পঞ্চায়েত ভোটের আগে জয়নগরে ফুল ফুটল বিজেপি-র। জয়নগরের পশ্চিম-গাববেড়িয়া হাইস্কুল পরিচালন সমিতির নির্বাচনে ৬টি আসনই দখল করল বিজেপি। কারখানায় শ্রমিক ইউনিয়ন, অটো ইউনিয়নের পরে এ বার স্কুলের পরিচালন সমিতিতে নিরঙ্কুশ জয়ের ফলে দক্ষিণ ২৪ পরগনার একাংশে তৃতীয় শক্তি হিসাবে তাদের উত্থান আরও স্বীকৃতি পেল বলে বিজেপি সূত্রের ব্যাখ্যা। যা পঞ্চায়েত ভোটের আগে উৎসাহ বাড়াচ্ছে বিজেপি শিবিরের।
বস্তুত, ৩৪ বছরের বাম জমানায় জয়নগরে দাঁত ফোটাতে পারেনি সিপিএম। জয়নগর বিধানসভা আসনটি এসইউসি-র দখলে। দীর্ঘদিন জয়নগর পুরসভা ছিল কংগ্রেসের। অধিকাংশ পঞ্চায়েত কংগ্রেস এবং এসইউসি-র হাতে। সেখানে স্কুল ভোটে বিজেপি-র এমন জয় তাৎপর্যপূর্ণ বলেই জেলার রাজনৈতিক শিবিরের ধারণা।
বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের কথায়, “সিপিএম ও তৃণমূলের উপরে বিরক্ত মানুষ। তৃতীয় শক্তি হিসেবে তাঁরা বিজেপি-কেই পরখ করতে চান। পঞ্চায়েতে বিজেপি সব আসনেই প্রার্থী দেওয়ার চেষ্টা করছে।” দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা বিজেপি-র (পূর্ব) সভাপতি দেবতোষ আচার্যের বক্তব্য, “সব স্কুল নির্বাচনেই প্রার্থী দিচ্ছি। মানুষও আমাদের ভোট দিয়ে সাড়া দিচ্ছেন।” সব স্কুল নির্বাচনেই তাঁরা ১৫ থেকে ২১% ভোট পেয়েছেন বলে দেবতোষবাবুর দাবি। জেলার আর এক সভাপতি (পশ্চিম) বিকাশ দাসের দাবি, “আমাদের জনসভায় মানুষের ভিড় উপচে পড়ছে। মানুষ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।”
বস্তুত, শুধু এসইউসি-দুর্গে একটি স্কুল নির্বাচনে বিরাট জয়ই নয়। দক্ষিণ শহরতলির বিষ্ণুপুর ও পৈলান এলাকার ৫৬টি ছোট কারখানার মধ্যে ৪৭টি শ্রমিক ইউনিয়ন ২০১১-র বিধানসভা ভোটের পরে ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘের (বিএমএস) হাতে গিয়েছে। জেলার সব চেয়ে বড় রুটের (জুলপিয়া-বারুইপুর) অটো সংগঠনটিও দখল করেছে ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘের ইউনিয়ন। ওই রুটে প্রায় ২৫০টি অটো রয়েছে বলে ওই এলাকার বিজেপি নেতা অভিজিৎ দাসের (ববি) দাবি।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় তৃতীয় শক্তি হিসাবে বিজেপি-র এই উপস্থিতি টের পাচ্ছে সব রাজনৈতিক দলই। তবে তাদের মতামত ভিন্ন। জয়নগরের এসইউসি বিধায়ক তরুণ নস্কর অবশ্য মনে করছেন, পদ্মফুলের জন্য তাঁদের ভোটব্যাঙ্কে ধস নেই। তাঁর বক্তব্য, “শাসক দলের নানা আচরণে কিছু মানুষ বিজেপি-র দিকে চলে গিয়েছেন। তৃণমূল দলের ভোট বিজেপি পাচ্ছে। কিছু লোক বিভ্রান্ত।” জয়নগর এলাকার সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত, এসইউসি-র রাজ্য কমিটির সদস্য নন্দ কুণ্ডু বলেন, “ওই স্কুলটিতে বরাবরই এসইউসি-বিরোধী শক্তি জিতত।”
সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য তথা প্রাক্তন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের মতে, “সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে তৃণমূল সরকার। সেই কারণে শাসক দলের হিন্দু ভোট বিজেপি-র দিকে চলে গিয়েছে। এবং তার মাত্রা আরও বাড়বে।” এই পরিস্থিতিতে সিপিএমের বিক্ষুব্ধ কিছু সমর্থকও বিজেপি-র দিকে চলে যেতে পারেন বলে কান্তিবাবুর আশঙ্কা।
আবার প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য মনে করছেন, “বিজেপি হয়তো কিছু এলাকায় শক্তি অর্জন করেছে। আগেও করেছিল। তবে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ওই শক্তি অর্জনের খুব একটা প্রভাব পড়বে না।” বিজেপি-র উত্থানে আশঙ্কার কিছু দেখছে না তৃণমূলও। শাসক দলের ভোট বিজেপি-তে যাচ্ছে বলে সিপিএম-এসইউসি’র ব্যাখ্যা মানতে নারাজ দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের ভাইস চেয়ারম্যান শক্তি মণ্ডল। তাঁর বক্তব্য, “জেলার কয়েকটি জায়গায় বিজেপি-র অস্তিত্ব আছে। তবে তা পঞ্চায়েত ভোটে কোনও ভাবে প্রভাব ফেলবে না।” |