|
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি: শতবর্ষে বিজ্ঞান কংগ্রেস |
আয়োজনই সার, দর্শকহীন মহিলা বিজ্ঞান কংগ্রেস
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
|
রাস্তার মুখে বড় প্ল্যাকার্ডে লেখা স্বাগতম। কিছু দূর এগোলেই রাস্তার মোড়ে মোড়ে ব্যাজ লাগানো ছাত্রছাত্রীদের জটলা। সভাস্থলে উদ্বিগ্ন মুখে ঘোরাফেরা করছেন অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তারা। দেশ বিদেশ থেকে আসা অভ্যাগতরাও সময়মতো হাজির। সময়েই শুরু হল অনুষ্ঠান। কিন্তু যাঁদের জন্য এত আয়োজন তাঁরা কোথায়? দ্বিতীয় মহিলা কংগ্রেসের তিন দিনই প্রায় ফাঁকা হল দেখে অনুষ্ঠানের যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গেল।
অথচ আয়োজনের ত্রুটি ছিল না। শততম বিজ্ঞান কংগ্রেসের সঙ্গেই গুরুত্ব দিয়ে আয়োজন করা হয়েছিল দ্বিতীয় মহিলা বিজ্ঞান কংগ্রেস। তা হলে তা দর্শকহীন রইল কেন? গবেষক ও ছাত্রছাত্রীদের একাংশের মতে, এ বার মহিলা কংগ্রেসে নতুনত্ব নেই। আলোচনা, জটিল তত্ত্ব আর তথ্যের ভারে কেটে গেল অধিবেশনের তিনটে দিন। মাঝখানে ‘রিলিফ’ বলতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এর বাইরে প্রাপ্তি ভারতীয় মহিলাদের বিশেষত গ্রামীণ এবং অশিক্ষিত মহিলাদের সামাজিক প্রতিবন্ধকতার আখ্যান।
কিন্তু প্রশ্ন একটাই। সমস্যার কথা বললেন সকলে। সমাধানটাই পাওয়া গেল না। কেউ কেউ তাত্ত্বিক সমাধানের পথ বাতলালেন। কিন্তু ক্ষমতায়নের বাস্তব পথের খোঁজ কোথায়? কেনই বা বিশিষ্ট বিজ্ঞানীদের ভিড়ে নবীন প্রজন্মের মহিলাদের মুখ সে রকম দেখতে পাওয়া গেল না? অনুষ্ঠানের শেষ দিনে প্রশ্নোত্তর পর্বে উপস্থিত দর্শকদের মধ্যে থেকে যাঁরা প্রশ্ন করতে এগিয়ে এলেন তাঁদের অধিকাংশের বয়সই পঞ্চাশের কোঠা ছাড়িয়েছে।
৩ জানুয়ারি সত্যেন্দ্রনাথ বোস ন্যাশনাল সেন্টার ফর কালচারাল সায়েন্সেস-এ মহিলা কংগ্রেসের উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী জয়পাল রেড্ডি। এ বার মূল বিষয়বস্তুই ছিল, বিজ্ঞানের জগতে মহিলাদের অবদান এবং নারীর ক্ষমতায়ন। অথচ প্রথম দিনই তাঁর উদ্বোধনী বক্তৃতায় জয়পাল রেড্ডি জানিয়েছিলেন, মেয়েদের উপস্থিতির হার বাড়লেও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে মহিলা গবেষকদের সুযোগ করে দেওয়ার ব্যাপারে আরও অনেক দূর যাওয়া দরকার। গোটা অধিবেশন জুড়েই এই বিষয়ই ফিরে ফিরে এসেছে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের বক্তৃতায়।
তবে অধিকাংশের একই মত সামগ্রিক উন্নয়নই ভারতে মহিলাদের অবস্থার পরিবর্তন করতে পারে। এ জন্য প্রথমে দরকার মানসিকতার বদল। কিন্তু কী ভাবে বদল ঘটবে এই ধ্যানধারণার? ‘সায়েন্স কংগ্রেস অ্যাসোসিয়েশন’-এর প্রাক্তন সভাপতি গীতা বালির মতে, যদি মহিলাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে যথাযথ ব্যবহার না করা হয়, সে ক্ষেত্রে দেশের প্রায় অর্ধেক মানব-সম্পদই অব্যবহৃত থেকে যাবে। তাই মহিলাদের সামগ্রিক উন্নয়নের উপরই জোর দিলেন তিনি।
তবে যে দর্শকদের সচেতন করতে এত আয়োজন, তাঁদের অনুপস্থিতিই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল ‘এখনও অনেকটা পথ বাকি।’ |