দিনের আলোয় কাজ হাসিল। রাতের আঁধারে ভাঁড়ে মা ভবানী। একের পর এক ডাকাতি ও ডাকাতির চেষ্টার এই হল খতিয়ান।
হাওড়া গ্রামীণ এলাকায় গত দিন কুড়ির মধ্যে গভীর রাতে তিনটি ব্যাঙ্ক এবং দু’টি সমবায় সমিতিতে হানা দেয় দুষ্কৃতীরা।
কিন্তু একটি ক্ষেত্রেও টাকা-পয়সা লুঠ করতে পারেনি তারা। অথচ বছর খানেক আগে দুষ্কৃতীরা দিনের বেলা বাগনানে দু’টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে হানা দেয়। দু’টি ক্ষেত্রেই দুষ্কৃতীরা ডাকাতি করতে সফল হয়। গ্রাহক এবং কর্মচারীদের দিকে আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে ভয় দেখিয়ে দু’টি ব্যাঙ্ক থেকে প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা লুঠ করে দুষ্কৃতীরা। একটি ক্ষেত্রে অবশ্য পালানোর সময়ে কয়েক জনকে পুলিশ ধরে ফেলে। তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার হয় লুঠের টাকাও। কিন্তু অন্য ব্যাঙ্কটির ক্ষেত্রে ডাকাতির ঘটনায় কাউকে ধরতে পারেনি পুলিশ। উদ্ধার হয়নি টাকা।
কিন্তু গত কয়েক দিনে রাতের অন্ধকারে পাঁচটি ক্ষেত্রে দুষ্কৃতীদের ‘ব্যর্থ অভিযান’ পুলিশের দুশ্চিন্তা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। জেলা (গ্রামীণ) পুলিশের এক কর্তা বলেন, “কয়েকটি ক্ষেত্রে রাতে ডাকাতি করতে এসে দুষ্কৃতীরা ব্যর্থ হয়েছে সত্যি। কিন্তু এখনও দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করা যায়নি। তারা আবার হানা দিতে পারে। সেই সম্ভাবনা প্রবল।” যা রুখতে জেলা জুড়ে নজরদারি অনেকটা বাড়ানো হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
গত ১১ ডিসেম্বর উদয়নারায়ণপুরের খিলায় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের লোহার শাটার কেটে দুষ্কৃতীরা ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করে। শাটার কাটার সময়েই তারা দূর থেকে দেখতে পায় পুলিশের টহলদার গাড়ি আসছে। দুষ্কৃতীরা দ্রুত চম্পট দেয়।
দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে ১৪ ডিসেম্বর শ্যামপুরের বাগান্ডায়। গভীর রাতে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে হানা দেয় দুষ্কৃতীরা। লোহার শাটার ভেঙে তারা ভিতরে ঢুকে পড়ে। কিন্তু লোহার সিন্দুকে হাত দেওয়া মাত্র সাইরেন বেজে ওঠে। স্থানীয় মানুষ চলে আসায় দুষ্কৃতীরা চম্পট দেয়।
১৮ ডিসেম্বর তৃতীয় অভিযানে জগৎবল্লভপুরের একব্বরপুরে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় হানা দেয় দুষ্কৃতীরা। গেট ভেঙে তারা ভিতরে ঢুকে পড়ে। কিন্তু ভল্ট কাটতে না-পেরে ফিরে যায়।
চতুর্থ ঘটনায় গত ২৩ ডিসেম্বর জগৎবল্লভপুরের পোলগুস্তিয়া প্রাথমিক কৃষি সমবায় সমিতিতে দুষ্কৃতীরা হানা দেয়। শাটার কেটে ঢুকেও সিন্দুক কাটতে পারেনি তারা।
শেষ ঘটনাটি ঘটে ২৬ ডিসেম্বর। উদয়নারায়ণপুরের পাঁচারুলের কাঁকরিপোলে একটি প্রাথমিক কৃষি সমবায় সমিতিতে ডাকাতির চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় দুষ্কৃতীরা।
কিন্তু রাতে দুষ্কৃতীদের রুখে দেওয়া গেলেও দিনের বেলায় ডাকাতির ঘটনা ঘটছে কী ভাবে?
জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, দিনের বেলা গ্রাহক সেজে ব্যাঙ্কে ঢুকে কর্মচারীদের ভয় দেখিয়ে টাকা লুঠ করে চম্পট দেওয়া সহজ।
কিন্তু রাতে নানা কারণে ‘সাফল্য’ পাচ্ছে না দুষ্কৃতীরা। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, এতে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে। দুষ্কৃতীদের ছক বানচাল করতে পুলিশও টহলদারি জোরদার করেছে। এখন রাতে ব্যাঙ্ক ও সোনার দোকানগুলিতে গাড়িতে চার বার করে টহল দিচ্ছে পুলিশ।
আগে দু’বার টহল দেওয়া হত। গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলিতে পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। সন্দেহজনক গাড়িগুলিতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। |