ছ’মাস আগে নিজের ফ্ল্যাটে খুন হয়েছিলেন পাইকপাড়ার এক বৃদ্ধা। সেই ঘটনায় শনিবার এক যুবককে গ্রেফতার করলেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। তাঁদের দাবি, ওই যুবকই খুনের ঘটনার মূল অভিযুক্ত। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, “ধৃতের নাম সমীর সর্দার ওরফে হাপু। বাড়ি ভাঙড়ে।” তদন্তকারীদের দাবি, পুলিশের খাতায় সে দাগি চোর হিসাবে পরিচিত।
গত অগস্টে গাঙ্গুলিবাগান লেনে ফুলরেণু চৌধুরী (৬৮) নামে এক বৃদ্ধা খুন হন। তিনি একটি দোতলা বাড়ির একতলায় একা থাকতেন। ঘটনার দিন ভোরে ধুপধাপ শব্দে ঘুম ভেঙেছিল ওই বাড়ির দোতলার বাসিন্দাদের। বৃদ্ধার দু’ভাই পাশেই থাকেন। তাঁরা গিয়ে দেখেন, সদর দরজা খোলা, জানলার গ্রিল ভাঙা। ভিতরে পড়ে ফুলরেণুদেবীর রক্তাক্ত দেহ। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছিল, গ্রিল কেটে চুরি করতে ঢোকে দুষ্কৃতীরা। বাধা পেয়ে ভারী কিছু দিয়ে মাথায় আঘাত করে খুন করা হয় বৃদ্ধাকে।
ঘটনার তদন্তে নামে লালবাজারের হোমিসাইড শাখা। খুনের পিছনে যে কোনও দাগি চোর রয়েছে, সে বিষয়ে প্রথম থেকেই প্রায় নিশ্চিত ছিলেন তাঁরা। পুলিশের এক কর্তার ব্যাখ্যা, প্রথমে বৃদ্ধার মাথার বাঁ পাশে আঘাত করে ও পরে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়। পাকা খুনিরা এ ভাবে খুন করে না। পাশাপাশি, যে ভাবে গ্রিল কেটে দুষ্কৃতীরা ফ্ল্যাটে ঢোকে, তা চোরেদের পক্ষেই সম্ভব। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, এর পরে অপরাধী-তালিকা দেখে চোরেদের জিজ্ঞাসাবাদ করা শুরু হয়। লাগানো হয় সোর্স। এই ঘটনায় যে হাপুই জড়িত, সে বিষয়ে সম্প্রতি নিশ্চিত হয় পুলিশ। শনিবার ধর্মতলা অঞ্চল থেকে পাকড়াও করা হয় তাকে।
কে এই হাপু? লালবাজার সূত্রের খবর, শহর ও শহরতলিতে বহু চুরির ঘটনায় জড়িত সে। বহু বার গ্রেফতারও হয়েছে। গোয়েন্দা অফিসারদের কথায়, শহরে একা থাকা বৃদ্ধ-বৃদ্ধারাই হাপুর সহজ ‘শিকার’ ছিল। নানা ছলে-বলে বাড়িতে ঢুকে ‘রেইকি’ করত তার দল। পাইকপাড়ার ঘটনার পরে পুলিশ জেনেছিল, মিশুকে স্বভাবের ফুলরেণুদেবীও বহু অপরিচিত লোককে ঘরে বসিয়ে কথা বলতেন। তদন্তকারীদের দাবি, দোষ স্বীকার করেছে হাপু। রবিবার শিয়ালদহের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত হাপুকে পুলিশি হেফাজত দেয়। পুলিশ জানায়, আরও তিন জনের খোঁজ চলছে। |