স্বামীজির বাড়ি ভগ্নস্তূপ, উদাসীন সরকার
চারপাশে চেপে ধরেছে জনবসতির ফাঁস। এক পাশে ইটের খাটো পাঁচিল। অন্য তিন দিক বাঁশের বেড়ায় ঘেরা। ভিতরে পা দিলেই পা ডুবে যায় ঝোপ-ঝাড়-আবর্জনায়। এক সময়ের ঘরগুলো এখন ইটের পাঁজা বই কিছু নয়। অলৌকিক মাহাত্ম্যে কেবল অটুট রান্নাঘরটি। তার বাইরের দেওয়ালেই চুনকাম করেছে কেউ। শুকনো ডালপালার মধ্যে সবুজ বলতে তিনটি কলাগাছ। ১১২ বছর আগে অসুস্থ স্বামী বিবেকানন্দ শিলঙের গৌরারঙ্গ লজের যে অংশে এসে কয়েকদিন বাস করেছিলেন তা এখন ভগ্নস্তূপ। ঘনিষ্ঠদের লেখা চিঠিতে স্বামীজি জানান, মা যেমন অসুস্থ শিশুকে কোলে নিয়ে কষ্টের সময় আরাম দেন, শিলং-এর পরিবেশ, আবহাওয়া তাঁকে তেমনই আরাম দিয়েছে।
আগামী কাল, শনিবার স্বামী বিবেকানন্দের সার্ধশত জন্মবার্ষিকী। সেই উপলক্ষে দেশের নানা স্থানের সঙ্গে শিলং, চেরাপুঞ্জির রামকৃষ্ণ মিশনেও চলছে উৎসবের আয়োজন। কিন্তু এই শিলঙে যে বাড়িটিতে ছিলেন তিনি, সেই বাড়িটি রক্ষণাবেক্ষণে রাজ্য সরকার কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি। ফলে ঘরগুলি নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। স্মৃতি বলতে সম্বল একটি ফলক। এই বাড়িতে তাঁর যে ছবি তোলা হয়েছিল, সেটাই এখনও পর্যন্ত স্বামীজির শেষ ফটোগ্রাফ হিসেবে গণ্য হয় (অন্য মতে, মৃত্যু শয্যায় তাঁর তোলা হয়েছিল তাঁর শেষ ছবি)।

এমনই হালে পড়ে রয়েছে স্বামী বিবেকানন্দের স্মৃতিবিজড়িত সেই বাড়ি।—নিজস্ব চিত্র
ঢাকা হয়ে কামাখ্যা এসেছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন মা ভুবনেশ্বরী দেবী। কামাখ্যার যে বাড়িটিতে তিনি ছিলেন, তার বর্তমান মালিক নিরঞ্জন পাণ্ডা সেই দোতলার ঘরটিকে মোটামুটি নিজের চেষ্টায় অবিকল রেখেছেন। তাঁর ব্যবহার করা খাটটিও ভগ্নাবস্থার রাখা আছে বারান্দায়। গুয়াহাটিতে স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ায় তদানীন্তন চিফ কমিশনার স্যার হেনরি কটন বিবেকানন্দকে শিলং পাঠাবার ব্যবস্থা করেন। তিনি বিবেকানন্দরের চিকিৎসার ভার দেন শিলঙের সিভিল সার্জেনকে। শিলং-এ লাবান বাট্টি বাজার এলাকায়, অধুনা বাংলাদেশের সুনামগঞ্জের গৌরারঙ্গের জমিদার, রায়বাহাদুর কৈলাশচন্দ্র দাসের বাড়ি, গৌরারঙ্গ লজের একাংশে বিবেকানন্দের থাকার ব্যবস্থা হয়। প্রথমে কয়েকদিন আরাম পেলেও, পরে হাঁফানি বেড়ে যায় কয়েকগুণ। সঙ্গে বাড়ে বহুমূত্রের প্রকোপ। শরীরে বেড়ে যায় অ্যালবুমিন। তবে সেই অসুস্থ অবস্থাতেও, শিলঙের কুইন্টন হলে, সনাতন হিন্দু ধর্মের উপরে এক সভায় বক্তৃতা দেন তিনি। সেটিই তাঁর শেষ সামাজিক বক্তৃতা। দিন ১৫ শিলঙে কাটিয়ে গুয়াহাটি হয়ে স্বামীজি কলকাতায় ফিরে যান।
