অস্ত্র ঢুকছে, এ খবর রয়েছে অনেক দিন ধরেই। কোন পথে ঢুকছে, তা-ও মোটামুটি জানা। বিভিন্ন প্রশাসনিক বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনাও হয়েছে। কিন্তু অন্ডাল-পাণ্ডবেশ্বর হয়ে বেআইনি অস্ত্রের আনাগোনা বন্ধ হয়নি। বৃহস্পতিবার আসানসোলে সভামঞ্চ থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুলিশকে সমস্ত বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারের নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, “অন্ডাল থেকে কোনও বেআইনি অস্ত্র যেন ঢুকতে না পারে।”
ওই এলাকায় যে প্রচুর বেআইনি অস্ত্র রয়েছে, তা স্বীকার করেছেন আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার অজয় নন্দ। তিনি বৃহস্পতিবারই বলেন, “অন্ডালের মুকুন্দপুর, খাসকাজোড়া, মধুসূদনপুর ও পরাশকোলে প্রচুর অস্ত্র রয়েছে বলে খবর রয়েছে।” রাজনৈতিক নেতাদের অবশ্য দাবি, শুধু ওই এলাকা নয়, অস্ত্র মজুত রয়েছে গোটা শিল্পাঞ্চল জুড়েই।
কোন পথে অস্ত্র আসে অন্ডাল-পাণ্ডবেশ্বরে? গোয়েন্দা দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মূলত দু’টি পথে অস্ত্র আসে। প্রথমটি হল ঝাড়খণ্ডের নলা থেকে বারাবনি ও জামুড়িয়া হয়ে অন্ডাল। দ্বিতীয়টি দুমকার পলাশথলি থেকে বীরভূমের ভীমগড়া হয়ে অজয় নদ পেরিয়ে পাণ্ডবেশ্বর। গোয়েন্দা-কর্তাদের মতে, নদীর পাড়ে পুলিশের পাহারা না থাকায় এবং কোনও প্রধান রাস্তা না ধরতে হওয়ায় অস্ত্র পাচারকারীরা এই রুট পছন্দ করে। নলা থেকে রুনাকুড়া ঘাট পেরিয়ে বারাবনির গৌরান্ডি, মদনপুর হয়ে জামুড়িয়া, সেখান থেকে অন্ডালে পৌঁছে যাচ্ছে অস্ত্র। এই পথে ছোট ছোট রাস্তা ধরেই গন্তব্যে পৌঁছনো যায়। |
অন্ডাল-পাণ্ডবেশ্বরের খনি এলাকায় ভিন্ রাজ্যের বহু মানুষ রয়েছেন। অস্ত্র পাচারকারীরা তাঁদের ভিড়ে অনায়াসে আত্মগোপন করতে পারে বলেই এই এলাকা বেছে নিয়েছে, দাবি পুলিশের একটি অংশের। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর সাতেক আগে অন্ডাল থানার পিছনেই একটি পাইপগান তৈরির কারখানার হদিস মিলেছিল।
আসানসোলের সিপিএম সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরীর বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী বেআইনি অস্ত্র পাচারের ব্যাপারে অন্ডালের নাম কোন উদ্দেশ্যে নিলেন, জানি না। তবে আমরা চাই, যেখানে যত বেআইনি অস্ত্র আছে পুলিশ উদ্ধার করুক।” বিজেপি-র আসানসোল জেলা সম্পাদক পবন সিংহের দাবি, “শুধু অন্ডাল কেন, গোটা খনি অঞ্চলই অস্ত্রের গুদাম হয়ে রয়েছে।” তাঁর অভিযোগ, “পুলিশ খবর নিলে দেখবে, ঝাড়খণ্ড, পুরুলিয়া হয়েও অস্ত্র ঢুকছে। বছর চারেক আগে সিআইএসএফের একটি অতিথিশালা থেকেই তো অস্ত্র মিলেছিল। সে সব কিন্তু শুধু অন্ডাল হয়ে আসছে না। বরাকর, কুলটি হয়েও অস্ত্র ঢুকছে।” তৃণমূলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সাধারণ সম্পাদক ভি শিবদাসনের আবার দাবি, “জামুড়িয়া, রানিগঞ্জ ও অন্ডালে সিপিএম আগে কোনও ভোটে হারত না। এর পিছনে কারণ ছিল, কয়লা চোরেদের মাধ্যমে বেআইনি অস্ত্র মজুত করে ভোট করা। এখন গোটা বিষয়টি স্পষ্ট হচ্ছে।” পুলিশ কমিশনারের আশ্বাস, অস্ত্র উদ্ধারে লাগাতার অভিযান চলবে। |