মহড়াতেই হিমসিম
সাইকেল নিয়ে ছাত্রীদের র‌্যালি সভায়
সাইকেল মিলবে মুখ্যমন্ত্রীর সভায়। সেই সাইকেল হাঁটিয়ে মঞ্চের সামনে র‌্যালি করতে হবে ছাত্রীদের। তারই মহড়া নিয়ে শুক্রবার একপ্রস্থ নাটক হল মেদিনীপুর কলেজিয়েট মাঠেআজ যেখানে হাজির থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শুরুতে ঠিক ছিল, সভামঞ্চের উত্তর দিক থেকে হেঁটে সাইকেল নিয়ে এসে দক্ষিণ দিক দিয়ে মাঠের বাইরে বেরিয়ে যাবে ছাত্রীরা। সেই মতো সাইকেল নিয়ে ছাত্রীদের হাঁটানোও হল। এর জন্য কলেজ মাঠের পাঁচিলের একাংশ ভাঙা হল। যাতে বাইরে বেরোনোর পথ করা যায়। কিন্তু তারপরেই আচমকা সিদ্ধান্ত বদল। ঠিক হল, ছাত্রীরা মাঠের বাইরে বেরোবে না। বরং র‌্যালি শেষে তারা সভামঞ্চের পিছনে বসে মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠান দেখবে। সাইকেল র‌্যালির মহড়া নিয়ে সকাল থেকেই ব্যস্ত ছিলেন অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের জেলা আধিকারিক রাহুল নাথ। র‌্যালির গুরুদায়িত্ব কাঁধে নিয়ে নানা নিদের্শ দিচ্ছিলেন বারবার, “মুখে হাসি নেই কেন? কাল যেন সকলের মুখে হাসি থাকে। মঞ্চের কাছে এলে বাঁ হাতটা সাইকেলে থাকবে। ডান হাতটা নাড়তে হবে। সকলেই মুখ্যমন্ত্রীর দিকে তাকাবে”ইত্যাদি-ইত্যাদি। ছাত্রীরাও ভ্যাবাচ্যাকাকখন হাসবে, কখন হাত নাড়বে আর কখনই বা সাইকেল সামলাবে। প্রশাসনের এক আধিকারিক তো বলেই ফেললেন, “কাল যে কী হবে, কিছুই বুঝতে পারছি না। সামান্য ভুল হলেই গেল!”
মহড়া ঠিকঠাক চলছে কি না, তা দেখতে সকালে মাঠে এসেছিলেন এডিজি (আইবি) বাণীব্রত বসু, আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) গঙ্গেশ্বর সিংহ, ডিআইজি (মেদিনীপুর রেঞ্জ) লক্ষ্মীনারায়ণ মিনা, জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্ত, জেলা পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী প্রমুখ। মহড়া দেখতে দেখতে এক সময় সভামঞ্চের নীচে নেমে এসে জেলাশাসক মঞ্চে দাঁড়িয়ে থাকা ডিআইজিকে (মেদিনীপুর রেঞ্জ) বললেন, “মঞ্চ থেকে আপনি হাত নাড়ুন। তবেই তো ছাত্রীরা হাত নাড়বে।”
এই ভাবেই হাত নেড়ে হাঁটবে ছাত্রীরা। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
প্রায় ২৫০ জন ছাত্রী মহড়ায় যোগ দিয়েছিল এ দিন। ছিল একাদশ শ্রেণির সাগরিকা নাগ, দশম শ্রেণির স্বাতী নন্দী, নাসরিন আখতার’রা। সাগরিকা ও স্বাতী মেদিনীপুর সদর ব্লকের খয়েরুল্লাচক হাইস্কুলের ছাত্রী। নাসরিন মেদিনীপুরের এস এম আই হাইমাদ্রাসার দশম শ্রেণির ছাত্রী। তারা জানাল, স্কুলের নির্দেশেই মাঠে আসা। মহড়া শেষ হতে হতে দুপুর পার। ছাত্রীদের সঙ্গে আসা খয়েরুল্লাচক হাইস্কুলের সহ-শিক্ষক আশিসকুমার ঘোষ প্রশাসনের এক আধিকারিককে বলেই ফেললেন, “দুপুর হয়ে গেল। এ বার ওদের খিদে পেয়ে যাবে।” প্রত্যুত্তরে ওই আধিকারিকের আশ্বাস, “আর একটু। সব ঠিকঠাক দেখে না-নিলে....। আর একবারই র‌্যালি হবে। ওদের মিষ্টির প্যাকেট-জল দেওয়া হয়েছে। অসুবিধে হবে না।”
