ইডেনে ভারত যে ভাবে খেলল, তা নিয়ে নিশ্চয়ই ওরা খুব হতাশ। বৃহস্পতিবার সকালে আমি যখন পিচ রিপোর্ট দিতে নেমেছিলাম, তখন আকাশ বেশ মেঘলা ছিল। কলকাতার শীতের দিন যেমন হয়ে থাকে মাঝে মধ্যে। তখনই বুঝে গিয়েছিলাম, আজ যে ক্যাপ্টেন টস জিতবে সে ফিল্ডিং নেবে। টিভি রিপোর্টে বলেও ছিলাম, টস হারলে সেটা লুকনো আশীর্বাদের মতো হবে। পাকিস্তানের জন্য যা হল। ম্যাচটা আগে শুরু হয়েছিল। আর মেঘলা পরিবেশে শিশিরের প্রভাব খুব একটা থাকে না। তা ছাড়া সন্ধে সাড়ে ছ’টা নাগাদ শিশির পড়া যখন শুরু হয় ততক্ষণে ভারত ম্যাচের বাইরে। শিশির ফ্যাক্টর কাজ করল না। আর পড়লও না।
পাকিস্তানের টসটা হেরে ভালই হল। ওদের ওপেনাররা ভাল ব্যাট করেছে। আকাশ মেঘলা থাকায় বল সুইং করেনি। আর তাই ভুবনেশ্বর কুমার আগের ম্যাচগুলোর মতো বল মুভ করাতে পারছিল না। তবে তাতে পাকিস্তানি ওপেনারদের কৃতিত্ব কমে না। অসাধারণ খেলেছে ওরা। প্রথম দিকে সময় নিয়েছে। ইডেনের আউটফিল্ড দ্রুত গতির হওয়ায় ভাল বলের বিরুদ্ধেও বাউন্ডারি পেতে অসুবিধে হয়নি। ব্যাটিংয়ের সময় খুব কমই সমস্যায় পড়েছে পাকিস্তান। তবে ওরাও নিশ্চয়ই নিজেদের ব্যাটিং নিয়ে হতাশ হবে। একটা সময় ১৪০-০ ছিল পাকিস্তান। সেখান থেকে তিনশো তোলা উচিত ছিল। উঠল আড়াইশো। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উইকেটটাও ব্যাট করার জন্য কঠিন হয়ে যাচ্ছিল কি না, বলা মুশকিল। ভারতীয় ব্যাটিং হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল। কিন্তু ধোনির সাংবাদিক সম্মেলনের কথা যদি বলতে হয়, শেষ পর্যন্ত পিচটা ব্যাটসম্যানদেরই ছিল। |
আমার মনে হয় দুটো দলই খুব ভাল বল করেছে। ভারত দ্বিতীয়ার্ধে, আর পাকিস্তান পুরো ইনিংসেই। এই পাকিস্তান বোলিংকে দুর্দান্ত বললেও কম বলা হয়। বিশেষ করে জুনায়েদ খান, যার কি না তেইশ বছর বয়সে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আড়াইশো উইকেট হয়ে গিয়েছে। আছে উমর গুল, যার বোলিং দেখা সব সময় একটা দুর্দান্ত ব্যাপার। এরা সবাই উইকেট নিতে পারে। ক্রিকেটের যে কোনও ফর্ম্যাটে। পাক স্পিনাররাও খুব ভাল করেছে। তবে সবচেয়ে যেটা আশ্চর্যের, সেটা হল ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা পাল্টা আক্রমণের কোনও রাস্তাতেই গেল না। আরও অনেক বেশি ইতিবাচক হওয়া উচিত ওদের। উল্টে দেখলাম ওরা প্রচণ্ড ডিফেন্সিভ। আর এমন একটা মানসিকতা নিয়ে ক্রিজে এল, যেন আড়াইশো খুব একটা বড় স্কোর নয়। পঞ্চাশ ওভার ক্রিজে থাকলেই জেতা যাবে। প্রত্যেকটা বলের মান বুঝে খেলা উচিত। পাকিস্তান বোলাররা ইডেনে নিজেদের সেরা বোলিং করেছে, তবু বলব, ভারতীয়রা কেমন গুটিয়ে গিয়েছিল। ওদের ব্যাটিং দেখে মনে হল আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভুগছে। গুলের অসাধারণ বলে সহবাগ ফিরতেই ভারতীয় ব্যাটিং আরও ঝামেলায় পড়ল।
ধোনিকে দেখলাম ব্যাটিং লাইন আপে আবার সেই নীচে নামছে। মনে রাখতে হবে, ও কিন্তু ফর্মে থাকা ব্যাটসম্যান। এ রকম পরিস্থিতিতে যে ফর্মে আছে, বা যে টিমের ক্যাপ্টেন, তার উচিত ব্যাটিং লাইন-আপে নিজেকে উপরে তুলে আনা। চেন্নাইয়ে ও অসাধারণ খেলেছিল। আমি এখনও বুঝতে পারছি না, ওকে কেন ২৯-৫ বা ৭০-৪ অবস্থায় ব্যাট করতে যেতে হবে। কেন ৪০-১ অবস্থায় ও যাবে না? আশ্চর্য লাগে ভাবলে যে, একজন এমন অসাধারণ প্রতিভাশালী হয়েও নিজের প্রতিভাকে কী ভাবে এত কম ব্যবহার করে! আমি এখনও বিশ্বাস করি যে, ভারতের মঙ্গলের জন্য ধোনির উচিত আরও উপরে ব্যাট করতে নামা। বিশেষ করে টিমে যখন এত তরুণ রয়েছে। ইশান্তকে নিয়ে শেষের দিকে ও যে ভাবে ব্যাট করছিল, সেটাও আমার ভাল লাগেনি। তখন মনোভাবটা হওয়া উচিত ছিলচল্লিশ ওভারে ম্যাচ হারতে হয় হারব। কিন্তু পাকিস্তান বোলারদের মাথায় চড়তে দেব না। দিল্লিতে রবিবার শেষ ওয়ান ডে-টায় ভারতকে অন্য ভাবে ভাবতে হবে। যে ভাবে খেলছে, সে সব অনেক দিন ধরেই কাজে আসছে না। |