জঙ্গলমহলের ফুটবলারদের তথ্য সংগ্রহে উদ্যোগী পুলিশ
ঙ্গলমহলের যুবক-যুবতীদের মূল স্রোতে ফেরাতে ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল পুলিশ। লক্ষ্য ছিল তাঁদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়া, যাতে তাঁরা সহজেই যে কোনও সমস্যার কথা পুলিশকে জানাতে পারেন, আবার পুলিশও নানা বিষয়ে খোঁজ পেতে পারে তাঁদের থেকে। এ বার সেই যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থানেও উদ্যোগী হল পুলিশ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মতো ফুটবল প্রতিযোগিতায় যোগদানকারী প্রতিটি খেলোয়াড়কে নিয়ে এ বার তৈরি হবে ‘ডেটা ব্যাঙ্ক’। কম্পিউটারে ক্লিক করলেই যাতে যে কোনও খেলোয়াড় সম্বন্ধে যাবতীয় তথ্য মেলে সেই লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ডেটা ব্যাঙ্ক তৈরি হলে এক নজরেই জঙ্গল মহলের কয়েক হাজার যুবক-যুবতী সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য মিলবে, যাঁরা পুলিশ ও রাজ্য সরকারের উপর আস্থা রাখেন। ফলে ওই যুবক-যুবতীদের কাছ থেকে এলাকার সব ধরনের খোঁজ খবর নেওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশ অনেক সুবিধে পাবে। চাকরির ক্ষেত্রে প্রশাসনিক ভাবে কোনও সুযোগ মিললে এই সব যুবক-যুবতীদের অগ্রাধিকারও দেওয়া হবে। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো আমরা ডেটা ব্যাঙ্ক তৈরির কাজ প্রায় শেষ করে ফেলেছি।”
জঙ্গলমহলের তিনটি জেলায় ফুটবল ও তীরন্দাজি প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়েছিলেন ২৬ হাজার ৯০৭ জন প্রতিযোগী। সমস্ত খেলোয়াড়দের নাম, বাবার নাম, বয়স, পেশা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, যোগাযোগের নম্বর -সব কিছুই মিলবে ‘ডেটা ব্যাঙ্ক’-এ। প্রশাসন সূত্রে খবর, শুধু মাত্র পুলিশ দিয়ে বা যৌথবাহিনী রেখে মাওবাদী মোকাবিলা সম্ভব নয়। মাওবাদী দমনে পুলিশি তল্লাশির সঙ্গে প্রয়োজন উন্নয়নেরও। মানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রেই তল্লাশির সময় পুলিশি নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। ফলে পুলিশের প্রতি বিমুখ হয়েছেন জঙ্গলমহলের একাংশ যুব সমাজ ও কিশোর-কিশোরী। মাওবাদীরা এই যুব সমাজ ও কিশোর-কিশোরীদের হাতিয়ার করেই জঙ্গলমহলকে কব্জায় এনেছিল। জেলা প্রশাসনের এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, “এই বয়সের যুবক-যুবতীতের মধ্যে একটা ‘হিরোইজম’ থাকে। কিন্তু দূরদৃষ্টি থাকে না। সেই সুযোগটাই নিয়েছিল মাওবাদীরা। এই ধরনের নিস্পাপ ছেলেমেয়েদের হাতে বন্দুক তুলে দিয়েছিল। ফলে ভুল পথে পরিচালিত হয়ে ধ্বংসাত্মক মনোভাবে মেতে উঠতে তারা দ্বিধাবোধ করেনি।” এই যুব সমাজকে সুস্থ সংস্কৃতির পথে ফেরাতেই উদ্যোগী হয়েছে প্রশাসন। পুলিশের তরফ থেকে নানা ধরনের জনমুখী কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। যেমন, দরিদ্রদের বস্ত্র বিতরণ, স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির, ছাত্রছাত্রীদের পুস্তক বিলি, খাতা, কলম দিয়ে সাহায্য করা প্রভৃতি। এর সঙ্গেই প্রতি বছরই ফুটবল টুর্নামেন্ট ও তীরন্দাজি প্রতিযোগিতা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রশাসনের আশা, এতে ধ্বংসাত্মক কাজ ভুলে সকলে মেতে উঠবে ফুটবলে। আর প্রতিনিয়ত পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ হলে যুবক-যুবতীরা নিঃসঙ্কোচে তাঁদের সমস্যার কথা জানাতে পারবে। পুলিশও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে। দু’পক্ষের মধ্যে গড়ে উঠবে সুসম্পর্ক। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই যুবক-যুবতীদের কাজের ব্যাপারেও চিন্তাভাবনা করা হবে। মাঝে মধ্যেই পুলিশে নিয়োগ হয়। লিখিত পরীক্ষা পাশের পর ‘ইন্টারভিউ’ এ জানতে চাওয়া হয়, খেলাধূলো ও অন্যান্য বিষয়ে আগ্রহ রয়েছে কিনা। আবেদনকারী পুলিশের টুর্নামেন্টে খেলেছে জানালে সঙ্গে সঙ্গে দেখে নেওয়া হবে, ‘ডেটা ব্যাঙ্ক।’ নিয়োগের ক্ষেত্রেও তাঁকে অগ্রাধিকারও দেওয়া হবে। এছাড়া বিভিন্ন সংস্থায় নিয়োগের ক্ষেত্রেও যোগ্যতার নিরিখে তাঁদের কাজ দেওয়ার চেষ্টা করা হবে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। প্রশাসনের আশা এমনটা হলে এগিয়ে আসবেন যুবক-যুবতীরাও।
একটা সময় ছিল জঙ্গলমহলের বহু গ্রাম ও এলাকাতে ঢুকতে পারত না পুলিশ। এখনও পরিস্থিতি বদলেছে। প্রতিটি গ্রামেই পুলিশ যেতে পারে। এছাড়া কোনও সন্দেহজনক ব্যক্তি গ্রামে ঢুকলেও খবর পায় পুলিশ। হাজার হাজার যুবক-যুবতীকে পুলিশের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় যোগ দেওয়ানোর ফলেই প্রত্যন্ত গ্রামের খবরও সহজেই পুলিশের কাছে আসছে বলে পুলিশের দাবি। এমনকী অন্যান্য মাওবাদী উপদ্রুত রাজ্যও এই পথে হাঁটতে চলেছে বলে পুলিশের দাবি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.