কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের যৌন হয়রানি হেনস্থার নালিশ
জমাই পড়ে না
শিলিগুড়ির একটি বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থায় কাজ করতেন হলদিবাড়ির অর্থনীতির স্নাতক পামেলা (প্রকৃত নাম নয়)। ওই অফিসের আঞ্চলিক ম্যানেজার পামেলাকে ‘আপত্তিকর’ এসএমস পাঠাতে শুরু করেন। চেম্বারে ডেকে মোবাইলে অশালীন ছবি দেখতে বাধ্য করতেন। বাধ্য হয়েই চাকরি ছেড়ে দেন পামেলা। বছর তিনেক আগের ঘটনা। জলপাইগুড়ি শহরে থাকতেন কোচবিহারের তপতী (প্রকৃত নাম নয়)। চাকরি করতেন বেসরকারি অফিসে। একদিন ছুটির পরে ম্যানেজার ঘরে ডেকে আপত্তিকর প্রস্তাব দেন। তপতীও চাকরি ছেড়ে দেন। তপতীর কথায়, “খারাপ লোকের জন্য ভাল মাইনের চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলাম।” কিন্তু কাজে ইস্তফা দিয়ে নিজেকে সাজা দিলেন, সেই ম্যানেজারকে শাস্তি দিতে ইচ্ছে করেনি? তপতীর কথায়, “খুব ইচ্ছে ছিল ওকে শাস্তি দিই। কিন্তু থানা-পুলিশ করলে জানাজানি হবে। লোকে কী বলবে, সেই ভেবে এগোইনি। এখন বিয়ের পর কলকাতায় চলে গিয়েছি। এখনও ওই কথা ভাবলে গা গুলিয়ে ওঠে।”
আইন বলছে কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির অভিযোগ জানালেও, পামেলা বা তপতীর নাম গোপন রাখার ব্যবস্থা ছিল। এমন অভিযোগ খতিয়ে দেখতে সব জেলায় জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারকে শীর্ষে রেখে দু’টি কমিটি রয়েছে। অভিযোগ করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে পারিবারিক কাউন্সিলিং কেন্দ্রও রয়েছে। থানায় না গিয়ে সরাসরি এই কমিটিগুলিতে অভিযোগ জানালে নাম গোপন রেখে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা করা যায়। অথচ, পরিসংখ্যান দেখে জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গের সব জেলাতেই প্রায় একই হাল। জলপাইগুড়ির কথাই ধরা যাক। ছয় মাস অন্তর কমিটিগুলির বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও গত এক বছরে বেঠক হয়নি। প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, যথেষ্ট অভিযোগ জমা পড়েনি বলেই বৈঠক হয়নি। পারিবারিক কাউন্সিলিং কেন্দ্রেও কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি।
তবে কী কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি কমেছে?
বাস্তব কিন্তু অন্য কথা বলছে। পারিবারিক কাউন্সিলিং কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মুখপাত্র দীপশ্রী রায় বলছেন, “যত দিন যাচ্ছে, কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির ঘটনা বাড়ছে। কিন্তু যারা এর শিকার, তাঁরা জানাজানির ভয়েই মুখ বুজে দিনের পর দিন সহ্য করে যান। অথচ নাম গোপন রেখে যে মৌখিক ভাবে হলেও অভিযোগ করা যায়, সেই সুযোগের কথা প্রচারেরও কোনও উদ্যোগ নেই।”
রাজ্য মহিলা কমিশনের উত্তরবঙ্গের সদস্য জ্যোৎস্না অগ্রবাল আইনজীবী। তিনি বলেন, “যে’কটি অভিযোগ এসেছে, সব ক্ষেত্রেই নাম গোপন রেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।” তিনি বলেন, “কর্মক্ষেত্রে হয়রানি করলে কী শাস্তি হতে পারে, তা সব দফতরেই বড় বড় হরফে টাঙিয়ে রাখার কথা। অথচ অধিকাংশ অফিসে তা টাঙানো নেই। এটা যাতে সম্ভব হয় তার ব্যবস্থা করতে কমিশন উদ্যোগী হবে।”
এই প্রসঙ্গে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক সঞ্জয় রায় মনে করেন, “কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের হয়রানির ঘটনা অহরহ ঘটে চলেছে। যা ঘটে, তার সিকি ভাগও প্রকাশ্যে আসে না। জানাজানির ভয়েই অনেকে প্রকাশ্যে কিছু বলতে সঙ্কোচ বোধ করেন। অথচ এর জন্য আইন ছিল। যাঁরা বলছেন, কোনও অভিযোগ নেই, তাঁদেরই পাল্টা প্রশ্ন করা উচিত।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.