রাজ্যের আর্থিক সাহায্য প্রয়োজন, বুঝছে কেন্দ্র
নারী নিগ্রহের প্রথম ধাপেই কড়া শাস্তির ভাবনা
নারী নির্যাতন রুখতে প্রথম রাতেই বিড়াল মারার দাওয়াই প্রয়োগ করতে চাইছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য, মহিলাদের সম্মানহানির অভ্যাস অঙ্কুরে বিনাশ করাই হল আসল দাওয়াই। কেউ ইভটিজিং, মহিলাদের উদ্দেশে অশ্লীল টিকাটিপ্পনি, ইঙ্গিত বা অঙ্গভঙ্গি করে ছাড় পেয়ে গেলে পরে সে আরও বড় অপরাধ করবে। তাই প্রথমেই ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০৯ ধারার সংশোধন দরকার বলে মনে করছে কেন্দ্র। এই ধারাতেই মূলত ইভটিজিংয়ের সংজ্ঞা দেওয়া রয়েছে। যার সর্বাধিক শাস্তি এক বছরের জেল ও জরিমানা। এই ধারার সংশোধন করে ইভটিজিংয়ের সংজ্ঞা ও শাস্তি, দুই-ই আরও কঠোর করতে চাইছে মনমোহন সরকার।
কেন্দ্র মনে করছে, ইভটিজিং থেকে শুরু করে যে কোনও ধরনের নারী নির্যাতন মামলায় দোষীদের নামধাম, ছবি-সহ জাতীয় তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলা প্রয়োজন। তাতে এক জন অভিযুক্ত আগেও অন্য কোথাও এই ধরনের অপরাধে জড়িত ছিল কি না, তা জানা যাবে। দিল্লিতে ২৩ বছরের তরুণীর গণধর্ষণের ক্ষেত্রেও দেখা গিয়েছে, বেশ কয়েক জন অভিযুক্ত আগেও নারী নির্যাতনের অপরাধে জড়িত ছিল। দেশের সব থানাকে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে জুড়ে দেওয়ার প্রকল্প ‘ক্রাইম অ্যান্ড ক্রিমিনাল ট্র্যাকিং নেটওয়ার্ক অ্যান্ড সিস্টেম্স (সিসিটিএনএস)’ কাজ করতে শুরু করেছে। এর ফলে ওই তথ্যভাণ্ডার তৈরির কাজে সুবিধা হবে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক মনে করছে।
আইনের সংশোধনের পাশাপাশি নারী নির্যাতন সংক্রান্ত মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সারা দেশে আরও বেশি ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট তৈরি, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তদন্ত ও চার্জশিট তৈরির প্রক্রিয়া শেষ করা এবং বিচারবিভাগীয় প্রক্রিয়ার অন্যান্য ফাঁকফোকরও মেরামত করতে চাইছে মনমোহন সরকার। দু’বছর আগে ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট তৈরির জন্য রাজ্যগুলিকে অর্থ সাহায্য দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল কেন্দ্র। এ বার নতুন করে সেই ব্যবস্থা চালু করার কথা ভাবছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। স্বরাষ্ট্রসচিব রাজকুমার সিংহ নিজেই মনে করছেন, আরও ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট তৈরির জন্য রাজ্যগুলিকে অর্থ সাহায্য করতে হবে। কারণ শেষ হিসেব অনুযায়ী, দেশের ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টগুলিতে ৬ লক্ষেরও বেশি মামলা ঝুলে রয়েছে। মহিলাদের সুরক্ষা নিয়ে রাজ্যের মুখ্যসচিব ও পুলিশের ডিজিদের সম্মেলনেও প্রস্তাব এসেছে, কেন্দ্র ফের রাজ্যগুলিকে এ বিষয়ে সাহায্য করুক।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও রাজ্যে ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট বাড়ানোর উপরে জোর দিচ্ছেন। কিন্তু রাজ্যের কোষাগারের যেখানে এমনিতেই করুণ অবস্থা, সেখানে ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট তৈরির অর্থ আসবে কোথা থেকে সেই প্রশ্ন উঠেছে। পশ্চিমবঙ্গে এখন প্রায় দেড়শো ফাস্ট-ট্র্যাক কোর্ট রয়েছে। কিন্তু রাজ্যের আদালতগুলিতে নারী নির্যাতন সংক্রান্ত মামলার সংখ্যা দেড় লক্ষ ছুঁই-ছুঁই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারাও মনে করছেন, সব দায় রাজ্যের উপরে চাপিয়ে দিলে লাভ হবে না। কেন্দ্রকেও এ বিষয়ে অর্থ বরাদ্দ করতে হবে। একাদশ অর্থ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ২০০৫ সাল থেকে রাজ্যে রাজ্যে ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট তৈরির জন্য একশো শতাংশ অর্থ সাহায্য করা শুরু করে কেন্দ্র। ২০১০-’১১ অর্থবর্ষ পর্যন্ত প্রায় ৫০৯ কোটি বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু তার পরে এই প্রকল্প বন্ধ করে দেওয়া হয়। এখন ফের সেই প্রকল্প চালুর কথা ভাবা হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তাদের মতে, ধর্ষণের মামলায় তদন্ত ঝুলে থাকে মূলত ফরেনসিক পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে দেরি হওয়ার কারণে। তাই ফরেনসিক ল্যাবরেটরি ও কর্মীর সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন। অপরাধের ধরনের উপরে ভিত্তি করে ৩০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করে চার্জশিট পেশের সময়সীমা বেঁধে দিতে চাইছে কেন্দ্র। রাজ্যগুলির সঙ্গে আলোচনার পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক মনে করছে, শুধুমাত্র মহিলা পুলিশ অফিসারদের দিয়েই থানায় নারী নির্যাতনের অভিযোগ নথিভুক্ত করাতে হবে। শারীরিক পরীক্ষার জন্যও মহিলা চিকিৎসক নিয়োগ করতে হবে। এই সব মামলার শুনানি হবে মহিলা বিচারকের এজলাসে। সরকারি আইনজীবীও মহিলা হতে হবে। সরকারি আইনজীবী বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও নির্যাতিতার পছন্দই হবে শেষ কথা। ফৌজদারি দণ্ডবিধির সংশোধন করে নারী নির্যাতনের মামলায় থানা থেকে জামিনের বিষয়টিও তুলে দিতে চাইছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। এ বিষয়ে আইন মন্ত্রকের সঙ্গে আলোচনা হবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.