গোপন ব্যালটে গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান নির্বাচনের ভোটাভুটির পর দেখা গেল সিপিএমের ভোট পেল কংগ্রেস। শুক্রবার দুপুরে ফাঁসিদেওয়ার বিধাননগর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতে ঘটনাটি ঘটেছে। দলেরই এক সদস্যকেই ৭-৬ ভোটে হারিয়ে নতুন প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন কংগ্রেসের পীযূষ সিংহ। তবে ভোটের ফল বার হওয়ার পরেই বোঝা যায়, সিপিএমের সদস্যরা কংগ্রেসের প্রার্থীদের ভোট দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে বিধানগরের রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য ছড়ায়। দার্জিলিং জেলা সিপিএমের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এই ধরণের কোনও নির্দেশ দল দেয়নি। ফাঁসিদেওয়ার বিডিও বীরুপাক্ষ মিত্র বলেন, “প্রধান পদের জন্য একের বেশি দাবিদাব থাকায় সরকারি নিয়ম মেনে ব্যালেটে ভোট হয়েছে। নতুন প্রধানকে আগামী সপ্তাহের মধ্যে দায়িত্বভার বুঝে নিতে বলা হয়েছে।”
২০০৯-এর মে মাসে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়। বিধাননগর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৫টি আসনের মধ্যে ১১টি দখল করে কংগ্রেস। চারটি আসন পায় সিপিএম। প্রধান নির্বাচিত হন কংগ্রেসের মনোরঞ্জন রায়। উপপ্রধান হন ওই দলেরই মামলা কুজুর। জেলা কংগ্রেসের কয়েকজন নেতা জানান, গত দু’বছর ধরে স্থানীয় কংগ্রেস নেতৃত্বের মধ্যে গোষ্ঠী কোন্দল দেখা দেয়। এরই মধ্যে প্রধান মনোরঞ্জনবাবু অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি প্রধান পদ ছেড়ে দেওয়ার জন্য দলকে অনুরোধ করেন। একবার ইস্তফাও দেন। পরে জেলা নেতৃত্বের অনুরোধে কাজ চালিয়ে যান। গত বছরের শেষে মনোরঞ্জনবাবু পদত্যাগ করেন। কংগ্রেস সূত্রের খবর, সর্বসম্মতিতে প্রধান নির্বাচন করার জন্য জেলা নেতৃত্ব আসরে নামেন। একাধিকবার স্থানীয় নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা বিধায়ক শঙ্কর মালাকার। তবে প্রধান পদের একাধিক দাবিদার থাকায় তা কার্যত ভেস্তে যায়। এদিন নতুন প্রধান নির্বাচনের জন্য প্রশাসনের তরফে দিনক্ষণ ঠিক করা হয়। কংগ্রেসের তরফেও পীযূষবাবুর পাশাপাশি উষারানী সিংহ প্রধান পদের জন্য দাবি জানান। শেষে সরকারি নিয়মে কড়া পুলিশি ব্যবস্থায় গোপন ব্যালেটে ভোটাভুটি শুরু হয়। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ১৫ সদস্যের মধ্যে দেখা যায় কংগ্রেসের এক সদস্য রাজ্যের বাইরে থাকায় তিনি আসতে পারেননি। সিপিএমের ৪ জনই ভোটে অংশ নেন। ব্যালেটে ভুল করায় কংগ্রেসের এক সদস্য ভোট বাতিল করে দেওয়া হয়। বাকি কংগ্রেস, সিপিএম মিলিয়ে ১৩ জন ভোট দেন। দেখা যায় পীযূষবাবু ৭টি এবং উষারানী দেবী ৬টি ভোট পেয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছেন জেলা কংগ্রেস নেতারাও। দলের জেলার সাধারণ সম্পাদক জীবন মজুমদার বলেন, “গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কংগ্রেসেরই প্রধান হয়েছেন। সিপিএম মাঝে ঢুকে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছে। দলীয় সদস্যদের মধ্যে যা ভুল বোঝাবুঝি ছিল তা মিটে গিয়েছে। কংগ্রেসের প্রধান এলাকার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবেন।” আর সিপিএমের ভারপ্রাপ্ত জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার বলেন, “পুরোটাই কংগ্রেসের নিজস্ব বিষয় ছিল। আমাদের দলের তরফে কোনও নির্দেশ ছিল না। তার পরেও চার সদস্য কেন এমন করলেন তা দেখা হচ্ছে।” |