|
|
|
|
সহায় ভাগবত, মোদী-জয় করে নিশ্চিত নিতিন |
জয়ন্ত ঘোষাল • নয়াদিল্লি |
গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি নিতিন গডকড়ীর মধ্যে একটি সন্ধি স্থাপন করলেন সঙ্ঘ প্রধান মোহন ভাগবত।
এই সন্ধির ফল, দলের সভাপতি পদে আরও দু’বছর থাকবেন নিতিন গডকড়ী। নরেন্দ্র মোদীকে করা হবে সর্বভারতীয় নির্বাচনী প্রচার কমিটির প্রধান। যার অর্থ, ২০১৪ সালের আগে বিজেপি কোনও প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করবে না। কিন্তু ভোট প্রচারের ক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদীই হবেন দলের প্রধান মুখ। বিজেপি সূত্রে বলা হচ্ছে, ২০১৪ সাল পর্যন্ত মনমোহন সিংহ প্রধানমন্ত্রী থাকছেন। তাই আসন্ন লোকসভা ভোটে রাহুল গাঁধীই কংগ্রেসের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হবেন, এ কথা আগাম বলা সম্ভব নয়। ঠিক তেমনই মোদীর নামও বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা সম্ভব নয়। এবং তা সম্ভব নয় মূলত দু’টি কারণে। প্রথমত, সে ক্ষেত্রে নীতীশ কুমার এনডিএ থেকে বেরিয়ে যাবেন। ফলে সম্প্রসারণ তো দূরের কথা, এনডি-তে ভাঙন ধরবে ভোটের আগেই। দ্বিতীয়ত, মোদীকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী করা নিয়ে দলের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। সেই কোন্দলকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টাই করছে সঙ্ঘ।
নিতিন গডকড়ী সভাপতি হন ২০০৯ সালের ২৫ ডিসেম্বর। ফলে ওই পদে তাঁর মেয়াদ এই ডিসেম্বরেই শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সঙ্ঘ পরিবার নিতিনকে বাঁচাতে অন্য কৌশল নিয়েছে। সঙ্ঘের বক্তব্য, তিন বছর আগে ফেব্রুয়ারি মাসে ইনদওরে দলের জাতীয় পরিষদের যে বৈঠক বসে, সেখানেই নিতিন দলের সভাপতি হিসেবে আনুষ্ঠানিক ভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। |
|
তাই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনি ওই পদে থাকতেই পারেন। এই নিতিনের বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগে পদত্যাগ করার চাপ ছিল দলের মধ্যে। মনে করা হচ্ছে, সঙ্ঘ কৌশলে নিতিনের মেয়াদ দু’মাস বাড়িয়ে কিছুটা সময় বের করল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিতিনের উপর থেকে চাপ কমবে বলে মনে করছেন সঙ্ঘ নেতারা। ফলে তাঁদের পক্ষেও পরিস্থিতিটা সামলে নেওয়া সহজ হবে।
নিতিনের মেয়াদ বৃদ্ধি নিয়ে ক্ষুব্ধ লালকৃষ্ণ আডবাণী, অরুণ জেটলি, সুষমা স্বরাজ। তাঁরা সকলেই ভেবেছিলেন, দুর্নীতির অভিযোগের ফলে এ বার নিতিনকে সরাতে বাধ্য হবে সঙ্ঘ। এই অভিযানে আডবাণীদের বড় ভরসা ছিলেন মোদী। কিন্তু আবার মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করতে আডবাণীদের যথেষ্ট আপত্তি রয়েছে। অরুণের সঙ্গে মোদীর সম্পর্ক অবশ্য আডবাণী বা সুষমার থেকে ভাল। কিন্তু বিজেপির সূত্রের খবর, সম্প্রতি নীতীশ কুমারের সঙ্গে অরুণের ঘনিষ্ঠতা বাড়ায় তা মোদী-অরুণের সম্পর্কে ছায়া ফেলেছে। প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হওয়ার ইচ্ছে নীতীশের পুরোদমে রয়েছে। বিজেপি নেতারা সে কথা জানেন।
এমন একটি পরিস্থিতিতে সঙ্ঘ প্রধান মোহন ভাগবত মোক্ষম চাল দিলেন। গুজরাত নির্বাচনের প্রথম দিকে স্থানীয় সঙ্ঘ নেতারা মোদীর প্রবল বিরোধিতায় নেমেছিলেন। প্রবীণ তোগাড়িয়ালের নেতৃত্বে তাঁরা কেশুভাই পটেলকে সমর্থন করতে শুরু করেন। কিন্তু প্রচারের শেষ লগ্নে নিতিন উদ্যোগী হয়ে নাগপুরে মোদী ও ভাগবতের মধ্যে বৈঠকের আয়োজন করেন। তার পরেই গুজরাত গিয়ে সঙ্ঘ প্রধান স্থানীয় নেতাদের বোঝান, তাঁরা যেন পটেলকে সমর্থন না করেন। তাঁর নির্দেশেই মোদীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে সঙ্ঘ পরিবারের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সঙ্ঘ নেতা সুরেশ সোনি। মোদীর সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে তৎপর হন নিতিনও। শপথের পর দিন মোদী দিল্লি এলে নিতিনের উদ্যোগেই বিজেপি সদর দফতরে তাঁর সংবর্ধনার ব্যবস্থা হয়।
নিতিনকে রাখার পক্ষে সঙ্ঘ পরিবারের যুক্তি হল, যদি দুর্নীতির দায় স্বীকার করে নিয়ে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়, তা হলে কংগ্রেস এটাকে প্রচারের হাতিয়ার করবে। নিতিনকে সভাপতি পদে রেখে দিলে তাদের সেই অস্ত্র ভোঁতা করে দেওয়া যাবে। তা ছাড়া, নিতিনের বিরুদ্ধে তো অভিযোগ প্রমাণও হয়নি। এই যুক্তিতে খুশি নন আডবাণী-জেটলি-সুষমারা। বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশের বক্তব্য, নিতিনের বদলে সভাপতি করা হোক অরুণ বা সুষমাকে। এখন দেখার, দলীয় নেতৃত্বের ওই অংশ সঙ্ঘ ও মোদীর কৌশলের মোকাবিলায় পাল্টা কোনও চাল দিতে পারেন কি না?
বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, সভাপতি পদে নিতিন দ্বিতীয় বার নির্বাচিত হওয়ার আগে বহু সাংগঠনিক কাজ বাকি। দলের জাতীয় সভাপতি চূড়ান্ত হয় ইলেক্টোরাল কলেজের মাধ্যমে। সেই ইলেক্টোরাল কলেজ তৈরি হয় কতগুলি বড় রাজ্যের সভাপতিকে সদস্য করে। গুজরাত, বিহার, পঞ্জাবের মতো রাজ্যগুলিতে এখনও নতুন সভাপতি মনোনয়ন বাকি। গুজরাতের সভাপতি আবার বিধানসভা ভোটে হেরেছেন। তিনি ওই পদে থাকবেন কি না, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ঠিক হয়েছে, ৮-১০ জানুয়ারি রাজ্য সভাপতির খালি পদগুলিতে নির্বাচন সেরে ইলেক্টোরাল কলেজের সদস্য ঠিক করে ফেলা হবে। তার পরেই নিতিনের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টি ঘোষণা করবে বিজেপি। সেই দিনক্ষণ ঠিক করতে সংসদীয় দলের বৈঠকও ডাকতে চলেছে তারা। |
|
|
|
|
|