বিপুল ধারবাকি। সে সব না মিটিয়ে উড়তে পারবে না কিংফিশার। শুক্রবার জানিয়ে দিল ডিজিসিএ (ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন)। অথচ বড় মাপের লগ্নি পাওয়ার আশাও ক্ষীণ। ফলে বিজয় মাল্যর মাছরাঙা আদৌ আর আকাশে উড়তে পারবে কি না, এ বার প্রশ্ন উঠে গেল তা নিয়েই।
আর্থিক সঙ্কট থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে গত মাসে যে পরিকল্পনা কিংফিশার জমা দিয়েছিল, ডিজিসিএ (ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন)-এর কাছে তা সন্তোষজনক মনে হয়নি। বাজারে যে সংস্থার দেনা ৭ হাজার কোটি টাকারও বেশি, যে সংস্থার কর্মীরা এখনও গত জুন মাসের বেতনও পাননি, সেই সংস্থা যদি ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য মাত্র ৬৫২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে, তা হলে তারা ওড়ার অনুমতি পাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে বিমান পরিবহণের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
কিংফিশার তাদের পুনরুজ্জীবনের পরিকল্পনায় জানিয়েছিল, ৬৫২ কোটি টাকা ঢেলে এখন ৫টি বড় ও ২টি ছোট বিমান দিয়ে যাত্রী পরিষেবা শুরু করবে। চার মাসের মধ্যে বিমানের সংখ্যা বাড়িয়ে ২১টি করা হবে। কিন্তু, ফোনে দিল্লি থেকে ডিজিসিএ প্রধান অরুণ মিশ্র বলেন, “আগে কর্মীদের বকেয়া সমস্ত বেতন মিটিয়ে দিতে হবে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ, বিভিন্ন তেল-সংস্থা এবং অন্যদের কাছে যত ধার রয়েছে তা-ও মিটিয়ে দিতে হবে। তার পরেই তারা নতুন করে বিমান চালানোর অনুমতি পাবে।” এবং এর জন্য কিংফিশারকে নতুন পরিকল্পনা জমা দিতে বলেছে ডিজিসিএ। |
ডিজিসিএ তথা কেন্দ্রীয় সরকারের শর্ত মানতে হলে কিংফিশারকে এখনই অন্তত ৫ হাজার কোটি টাকা ঢালতে হবে। এত টাকা কোথা থেকে পাবেন সংস্থার কর্ণধার বিজয় মাল্য? এই প্রশ্ন করা হলেই তিনি বলছেন, “অপেক্ষা করুন। আমরা ফিরে আসবই।” কিন্তু তা কী ভাবে সম্ভব হবে, সেটা স্পষ্ট করে বলতে পারছেন না। বিমান পরিবহণের সঙ্গে যুক্ত মহলের ধারণা, বিদেশের কোনও সংস্থা থেকে বড় বিনিয়োগ জোগাড়ের আশায় রয়েছেন মাল্য। কিন্তু, গত তিন মাসে যে সংস্থার একটি বিমানও ওড়েনি, তার জন্য এক সঙ্গে এত টাকা ঢালতে কোনও বিদেশি সংস্থা কতটা আগ্রহী হবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে অনেকেরই।
এর উপরে রয়েছে কর্মীদের তরফে চূড়ান্ত চাপ। এখনও গত জুনের বেতন না পেয়ে অনেকেই চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন। মাল্যর ঘুরে দাঁড়ানোর আশ্বাসে এখনও রয়ে গিয়েছেন প্রায় দু’হাজার কর্মী। তাঁদের বক্তব্য, বার বার আশ্বাস দিয়েও কথা রাখতে পারছেন না মাল্য। সংস্থাকে লক-আউট ঘোষণা করার জন্য এ বার আদালতের দ্বারস্থ হওয়ারও হুমকি দিয়েছেন কর্মীরা। যে কারণে বৃহস্পতিবারই কর্মীদের কাছে ই-মেল পাঠিয়ে ফের আশ্বাস দিয়েছেন মাল্য। তাতে বলা হয়েছে, “ব্যাঙ্কগুলি সদর্থক ভূমিকা নিচ্ছে। ফলে, আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে অসুবিধা হবে না।”
ডিজিসিএ সূত্রের খবর, কিংফিশার নতুন করে সন্তোষজনক কোনও পরিকল্পনা জমা দিলেও তার পরে অনেক ধাপ বাকি থাকবে। ডিজিসিএ তাদের লাইসেন্স সাসপেন্ড করে রেখেছে। সেই সাসপেনশনের নির্দেশ প্রত্যাহার করতে হবে। ২০১২ সালের ৩১ ডিসেম্বরের পর থেকে নতুন করে লাইসেন্স নবীকরণ করতে হবে। যে বিমানগুলি বিভিন্ন বিমানবন্দরে পড়ে রয়েছে, সেগুলি ওড়ার মতো অবস্থায় রয়েছে কি না, সেই সংক্রান্ত ফিটনেস সার্টিফিকেট নিতে হবে। বসে থাকা পাইলট ও বিমানকর্মীদের নতুন করে প্রশিক্ষণ নিতে হবে।
গত তিন মাস ধরে কলকাতা বিমানবন্দরেও কিংফিশারের একটি ছোট এটিআর বিমান পড়ে রয়েছে। যে সংস্থার কাছ থেকে ধার করে এনে তারা এই বিমানটি চালাচ্ছিল, সম্প্রতি সেই সংস্থা সরাসরি ওই বিমানটি ফিরিয়ে নিতে চেয়েছিল। কিন্তু, বেঁকে বসেছেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। বিমানটি কলকাতায় পড়ে থাকার জন্যও কিংফিশারের কাছ থেকে ভাড়া পাবেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। সেই টাকা এবং পুরনো বকেয়া তাঁরা সরাসরি কিংফিশারের কাছ থেকেই নিতে চান। লিজ দেওয়া সংস্থার কোনও টাকা নিতে তাঁরা রাজি নন। |