ক্লাসঘরের অভাবে মুশকিলে মেয়েদের স্কুল
শুধু মাত্র মেয়েদের জন্য এলাকায় কোনও স্কুল ছিল না। স্থানীয় মানুষের দীর্ঘ দিনের সেই দাবি মিটেছিল গত বছরই। কিন্তু এক বছর যেতে না যেতেই সেই স্কুল নিয়ে প্রশাসনের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
কেন?
“অনুমোদন মেলার পর সেই স্কুল চলার বিষয়ে প্রশাসনের কি সমস্ত দায়িত্বই মিটে যায়?” ক্ষুব্ধ হয়ে বললেন এক বাসিন্দা।
তাঁদের অভিযোগ, স্কুল চালু হলেও এক বছরেও সম্পূর্ণ হয়নি চাঁদপাড়া জুনিয়র গার্লস হাইস্কুলের স্থায়ী ক্লাসঘর গড়ে তোলার কাজ। গত ও বর্তমান শিক্ষাবর্ষ মিলিয়ে দু’টি ব্যাচ এখন কোথায় ক্লাস করবে তা ভেবেই কুল পাচ্ছেন না স্কুলের শিক্ষক থেকে এলাকাবাসী সকলেই।
স্কুল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য সরকারের থেকে কিছুটা অনুদান নিয়ে এলাকার হাইস্কুলের পরিত্যক্ত ১৯ শতক জমির উপরে গড়ে উঠছে সেই স্কুল। স্কুল ভবন নির্মাণের জন্য বিধায়ক এলাকা উন্নয়ন খাতে অসিত মাল দিয়েছিলেন আড়াই লক্ষ টাকা। সেই টাকায় একটিই মাত্র ক্লাসঘর তৈরি করা চলছে। পড়ুয়াদের জন্য একটি শৌচাগার তৈরি করতে সর্বশিক্ষা মিশন থেকে বরাদ্দ হয়েছে টাকা।
ওইটুকুই।

এখানেই অস্থায়ী ভাবে চলে ক্লাস। —নিজস্ব চিত্র।
রাজ্যের অনুমোদন পাওয়া অসংখ্য নতুন স্কুলের মতো এই স্কুলের ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত অনেকটাই। অন্তত এমনটাই মনে করছেন এলাকার মানুষ। কারণ, ভবন না থাকার জন্য চাঁদপাড়ার ১ নম্বর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দোতলায় শুরু হয় ওই স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস। এখনই ছাত্রী সংখ্যা প্রায় দেড়শোর কাছাকাছি। সংখ্যাধিক্যের জন্য তাদের দু’টি বিভাগে ভাগ করে ক্লাস নিতে হয়। এর পর রয়েছে আসন্ন নতুন শিক্ষাবর্ষের পড়ুয়ারাও। আগামী দিনে এত জন পড়ুয়া কোথায় কী ভাবে ক্লাস করবে তাই নিয়ে এখন প্রবল চিন্তায় এলাকাবাসী। এই অবস্থায় স্কুলটির সার্বিক উন্নয়নে কী করা দরকার গত ২ জানুয়ারি তার আলোচনায় মিলিত হয়েছিলেন এলাকার বহু শিক্ষানুরাগী।
ওই স্কুলে বর্তমানে ক্লাস নিচ্ছেন চার জন অতিথি শিক্ষক। তার আগে স্কুলটিতে বিনা পারিশ্রামিকে পড়িয়েছেন এলাকারই পাঁচ জন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অক্ষয়কুমার সিংহ, আব্দুল হাসিব, মহম্মদ জাকেরিয়া, সুনীলকুমার সরকার ও নসুপতি পটুয়া। এ ছাড়াও এলাকার ১২ জন বেকার যুবক স্কুলের পঠনপাঠন ঠিক রাখার জন্য স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে স্কুলের ক্লাস নিতেন। তাঁরা জানালেন, এখন যেখানে অস্থায়ী ভাবে স্কুল চলছে সেখানে মাত্র দু’টি ঘর। ফলে নতুন শিক্ষাবর্ষে ছাত্রীরা কোথায় ক্লাস করবে তা নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে। সমস্যা মেটাতে সরকার এখনই কোনও উদ্যোগ না নিলে ক্লাসঘরের অভাবে স্কুল চালানোই মুশকিলে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। অক্ষয়বাবুরা বললেন, “আমরা চাই আমাদের মেয়েরা লেখাপড়াটা ঠিক মতো শিখুক। তার জন্যই আমাদের এতো পরিশ্রম করা। কিন্তু সেই পরিশ্রম এতো সহজে বিফলে যেতে দেওয়া যায় না।”
তাই নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করে ওই ২ জানুয়ারিই এলাকার মানুষ সংশ্লিষ্ট অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাছে তাঁদের সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন। ক্লাসঘর ছাড়াও বর্তমান শিক্ষাবর্ষে আরও শিক্ষক নিয়োগের দাবিও তাঁরা জানিয়েছেন। তাতে সমস্যা কি মিটছে? এলাকাবাসীর উদ্যোগকে কুর্ণিশ জানিয়ে রামপুরহাট উত্তর চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক কিশোরকুমার মণ্ডলের আশ্বাস, “সর্বশিক্ষা মিশন থেকে খুব শীঘ্রই ওই স্কুলকে নতুন ক্লাসঘর তৈরির জন্য সাড়ে চার লক্ষ টাকা দেওয়া হবে।”
কিন্তু সেই টাকা এসে নতুন ঘর তৈরি করতে তো অনেক দিনই লাগবে। তা হলে এখন, ওই স্কুলের ছাত্রীরা বসবে কোথায়?
স্কুলের টিচার ইনচার্জ মহম্মদ রিয়াজুল হক জানালেন, “নতুন টাকায় অসম্পূর্ণ ঘরটিকে কোনও ভাবে ক্লাসঘরের জন্য প্রস্তুত করা যেতে পারে। তা ছাড়া আমরা অস্থায়ী ভাবে একটি চালাঘর বানানোর কথাও ভাবছি। সব মিলিয়ে এ বারের মতো সমস্যা হয়তো কাটিয়ে দেওয়া যাবে।”
আর তার পরে? এলাকাবাসীর উপরেই ভরসা রাখছে চাঁদপাড়া জুনিয়র গার্লস হাইস্কুল।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.