেবেই দেশের টেনিস ভাবীকালের কাছে লেখা থাকবে। আবার পরক্ষণে মনে হচ্ছে, শুক্রবারের দিনটা ভারতীয় টেনিসের পুনঃপ্রতিষ্ঠার দিন হিসেবে হয়তো ভবিষ্যতে বিবেচিত হবে চিরকাল।
একজন প্রাক্তন টেনিস প্লেয়ার হিসেবে আমি সব সময় খেলোয়াড়দের পক্ষে। সে জন্য সোমদেবদের দাবিগুলোর বেশিরভাগই আমি সমর্থন করি। কিন্তু পাশাপাশি সেই দাবিগুলো আদায়ের জন্য ওদের দেশের জাতীয় টেনিস দলকে উপেক্ষা করার ব্যাপারটায় আমার সমর্থন নেই। দেশের আগে কেউ নয়। প্লেয়ার, কর্তা, সংস্থা কেউ না। সে জন্য আমার মতে সোমদেবদের যেমন ডেভিস কাপ বয়কট করা উচিত হয়নি, তেমনই এআইটিএ-র এই মুহূর্তে উচিত ছিল, দল নির্বাচন কমিটিতে প্লেয়ারদের একজন প্রতিনিধি রাখা। আসলে আমাদের দেশে টেনিস প্লেয়ারদের কোনও সংস্থা না থাকায় প্লেয়ার বনাম অ্যাসোসিয়েশনের ঝগড়াটা সেই অলিম্পিকের আগে থেকে অ্যাদ্দিন লেগে রয়েছে। ক্ষুব্ধ প্লেয়াররা জোট বাঁধলেও একটা ছাতার তলায় নেই। আর সে কারণে এআইটিএ-ও হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে পারছে। |
সোমদেব-য়ুকি-সনম-বিষ্ণুদের না পাওয়ায় কোরিয়া টাইয়ের জন্য যে দল গড়া হয়েছে তাতে শ্রীরাম বালাজি আর জীবন নেদুনচেজিয়ানকে না দেখে রীতিমতো অবাক আমি। জীবন ভারতের বর্তমান জাতীয় হার্ডকোর্ট চ্যাম্পিয়ন। এবং দিল্লিতে হার্ডকোর্টেই খেলা। শ্রীরামের সিঙ্গলস র্যাঙ্কিং য়ুকি-সনম সিংহের পরেই। বিষ্ণু বর্ধন-সাকেত মিনানিদেরও আগে। কিন্তু পরে এআইটিএ-তে খোঁজখবর নিয়ে যা জানতে পারলাম তাতে আমার আরও চক্ষু চরকগাছ! শ্রীরাম-জীবনও মহেশদের দলে নাম লিখিয়েছে। এআইটিএ-র ‘বিদ্রোহী’ তকমা পাওয়া মহেশদের দল অলিম্পিকের সময়ের দুই থেকে বেড়ে এই মুহূর্তে এগারো জনের। এর পরেও যদি এআইটিএ নিজেদের ইগো নিয়ে বসে থাকে। ভাবে খেলোয়াড়রা কর্তাদের ইচ্ছেয় বসবে-উঠবে, তা হলে মহা ভুল করবে। এমন দিন হয়তো এর পরে আসবে যখন ডেভিস কাপের জন্য চার জন প্লেয়ারের দলও গড়া যাবে না। কেউ হয়তো আর পড়ে থাকবে না এআইটিএ-র কথা শুনে খেলার জন্য। কারণ এটা খুব কঠিন সত্য যে, বছরভর এটিপি, আইটিএফের মতো আন্তর্জাতিক পেশাদার সার্কিটে ভারতের কোনও টেনিস খেলোয়াড়ের খেলা বন্ধ করার ছিটেফোঁটা ক্ষমতা নেই এআইটিএ-র।
লিয়েন্ডারের জন্য এই পরিস্থিতিতে এক দিকে যেমন গর্ব হচ্ছে, আরেক দিকে তেমন খারাপও লাগছে। গর্ব হচ্ছে, দেশের জন্য ওর চূড়ান্ত দায়বদ্ধতা দেখে। আর আশঙ্কা হচ্ছে, এআইটিএ ওকে না চাপ দিয়ে আসন্ন ডেভিস কাপে সিঙ্গলসেও নামতে বাধ্য করে। সেক্ষেত্রে ওকে উনচল্লিশ বছর বয়সে টানা তিন দিন ‘বেস্ট অব ফাইভ সেট’ ম্যাচ খেলার ভয়ঙ্কর চাপ নিতে হবে। তাও অস্ট্রেলিয়ান ওপেন শেষ হওয়ার চার দিন পরেই। লিয়েন্ডারও এর পর বেঁকে বসলে কী হবে ভারতীয় টেনিসের, ভাবলে শিউরে উঠছি! এআইটিএ-র শিবরাত্রির সলতে বলতে এখন তো ও-ই! তিনটে নতুন মুখ নিয়ে ভারতীয় টেনিসের পুনরুজ্জীবন ঘটাতে পারলে লিয়েন্ডারই পারবে। কোরিয়া ম্যাচের ভবিষ্যদ্বাণীও তাই করছি না।
|
বিদ্রোহী জোটের বিবৃতি |
...দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে আসন্ন ডেভিস কাপ টাইয়ের জন্য বাছা ভারতীয় দল সম্পর্কে জানলাম কিছুক্ষণ আগে। আমাদের সঙ্গে আলোচনার রাস্তায় না গিয়ে যে এআইটিএ এমন এক গুরুত্বপূর্ণ টাইয়ে দেশের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য সম্পুর্ণ অনভিজ্ঞদের নিয়ে একটা দল গড়ল, তা দেখে আমরা হতাশ।
এআইটিএ-র কাছে আমরা যে সমস্ত প্রস্তাব রেখেছিলাম, সেগুলো যে যথেষ্ট পরিষ্কার ও ভারতীয় টেনিসের উন্নতির কথা ভেবেই, এই নিয়ে আমরা আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। কিন্তু যেভাবে এআইটিএ আমাদের প্রস্তাবগুলোকে ‘অন্যায় ও অযৌক্তিক’ আখ্যা দিয়েছে, তাতে আমরা বিস্মিত। এআইটিএ-র এই মনোভাব আমাদের অবস্থানকেই সুনিশ্চিত করল এবং দুর্ভাগ্যবশত আমরা ফের বলতে বাধ্য হচ্ছি, যতক্ষণ না সর্বভারতীয় টেনিস সংস্থা আমাদের ওপর যথেষ্ট আস্থা রেখে আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসার উদ্যোগ না নিচ্ছে ততক্ষণ আমরা দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে রাজি নই। নির্বাচিত ভারতীয় ডেভিস কাপ দলের প্রতি শুভেচ্ছা রইল।
মহেশ ভূপতি, রোহন বোপান্না, সোমদেব দেববর্মন, য়ুকি ভামব্রি, বিষ্ণু বর্ধন, সনম সিংহ, দ্বিবিজ শরণ, সাকেত মিনেনি, শ্রীরাম বালাজি, জীবন নেদুনচেজিয়ান ও বিজয় সুন্দর প্রসান্থ।
|
এক থেকে দুই ছিলাম। এ বার দুই থেকে এগারো। এআইটিএ বরং এর পর সুনামির অপেক্ষায় থাকুক! আমরা পরিবর্তন আনবই।
মহেশ ভূপতি |
|