|
|
|
|
একশো দিনের কাজে পিছিয়েই রয়েছে জঙ্গলমহল |
বরুণ দে • দিনীপুর |
একশো দিনের কাজ প্রকল্পে পশ্চিম মেদিনীপুরে পিছিয়ে রয়েছে জঙ্গলমহল এলাকা। জেলা প্রশাসনের পর্যালোচনায় এই তথ্যই সামনে এসেছে সম্প্রতি। জেলার ২৯টি ব্লকের কাজের পর্যালোচনা করে একটি র্যাঙ্কিং তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সেই তালিকার একেবারে নীচের দিকে রয়েছে জঙ্গলমহলের লালগড় (বিনপুর ১) , গোপীবল্লভপুর, সাঁকরাইলের মতো ব্লক। পরিস্থিতি দেখে বিডিওদের চিঠি দিয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্ত। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, চিঠি পাঠানো হয়েছে মহকুমাশাসকদের কাছেও। সঙ্গে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, প্রতি সপ্তাহে যেন কাজের অগ্রগতি সম্পর্কিত রিপোর্ট জেলায় এসে পৌঁছয়।
জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “প্রতিটি জেলাতেই এ ভাবে র্যাঙ্কিং তালিকা তৈরি হয়। প্রকল্পের ক্ষেত্রে জঙ্গলমহল এলাকার পরিস্থিতি একটু খারাপ, এটা ঠিক। তবে কাজে গতি নিয়ে আসার সব রকম চেষ্টা চলছে। এর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে। নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে।”
প্রতিটি ব্লকের গ্রাম পঞ্চায়েতগুলোতে গড়ে কত টাকা খরচ হয়েছে, মানুষকে গড়ে কত দিন কাজ দেওয়া সম্ভব হয়েছে, যাঁরা কাজ পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে কত শতাংশ মহিলাএই সব খতিয়ে দেখেই ওই র্যাঙ্কিং তালিকা তৈরি করা হয়েছে। গত বছরের এপ্রিল থেকে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজের পর্যালোচনা করেই এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তালিকার একেবারে শীর্ষে, অর্থাৎ ১ নম্বরে রয়েছে খড়্গপুর ২ ব্লক। একেবারে নীচে, অর্থাৎ ২৯ নম্বরে রয়েছে গড়বেতা ১ ব্লক। জেলার ২৯টি ব্লকের মধ্যে জঙ্গলমহল এলাকায় রয়েছে ১১টি ব্লক। এর মধ্যে ২৮ নম্বরে রয়েছে লালগড় ব্লক (বিনপুর ১)। ২৬ নম্বরে গোপীবল্লভপুর ২ ব্লক। ২৪ নম্বরে শালবনি। ২৩ নম্বরে গোপীবল্লভপুর - ১। ২০ নম্বরে ঝাড়গ্রাম। ১৫ নম্বরে বেলপাহাড়ি (বিনপুর ২)। ১১ নম্বরে মেদিনীপুর সদর। ১০ নম্বরে জামবনি এবং ৯ নম্বরে রয়েছে গোয়ালতোড় (গড়বেতা ২)। লালগড়ে মানুষ গড়ে কাজ পেয়েছেন ১১ দিন। গোপীবল্লভপুর ২ তে ১৩ দিন।
কেন এই পরিস্থিতি?
প্রশ্নের সদুত্তর নেই জেলা প্রশাসনের কর্তাদের কাছেও। এপ জন্য কে দায়ী, সে নিয়েও শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। পশ্চিম মেদিনীপুরের অধিকাংশ পঞ্চায়েতেই ক্ষমতায় রয়েছে সিপিএম। জেলা পরিষদও তাদের দখলে। জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, রাজ্যে পালাবদলের পর একাংশ পঞ্চায়েতে অচলাবস্থা তৈরির চেষ্টা করেছে তৃণমূল। পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকেই পঙ্গু করা হচ্ছে। ফলে, উন্নয়নের কাজ ব্যাহত হয়েছে। আবার তৃণমূলের অভিযোগ, স্রেফ উদ্যোগ ও তদারকির অভাবেই কাজ এগোয়নি। সিপিএম পরিচালিত পঞ্চায়েত ইচ্ছাকৃত ভাবে কাজে গড়িমসি করছে।
এমনিতেই, একশো দিনের কাজের প্রকল্প নিয়ে ওঠা অভিযোগের অন্ত নেই। কোথাও মাস্টার রোল ছাড়াই কাজ করার অভিযোগ রয়েছে তো কোথাও একই কাজ বারবার দেখানোর অভিযোগও উঠেছে। কিছুদিন আগে পিংলার গোবর্ধনপুরে এমন অভিযোগ ঘিরেই শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। সে ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোথাও মোরাম রাস্তা তৈরি হয়েছে, কোথাও জমি সমতলীকরণের কাজ হয়েছে, কোথাও বা পুকুর খনন হয়েছে, কিন্তু, কোনও কাজেরই মাস্টার রোল নেই। এমনকী, প্রশাসনিক অনুমোদন না নিয়েও কাজ করা হয়েছে। যে সব কাজের জন্য খরচ দেখানো হয়েছে প্রায় ৪৭ লক্ষ টাকা। এই সব অভিযোগের প্রেক্ষিতে পরিস্থিতি দেখতে এ বার গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে পরিদর্শন শুরু করেছে জেলা স্তরের এক বিশেষ দল। ওই দলের নাম দেওয়া হয়েছে, ‘ডিস্ট্রিক্ট লেভেল টিম’। এর জন্য জেলার ২৯টি ব্লকের মোট ২৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই সব গ্রাম পঞ্চায়েতে গিয়ে একশো দিনের কাজ প্রকল্পে ঠিক কী কী কাজ হয়েছে, কোন প্রকল্পের কাজ কবে শুরু হয় এবং কবে শেষ হয়, সেই সব কিছুই খতিয়ে দেখছেন ওই দলের সদস্যরা। পরিদর্শনের কাজ শুরু হয়েছে ৩ ডিসেম্বর থেকে। চলবে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত।
পাশাপাশি ওই প্রকল্পের ফলে কত কর্মদিবস তৈরি হয়েছে, কত জন কাজ পেয়েছেন, তা -ও দেখা হচ্ছে। সেই তালিকা দেখেই বিড়ম্বনায় পড়েছেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক প্রশাসনের এক কর্তার স্বীকারোক্তি, “যে সংখ্যক মানুষ কাজ পাচ্ছেন, তার অন্তত ৫০ শতাংশ মহিলা হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু, হাতে গোনা কয়েকটি ব্লকে ৫০ শতাংশ মহিলা কাজ পেয়েছেন। সার্বিক ভাবে জঙ্গলমহলে কাজের পরিস্থিতি খারাপ।” |
|
|
|
|
|