সহকর্মীরা পাশে, তবু ফিরতে নারাজ ইলিয়াস
চার বছর আগের ৫ জানুয়ারি তাঁকে পাকাপাকি অতীতে পাঠিয়ে দিয়েছিল। কিছু ক্ষোভ, কিছু অভিমানে সেই অতীত থেকে আর বর্তমানে ফিরতে চান না শেখ ইলিয়াস মহম্মদ!
দলের সহকর্মীরা যোগাযোগ রাখেন। বাড়িতে গিয়ে খোঁজখবর নেন। অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে খোঁজ নিতে হাজির হন জেলার নেতারাও। কমিউনিস্ট পার্টির বহিষ্কৃত সদস্যের সঙ্গে যে আচরণ সচরাচর হয় না। তবু নন্দীগ্রামের প্রাক্তন সিপিআই বিধায়ক ইলিয়াস আর দলে ফিরতে রাজি নন। পুরনো ক্ষত তাঁর মোছেনি। বলছেন, “শরীর আমার ভাল নেই। কী হবে আর এ সব করে? এই কোনও ভাবে কেটে যাচ্ছে।”
জমি-আন্দোলনকে ঘিরে উত্তপ্ত নন্দীগ্রামের ইতিহাসে নতুন মাত্রা যোগ করেছিল ইলিয়াস-কাণ্ড। একটি বেসরকারি চ্যানেলের গোপন ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল, বিধায়ক আবাসে বসে শংসাপত্র লিখে দেওয়ার জন্য ঘুষ নিচ্ছেন নন্দীগ্রামের তৎকালীন বিধায়ক। কেলেঙ্কারি সামনে আসতেই বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেন ইলিয়াস। সিপিআইয়ের রাজ্য পরিষদ তদন্ত কমিটি গড়ে প্রথমে তাঁকে সাসপেন্ড করে। পরে বহিষ্কার। সিপিআইয়ের রাজ্য নেতৃত্ব তখন বলেছিলেন, অনুতপ্ত ইলিয়াসের ভাল, সংশোধিত আচরণ দেখলে তাঁর বিষয়ে ফের ভাবনাচিন্তা করা হবে। তাঁর ইস্তফার পরে ২০০৯-এর ৫ জানুয়ারি নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে সিপিআইয়ের হয়ে লড়েছিলেন পরমানন্দ ভারতী। এবং ভূপাল পণ্ডার নন্দীগ্রামে সেই থেকে সিপিআই আর উঠে দাঁড়াতে পারেনি।
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধি সেজে টিভি চ্যানেলের হয়ে ‘স্টিং অপারেশন’ চালানো সাংবাদিক এখন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি। আর কলঙ্কিত ইলিয়াস এখন বন্দি সামসাবাদ সরবেড়িয়ার ছোট্ট বাড়িতে। সিপিএমের কৃষক সভার সমাবেশে জনজোয়ারে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে পৌঁছতে হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কায়দায় বাইক-সওয়ার হয়ে, তৃণমূলের সঙ্গে তৃণমূলের মারপিট হচ্ছে এ সব নিয়ে তাঁর আর মাথাব্যথা নেই। সুযোগ ছিল, দলের শুভার্থীরা চেয়েছিলেন। তা হলে ফিরতে চেয়ে আবেদন করছেন না কেন? ইলিয়াসের জবাব, “শরীর ভাল নেই। রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছি, কিডনিও ভোগাচ্ছে। পেনশনের টাকায় কোনও ভাবে চলে যাচ্ছে। রাজনীতির খবর আর আমি রাখি না।”
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সিপিআইয়ের সম্পাদক নিরঞ্জন ঘড়া বা প্রাক্তন সম্পাদক তথা বিধায়ক কামাখ্যানন্দন দাস মহাপাত্রেরা অবশ্য ইলিয়াসের খবর রাখেন। ইলিয়াসকে দেখতে সম্প্রতি কামাখ্যাবাবু হাসপাতালেও গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা কেউ এই ব্যাপারে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে নারাজ। আর ইলিয়াস বলছেন, “পার্টির কিছু লোকজন যোগাযোগ রাখেন। কেউ কেউ বাড়িতে আসেন। কিন্তু রাজনীতি নিয়ে কথা বলি না।”
সিপিআইয়ের একটি সূত্রের বক্তব্য, ঘুষ-কাণ্ডের পরে সিডি-সহ নানা নথি বিধানসভার তরফ থেকে ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হলেও তার থেকে নির্দিষ্ট করে ইলিয়াসের দোষ প্রমাণিত হয়নি। তবে ওই ঘটনায় দলের ভাবমূর্তি অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। দলের নিয়ম মেনে কন্ট্রোল কমিশনে ইলিয়াস আবেদন করুন, এমনই চেয়েছিলেন তাঁর শুভানুধ্যায়ীরা। সংঘর্ষে উত্তপ্ত নন্দীগ্রামে বিধায়ক ইলিয়াসও দু’বার আক্রান্ত হয়েছিলেন। সহজ-সরল কমরেড হিসাবে এলাকায় তাঁর পরিচিতি ছিলই। তবে দলেরই একাংশ আবার মনে করে, ইলিয়াসকে ফেরাতে গেলে পাছে দুর্নীতির সঙ্গে আপসের তকমা গায়ে সেঁটে বসে! সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, “শাস্তি দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল, ইলিয়াসের ব্যাপারে পরে বিবেচনা করা যেতে পারে। কিন্তু দলের নিয়ম মেনে উনি তো আবেদন করেননি। আবেদন না-করলে কী করা যাবে?”
ঘনিষ্ঠ মহলে ইলিয়াস এখনও বলেন, “আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত হয়েছিল। একটা গরিব লোককে ফাঁসিয়ে মান-ইজ্জত সব কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। রাজনীতি নিয়ে আমি আর মাথা ঘামিয়ে কী করব?” ভগ্নস্বাস্থ্যের প্রাক্তন বিধায়কের জন্য সহকর্মীদের সমবেদনা শুধু শুধু মাঝে মাঝে পৌঁছয় সরবেড়িয়ার সরু রাস্তা দিয়ে!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.