দখলদারদের দাপটে রাস্তার দু’পাশ প্রায় অদৃশ্য। অবস্থা এমনই যে পাশাপাশি দু’টি গাড়ির অনায়াস যাতায়াত যেন সার্কাসের খেল। কলকাতা থেকে উত্তর ২৪ পরগনার পেট্রাপোল সীমান্ত পর্যন্ত যশোহর রোড তথা ৩৫ নম্বর জাতীয় সড়কের ছবিটা বর্তমানে এরকমই।
নির্দিষ্ট সময় না মেনে সীমান্তমুখী পণ্যবাহী ট্রাকের যাতায়াত, রাস্তার উপরে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা ভ্যান, অটো বা অন্য যানবাহনের স্ট্যান্ড, নির্দিষ্ট স্টপ ছাড়াই যত্রতত্র বাসে যাত্রী ওঠানামা, রাস্তার উপরেই ইমারতীর জিনিসপত্র (ইট, বালি) ফেলে রাখা থেকে শুরু করে ট্রাকের পার্কিং ইত্যাদি নানা কারণে বনগাঁ শহরে যানজটের সমস্যা চরম অবস্থায় পৌঁছেছে। রাস্তায় বেরিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছনো পথচারির কাছে দুরাশা। এই অবস্থায় প্রায় নিত্যদিনই ছোটখাটো দুর্ঘটনার পাশাপাশি ঘটছে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা। মাঝেমধ্যে তা সংঘর্ষের আকারও নিচ্ছে। বস্তুত যান সমস্যায় জর্জরিত বনগাঁর মানুষ। |
সমস্যা মেটাতে আগে বহু বার প্রশাসনের তরফে নানা পদক্ষেপ করা হলেও আদতে তার কোনও সুফল যে তেমন মেলেনি বর্তমান পরিস্থিতি সেটাই প্রমাণ করে। তবে ফের এই সমস্যা মেটাতে নতুন ভাবে পদক্ষেপ করতে চলেছে প্রশাসন। এ ব্যাপারে গত ৩ ডিসেম্বর বনগাঁর মহকুমাশাসক অভিজিৎ ভট্টাচার্য সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকে এসডিপিও, পুরসভার চেয়ারম্যান, জেলা আঞ্চলির পরিবহণ সংস্থার সরকারি সদস্য, বনগাঁ থানার আইসি-সহ পরিবহণ সম্পর্কিতবিভিন্ন সংগঠমনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে শহরের প্রধান সড়কগুলিতে বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করার সিদ্ধান্ত হয়। গত ১ জানুয়ারি থেকে তা কাযর্কর করাও শুরু হয়েছে।
পুর-চেয়ারম্যান জ্যোৎস্না আঢ্য বলেন, “শহরের যানজট সমস্যা মেটাতে দশটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই নিয়মগুলি সম্পর্কে যানচালক ও পথচারিদের সচেতন করতে শহর জুনে মাইক-প্রচার হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলিতে পোস্টারও লাগানো হচ্ছে।” যানজট সমস্যার পাশাপাশি ট্রাকের ওভারলোডিংয়ের কারণে রাস্তা নষ্টের বিষয়েও নজর দেওয়া হয়েছে। জেলা আরটিএ সদস্য ও প্রাক্তন বিধায়ক গোপাল শেঠ বলেন, “ওভারলোডিং-এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে।”
তবে যানজট সমস্যার সমাধানে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়াকে সাধারণ মানুষ স্বাগত জানালেও তাঁদের মূল দাবি, যশোহর রোডকে আরও চওড়া করা হোক। প্রয়োজনে ফ্লাইওভার তৈরির বিষয়েও দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। তবে যান সমস্যা মেটাতে বনগাঁয় ফ্লাইওভারের প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করেছেন স্থানীয় বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস। তিনি জানান, পূর্তমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে ইতিমধ্যেই বনগাঁ-১ নম্বর রেলগেট এলাকায় ফ্লাইওভার তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।”
মহকুমাশাসক বলেন, “সমস্যার সমাধানে বেশ কিছু পদক্ষেপ করা হয়েছে। আশা করি এতে সুফল পাওয়া যাবে।”এসডিপিও রূপান্তর সেনগুপ্ত বলেন, “যানশাসনের নিয়ম মানা না হলে আগামী ৭ জানুয়ারির পর থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |
না মানলে ব্যবস্থা |
• যশোহর রোডে রামনগর মোড় থেকে বিএসএফ ক্যাম্প মোড় পর্যন্ত সকাল ১০টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত এবং বিকেল ৩টে থেকে ৫টা পর্যন্ত কোনও মালবাহী গাড়ি চলাচল করতে পারবে না।
• সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কোর্ট রোড ও স্কুল রোডে লরি, বাস, ট্রাক চলাচল করতে পারবে না। তবে কোনও উৎসব হলে ও অনুমতিসাপেক্ষে ছাড় দেওয়া হবে।
• সমস্ত বাস নির্দিষ্ট টার্মিনাস থেকে ছাড়বে ও পৌঁছবে।
• রায় সেতু ও রাখাল দাস সেতুর উপর কোনও গাড়ি দাঁড়াতে পারবে না।
• বেআইনি ভ্যানরিকশা নিয়ন্ত্রণে পুরসভা ও পুলিশ একযোগে কাজ করবে।
• রাস্তার পাশে ইমারতীর মালপত্র রাখলে পুরসভা আইনি ব্যবস্থা নেবে।
• মিলিটরি রোডে কোনও যানবাহন দাঁড়াতে দেওয়া হবে না।
• দৈনিক ১৫ টাকার বিনিময়ে ট্রাক মালিক রাস্তায় ট্রাক রাখতে পারবেন। তবে অবশ্যই মাল ওঠানামার ক্ষেত্রে।
• পুর এলাকা দিয়ে গরুর গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ।
• ওভারলোডিংয়ের ক্ষেত্রে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। |
|