এক সময় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, মুখ্যমন্ত্রীর সভামঞ্চের সামনে দিয়ে সাইকেল চালিয়েই যাবে ছাত্রীরা। তবে সে ক্ষেত্রে অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটতে পারে, এই আশঙ্কায় সিদ্ধান্ত বদলে ফেলা হয়। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “সে ক্ষেত্রে একটি সাইকেল দাঁড়িয়ে গেলেই পরের সাইকেলগুলো দাঁড়িয়ে যেত। তখন বিপদ হয়ে যেত। তাছাড়া যারা র‌্যালিতে থাকছে, তাদের সকলে সাইকেল চালাতে জানে না।”
ইতিমধ্যেই সাইকেল র‌্যালি নিয়ে শহরে শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। এই ভাবে সাইকেল নিয়ে র‌্যালি করানোটা ‘নির্লজ্জ প্রচার’ বলে মত জেলার সিপিএম নেতৃত্বের। সিপিএমের শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ’র পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক অশোক ঘোষের কথায়, “সাইকেল নিতে এসে ছাত্রীরা মুখ্যমন্ত্রীর সামনে র‌্যালি করবে, এটা ভাবা যায় না। প্রচার সর্বস্ব সরকারই এমনটা করতে পারে। জঙ্গলমহলের ছাত্রীদের সাইকেল দেওয়া শুরু হয়েছিল বামফ্রন্টের আমলেই। তখন কিন্তু সরকার এ ভাবে প্রচার করেনি।” তবে তৃণমূল প্রভাবিত মাদ্রাসা শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী সমিতির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক মির্জা আজিবুর রহমান বললেন, “মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে বহু ছাত্রী সাইকেল পাচ্ছেন। এই নিয়ে সমালোচনা অনুচিত।” যদিও ওই সমিতিরই এক সদস্য মানছেন, “মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে ছাত্রীরা সাইকেলের চাবি নেবে, এত দূর ঠিক ছিল। র‌্যালির দরকার ছিল না।”
এর আগে জঙ্গলমহলের নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীদের সাইকেল দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকার। সেই মতো সাইকেল বরাদ্দ এবং বিলি হয়। যদিও সবাই সাইকেল পায়নি বলে অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে আবার সংখ্যালঘু ছাত্রীদের জন্য সাইকেল বরাদ্দ হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীরা সাইকেল পাবে। সংখ্যালঘু ছাত্রীদের জন্য ২ হাজার ৫৬০টি সাইকেল বরাদ্দ হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে খবর, রাজ্যে পালাবদলের আগে পশ্চিম মেদিনীপুরের জন্য ৪৭১৬টি সাইকেল বরাদ্দ হয়। তার মধ্যে বিলি হয়েছিল ৪৫৩৭টি। পালাবদলের পর আরও ১৩ হাজার ৫৩১টি সাইকেল বিলি হয়েছে। অর্থাৎ, জেলার জঙ্গলমহল এলাকায় এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ১৮ হাজার ৬৮টি সাইকেল বিলি হয়েছে। জঙ্গলমহল এলাকার ছাত্রীদের জন্য প্রয়োজন আরও ৮ হাজার ৭৭টি সাইকেল।
শনিবার যে ২৫০ জন ছাত্রছাত্রীর র‌্যালিতে থাকার কথা, তার মধ্যে প্রায় ১০০ জন সংখ্যালঘু। আর প্রায় ১৫০ জন জঙ্গলমহল এলাকার। যার একাংশ আবার তফসিলি জাতি-উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.