ম্যাচ শেষ।
মায়ের ফোন এল ‘কী রে, গোল করেছিস?’
ক্যানসার নিয়ে মা শুয়ে উত্তর ২৪ পরগনায় জগদ্দলের হাসপাতালে। ছেলে অভিষেক দেবনাথ বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল টিমের স্ট্রাইকার।
শুক্রবার পশ্চিমাঞ্চলের শিবাজি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে খেলা পড়েছিল বর্ধমানের। মা দীপা দেবনাথকে ভর্তি করিয়ে ছেলে নেমেছে মাঠে। আর ম্যাচের শেষেই এল মায়ের ফোন।
|
অভিষেক দেবনাথ।
—নিজস্ব চিত্র। |
এখন যে মূলপর্ব চলছে, তা শুরুর আগে পূর্বাঞ্চল বিশ্ববিদ্যালয় ফুটবলে চার গোল করেছিলেন অভিষেক। মূলপর্বেও ইতিমধ্যে একটি গোল করে ফেলেছেন শ্রীরামস্বামী মেমোরিয়াল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে। বর্ধমান দলে অনিল কিস্কুর পরে তাঁকেই অন্যতম ‘গোলমেশিন’ বলে ধরা হচ্ছে।
অভিষেক জানান, তাঁর বাবা গোরাচাঁদ দেবনাথ ওষুধের দোকানে কাজ করেন। মা-বাবা দুজনই খেলা ভালবাসেন। দারিদ্র্যের মধ্যেও সমস্ত প্রতিবন্ধকতা ঠেলে ছেলেকে কোচিং ক্যাম্পে ভর্তি করিয়েছিলেন। সেখানে দেখা হয় প্রাক্তন ফুটবল তারকা প্রশান্ত সিংহের সঙ্গে। তাঁর সুপারিশেই অভিষেক ঠাঁই পান কলকাতায় সাই কেন্দ্রে। ২০০৯ সালে সাইয়ের যে দল সর্বভারতীয় সুব্রত কাপ প্রতিযোগিতায় খেতাব জেতে, তাতে ১৪টি গোল করে টপ স্কোরার হন অভিষেকই। বার্ষিক ২০ হাজার টাকার বৃত্তি মেলে। কলকাতা পুলিশের হয়ে তিনি নিয়মিত প্রথম ডিভিশন ম্যাচে খেলছেন।
মা মারণ রোগের সঙ্গে লড়লেও হাল ছাড়েননি অভিষেক। মন্দের ভাল, চিকিৎসকেরা ভরসা দিয়েছেন যে দীপাদেবী বেঁচে যাবেন। যেখানেই অভিষেক খেলতে যান, তিনি রোজ ফোন করে জানতে চান, ‘গোল করলি?’ ছেলে ‘হ্যাঁ’ বললে খুব খুশি হন। কোনও মতেই অসুস্থ মাকে নিরাশ করতে চান না অভিষেক।
কিন্তু দিনটা অন্য রকম ছিল। এ দিনের ম্যাচে ২-০ গোলে জিতেছে বর্ধমান। কিন্তু অভিষেক গোল পাননি। যথারীতি খেলার শেষে মায়ের ফোন আসে ‘গোল করেছিস?’ কেঁদে ফেলেন অভিষেক। ‘না মা...। কিন্তু কাল আমি নিশ্চয়ই গোল করব। তোমার জন্য।” |