গত সোমবার ২০১৩ সালের বাজার সম্পর্কে যে আশার বাণী শোনানো হয়েছিল এই কলমে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন বছরের প্রথম চার দিন বাজার উঠেছে একনাগাড়ে। এরই মধ্যে সূচক পিছনে ফেলেছে ২০১২ সালের রেকর্ডকে। শেয়ার বাজারের ভালমন্দ যেমন অনেকটাই দেশের অর্থনীতির উপর নির্ভর করে, ঠিক তেমনই তার ওঠা-নামার প্রভাব পড়ে অন্যান্য ক্ষেত্রের লগ্নির উপরেও। বাজার তেজী হয়ে ওঠায় এবং আগামী দিনে সূচকের আরও উপরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকায় দ্রুত ছকে ফেলতে হবে ২০১৩-র বিনিয়োগ পরিকল্পনা। নতুন বছরের বয়স এখন মাত্র সাত দিন। পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দ্রুত তৈরি করতে হবে লগ্নির রোডম্যাপ। এটা করার আগে এক এক করে দেখে নেব কোন লগ্নির ক্ষেত্রে কী কী পরিবর্তন আসতে চলেছে নতুন বছরে।
ব্যাঙ্ক জমা: সুদ কমার সম্ভাবনা প্রবল। এর আগে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক নগদ জমার অনুপাত (সি আর আর) কমানোয় সুদ কমিয়েছিল কোনও কোনও ব্যাঙ্ক। এ বার রিজার্ভ ব্যাঙ্ক রেপো রেট কমাতে পারে বলে মনে করছে অভিজ্ঞ মহল। তা হলে যে জমার উপর সুদ কমবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। অর্থাৎ যাঁদের ব্যাঙ্কে টাকা রাখার পরিকল্পনা আছে, তাঁদের উচিত হবে চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যেই মেয়াদি আমানতে টাকা গচ্ছিত করা। সেভিংস ফান্ডে বেশি সুদ পাওয়ার জন্য ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত রাখা যেতে পারে সেই সব বেসরকারি ব্যাঙ্কে, যারা ৬ থেকে ৭ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিচ্ছে।
ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্প
ব্যাঙ্ক সুদ কমতে থাকায় কয়েকটি ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্প আবার আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। জানুয়ারি মাসে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ কমানোর পথে হাঁটলে এপ্রিলে ডাকঘর সঞ্চয় প্রকল্পগুলিতেও সুদ কমার সম্ভাবনা থাকবে।
বন্ড
সুদ কমার সম্ভাবনা থাকলে বন্ডের বাজার দর বাড়ার প্রবণতা দেখা দেয়। অর্থাৎ সুদ কমার আগেই বন্ডে লগ্নি করা ভাল। বাজারে এখন এক এক করে আসছে করমুক্ত বন্ড। অবস্থার সুবিধা নিতে লগ্নি করা যায় মিউচুয়াল ফান্ডের বন্ড ফান্ডেও।
মিউচুয়াল ফান্ড
শেয়ার বাজার তেতে ওঠায় সুদিন ফিরছে ইক্যুইটি-নির্ভর মিউচুয়াল ফান্ডের। অনেক দিন পর ন্যাভ্ বেড়েছে বেশির ভাগ প্রকল্পের। ঋণপত্র-নির্ভর ফান্ডগুলির অবস্থাও ভাল। সাবধানী লগ্নিকারীরা বর্তমান পরিস্থিতিতে এস আই পি পদ্ধতিতে লগ্নি করতে পারেন ব্যালান্সড ফান্ডে। সেনসেক্স ২০ হাজার ছাড়ালে পুরনো লগ্নি তুলে নেওয়ার কথাও ভাবা যেতে পারে।
কর সাশ্রয়কারী লগ্নি
হাতে সময় সাত দিন কম তিন মাস। লক্ষ্য ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লগ্নি। লগ্নি করা যেতে পারে ৫ বছর মেয়াদি কর সাশ্রয়কারী ব্যাঙ্ক আমানত, জাতীয় সঞ্চয়পত্র, মিউচুয়াল ফান্ডের ইএলএসএস প্রকল্প, জীবন বিমা ইত্যাদি জায়গায়। টাকা ব্যাঙ্কে রাখতে হলে তা তাড়াতাড়ি করে ফেলাই ভাল।
শেয়ার
আর্থিক সংস্কার গতি পাওয়ায় এবং সুদ কমার সম্ভাবনা প্রবল হওয়ায় শেয়ার বাজার এখন তেজী। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক চলতি মাসে সুদ কমালে সূচকের আরও উপরে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। সুদ না-কমানো হলে অবশ্য বাজার খানিকটা নেমে আসতে পারে। অনামী শেয়ার হাতে থাকলে চড়া বাজারে বিক্রি করে বেরিয়ে আসাই ভাল। পোর্টফোলিও-র পরিবর্তনও করা যেতে পারে এই সুযোগে। নজর রাখতে হবে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার নতুন ইস্যুর উপরেও।
সোনা
অনেকটা ওঠার পর সোনা এখন কিছুটা ম্লান। শীতকালীন ফসল ভাল হওয়ায় গ্রামীণ অর্থনীতিতে উন্নতির আশা দেখা দিয়েছে। এর ফলে বাড়তে পারে সোনার চাহিদা। অন্য দিকে সোনা আমদানির উপর নিয়ন্ত্রণ বসাতে চাইছে সরকার। অর্থাৎ মাঝারি মেয়াদে আবার সোনার দাম বাড়ার সম্ভাবনা থাকবে।
সম্পত্তি
চড়া সুদ এবং অর্থনীতি কিছুটা ঝিমিয়ে পড়ার কারণে থমকে দাঁড়িয়েছে সম্পত্তির দাম। কোনও কোনও শহরে কিছুটা কমেছেও। সুদের হার কমলে, অর্থনীতি কিছুটা শোধরালে এবং শেয়ার বাজার চাঙ্গা থাকলে বাড়ি-জমির দাম আবারও বেড়ে উঠতে পারে।
ডলার
ডলার এখন বেশ অস্থির। বিদেশি লগ্নি বৃদ্ধি পেলে ডলারের দাম নেমে আসে। দাম বাড়ে সোনা আমদানি বাড়লে এবং রফতানি কমলে। পশ্চিমের অর্থনীতিতে প্রাণ না-ফিরলে রফতানি বাড়ার সম্ভাবনা কম। অর্থাৎ ডলারের জোগানে ওঠা-পড়া চলবে। টাকার তুলনায় দামও থাকবে অস্থির। |