১৯৯৩ সালে কুইন্টন মেমোরিয়াল ট্রাস্ট কুইন্টন হলের অধিকার পায়। পরে তা রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনকে হস্তান্তর করা হয়। মিশন সেখানেই নতুন ভবন তৈরি করে। এখন তা বিবেকানন্দ কালচারাল সেন্টার নামেই পরিচিত। কিন্তু যে বাড়িতে তিনি ছিলেন, সেই বাড়ি বার কয়েক হাতবদলের পরে বিতর্কিত ও পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে রয়েছে। ১৯৬৩-৬৪ সালে বিকেকানন্দের জন্ম শতবর্ষে রামকৃষ্ণ মিশন সেখানে একটি ফলক বসায়। এলাকাবাসীরাই সেই ফলকের চারপাশে রং করে রেখেছেন।
রবীন্দ্রনাথের ব্রুকসাইড বাংলোর রক্ষণাবেক্ষণের মতোই, লাবানে বিবেকানন্দ্রের স্মৃতিধন্য বাড়িটির জমি যাতে সরকার অধিগ্রহণ করে, সেখানে যাতে পবিত্র পর্যটন স্থল গড়ে ওঠে, সে জন্য লড়াই চালাচ্ছেন শিলঙের মালবিকা বিশারদ। তিনি জানান, কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব, রামকৃষ্ণ মিশন ও রাজ্যের মুখ্যসচিবকে এ নিয়ে একাধিক চিঠি পাঠিয়েছেন তিনি। কেন্দ্রের তরফে বেলুড় মঠ ও রাজ্য সরকারের কাছে মালবিকার প্রস্তাবের ব্যাপারে মতামত চেয়ে পাঠানো হয়। মালবিকাদেবী বলেন, “বিতর্কিত জমি অধিগ্রহণ নিয়ে বা বিবেকানন্দের স্মৃতি রক্ষায় রাজ্য কোনও ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। এই অবস্থায় রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় বা প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ এগিয়ে না এলে কাজ হবে বলে মনে হয় না।” শিলং রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী অচ্যূতেশানন্দ বলেন, “গত বছর শিলং হেরিটেজ আইন পাশ হয়েছে। আশা করি এ বার বিবেকানন্দের স্মৃতিধন্য বাড়িটি ‘হেরিটেজ’ হিসেবে গণ্য হবে। সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছি, জমিটির জটিলতা কাটিয়ে সরকার তা অধিগ্রহণ করুক। এরপর মিশন বাড়িটি গড়ে তোলা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেবে।”
রাজ্যের কাছে কেন্দ্রের চিঠি বা রামকৃষ্ণ মিশনের আবেদন জমা পড়লেও কাজ এগোচ্ছে না। রাজ্যের সংস্কৃতি সচিব এইচ মারউইন জানিয়েছেন, বিবেকানন্দের বাড়ি সংরক্ষণ বা অধিগ্রহণ বিষয়ে তাঁর স্পষ্ট ধারণা নেই। প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বিধায়ক মানস চৌধুরী বিবেকানন্দের স্মৃতি রক্ষায় সরকারি গড়িমসি নিয়ে বিরক্ত। তিনি বলেন, “বিধানসভা ভোটের আগে কেউ এ নিয়ে মাথাই ঘামাতে রাজি নয়। বাঙালি রাষ্ট্রপতি যদি নিজে আগ্রহ দেখান তবেই কাজ হবে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.