সিঙ্গুর-মামলার শুনানি পিছোল, চুপ অনেক অনিচ্ছুকই
ফের সুপ্রিম কোর্টে পিছিয়ে গেল সিঙ্গুর-মামলা। মামলার নিষ্পত্তি দ্রুত হবে না আঁচ করলেও সিঙ্গুরের অনেক ‘অনিচ্ছুক’ চাষিই যেন কেমন চুপচাপ।
শুক্রবার সর্বোচ্চ আদালতে মামলাটি উঠলে বিচারপতিরা রাজ্য সরকার এবং টাটা গোষ্ঠীর আইনজীবীদের জানান, সিঙ্গুর মামলায় দু’পক্ষের বক্তব্য শুনতে সময় লাগবে। জুলাই মাসে শুনানি শুরু হবে।
দুপুরেই এ খবর পৌঁছয় সিঙ্গুরের ‘অনিচ্ছুক’দের ঘরে-ঘরে। কিন্তু এ বার আর হতাশা বা চোখের জল দেখা যায়নি। শোনা যায়নি ‘আর কত ধৈর্য ধরতে হবে বলতে পারেন’ সুলভ প্রশ্নও। হাতে গোনা কয়েকজন অনিচ্ছুক কারখানার পক্ষে সওয়াল করেছেন। কিন্তু যাঁরা কিছু দিন আগেও জমির দাম ফেরত নিয়ে নেওয়ার কথা ভাবছিলেন, যাঁরা কৃষি প্রতিমন্ত্রী বেচারাম মান্নাকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন সিঙ্গুরের সেই ‘অনিচ্ছুক’দের একাংশ যেন হাবেভাবে বোঝাতে চাইলেন, ও সব নিয়ে আর ভাবছেন না। যা হওয়ার হবে।
যেমন, গোপালনগরের অসিত শী। টাটাদের প্রকল্পে তাঁর পরিবারের ১১ কাঠা জমি গিয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে জমি ফেরতের দাবিতে আন্দোলন করেছেন। সুপ্রিম কোর্টে সিঙ্গুর-মামলার শুনানি পিছিয়ে যাওয়া নিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া, “আমাদের যে ক্ষতি হচ্ছে তাতে সন্দেহ নেই। জমি ফেরত পেতে এত যে দেরি হবে কল্পনা করিনি। দেখি কী হয়!” বেড়াবেড়ি পূর্বপাড়ার আর এক ‘অনিচ্ছুক’ পরিবারের বধূ রেবতী মান্না মাসখানেক আগেও জমির দাম ফেরত নিয়ে নেওয়ার কথা ভাবছিলেন। কিন্তু শুক্রবার তাঁর কথাবার্তায় ধরা পড়ল উদাসীনতা, “যা হচ্ছে, হোক। এটা নিয়ে আর কিছু বলার নেই।”
সুকুমার পাত্র অরবিন্দ বাগ অসিত শী
গোপালনগর ঘোষপাড়ার আর এক ‘অনিচ্ছুক’ বৃদ্ধ এ দিন নামই বলতে চাইলেন না।
কোনও রাজনৈতিক চাপে কি এই উদাসীন আচরণ? ‘অনিচ্ছুক’রা এ প্রসঙ্গে মুখ খুলছেন না। তবে, সিঙ্গুরের সিপিএম জোনাল কমিটির সম্পাদক পাঁচকড়ি দাস মনে করছেন, “আসলে অনিচ্ছুকরা বুঝেছেন, আম (জমি) তো গিয়েছে। ছালাটা (সরকারি সাহায্য) যেন থাকে। তাই ওঁরা হয়তো সে ভাবে কোনও মন্তব্য করতে চাইছেন না।” তিনি বলেন, “আমরা তো বারবার বলছি, রাজ্য আদালতের বাইরে টাটাদের সঙ্গে আলোচনায় বসে সমস্যা মেটাক। অনিচ্ছুকরাও তাই চান।”
দেড় বছর আগে রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভার প্রথম সিদ্ধান্তই ছিল ‘অনিচ্ছুক’ চাষিদের জমি ফেরত দেওয়া। সে জন্য প্রয়োজনীয় আইনও তৈরি করে রাজ্য সরকার। সেই আইনকে চ্যালেঞ্জ করে টাটা মোটরস হাইকোর্টে মামলা দায়ের করে। গত বছরের মাঝামাঝি হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ সেই আইনকে ‘অসাংবিধানিক’ বলে রায় দেওয়ায় রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। ওই মামলায় রাজ্য সরকারের পক্ষের আইনজীবী অভিজিৎ ভট্টাচার্য এ দিন বলেন, “গত সেপ্টেম্বর মাসে সুপ্রিম কোর্টে মামলাটি দায়ের হয়। তার পর থেকে শুনানির দিনগুলিতে টাটা গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে সময় চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু এ বার কোনও পক্ষই সময় চায়নি। বিচারপতিরা নিজেরাই দীর্ঘকালীন শুনানির কথা জানিয়ে জুলাই মাসে সময় দিয়েছেন।”
কারখানার জন্য নেওয়া জমিতে কারখানার দাবিতে যাঁরা সওয়াল করেছেন তাঁদের মধ্যে গোপালনগরের পাত্রপাড়ার সুকুমার পাত্র বললেন, “জমির চরিত্র বদলে গিয়েছে। জমি এখন বালি-পাথরে ভর্তি। কারখানাটা হওয়া দরকার। তা হলে অন্তত দোকান বা অন্য কিছু করে পেট চালানো যাবে।” গোপালনগরেরই অরবিন্দ বাগ বলেন, “আদালতের বাইরে সমস্যা মিটে গেলেই ভাল হত। কারখানা হলেই ভাল।” প্রায় এই সূত্র ধরেই সিঙ্গুরের ‘বিদ্রোহী’ তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “আইনের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা দীর্ঘায়িত হবে। নতুন সমস্যাও দেখা দিতে পারে। আদালতের বাইরে টাটা গোষ্ঠীর সঙ্গে রাজ্য সরকার আলোচনা করে সমস্যা মেটালে চাষিদের সমস্যার সুরাহা হবে। রাজ্যের শিল্পে যে ‘ছায়া’ পড়েছে, দূর হবে তা-ও।”
সিঙ্গুরের জমি-আন্দোলনের অন্যতম ‘মুখ’ তথা রাজ্যের কৃষি প্রতিমন্ত্রী বেচারাম মান্না বলেন, “আমাদের বিশ্বাস, সুপ্রিম কোর্টের রায় গরিব মানুষের পক্ষেই যাবে। আদালত নিদের্শিত পথে ধৈর্য ধরতে হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.