আইন চাইছে কেন্দ্র |
১৬-র পরেই অপরাধী সাবালক
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
অপরাধের ক্ষেত্রে ১৬ বছর বয়স হলেই দোষীকে প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে গণ্য করে তার বিচার করা উচিত বলে মনে করে কেন্দ্র ও একাধিক রাজ্য সরকার। এখন ১৮ বছর বয়স হলে তবেই তাকে প্রাপ্তবয়স্ক বলে ধরা হয়। কিন্তু দিল্লি গণধর্ষণ কাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে সেই বয়সসীমা কমিয়ে ১৬ করার প্রস্তাব উঠেছে। শিশু অধিকার-আন্দোলনকারীরা এ বিষয়ে আপত্তি তুললেও এই প্রস্তাবে সায় রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারেরও।
দিল্লি গণধর্ষণকাণ্ডের ছয় অভিযুক্তের মধ্যে এক জন নিজেকে নাবালক বলে দাবি করেছে। স্কুলের শংসাপত্র অনুযায়ী তার বয়স এখন ১৭ বছর ৬ মাস। কিন্তু ২৩ বছরের তরুণীর উপর গণধর্ষণ এবং তার উপরে যৌন অত্যাচারে যে ভাবে সে অংশ নিয়েছে, তাতে পুলিশ-কর্তারাও বিস্মিত। পুলিশ সূত্রের বক্তব্য, ১৬ ডিসেম্বরের সেই রাতে ওই কিশোরও বাকি পাঁচজনের মতো মদ্যপ অবস্থায় ছিল। কিন্তু তার থেকেও বড় কথা ওই তরুণীর উপর সবচেয়ে বেশি অত্যাচার চালিয়েছিল সে-ই। এমনকী তরুণীকে দু’বার ধর্ষণও করেছিল সে। |
গণধর্ষণ-কাণ্ডে বিচার চেয়ে। শুক্রবার নয়াদিল্লিতে। |
অত্যাচারের পরে তরুণী ও তার বন্ধুকে বাস থেকে বাইরে ছুড়ে ফেলার ব্যাপারেও সবচেয়ে বেশি উদ্যোগী হয়েছিল সে। তরুণীর পরিবারের তরফেও দাবি ওঠেছে, বাকি পাঁচ জনের সঙ্গে ওই অভিযুক্তকেও ফাঁসিতে ঝোলানো হোক। ওই অভিযুক্তের বয়সপ্রমাণে শারীরিক পরীক্ষা করা হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা চান, অপরাধের ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্ক নির্ধারণের বয়সসীমা কমিয়ে আনা হোক। আজ মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে রাজ্যের মুখ্যসচিব ও পুলিশের ডিজি-দের সম্মেলনে উত্তরপ্রদেশের তরফে এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ুর মতো বেশ কয়েকটি রাজ্য এই প্রস্তাবে সমর্থনও জানিয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার শিন্দে বলেন, “এই প্রস্তাব কেন্দ্রীয় সরকার খতিয়ে দেখবে।” |
আগাম প্রস্তুতি: আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ নিচ্ছে মুম্বইয়ের স্কুল পড়ুয়ারা। |
দিল্লি গণধর্ষণ মামলায় গত কাল যে চার্জশিট পেশ করা হয়েছে, তাতে প্রধান অভিযুক্ত রাম সিংহ-সহ পাঁচ জনের নাম থাকলেও নিজেকে নাবালক বলে দাবি করা অভিযুক্তের নাম নেই। বর্তমান আইন অনুযায়ী তার বিচার হবে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে। সেখানেই পৃথক চার্জশিট পেশ হবে। তার বয়সের দাবি সত্যি হলে আইন অনুযায়ী তার সর্বাধিক তিন বছরের সাজা হতে পারে। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও সে কয়েক মাসের মধ্যে ছাড়া পেয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা পুলিশ-কর্তাদেরই। কারণ তার ১৮ বছর বয়স হয়ে যাওয়ার পরে সে যদি দোষী সাব্যস্ত হয়, তা হলে তাকে অন্য কিশোরদের সঙ্গে সংশোধন আশ্রমে রাখা যাবে না। আবার যাকে নাবালক ধরে নিয়ে বিচার হয়েছে, নাবালক বিচার আইন (জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্ট) অনুযায়ী তাকে জেলে পাঠানোরও নিয়ম নেই। আজকের সম্মেলনে তাই এই আইন পাল্টানোর দাবি উঠেছে।
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায় যুক্তি দিয়েছেন, একই মামলায় কয়েক জন অভিযুক্ত প্রাপ্তবয়স্ক, কয়েক জন নাবালক হলেও মামলার শুনানি একই সঙ্গে চলা উচিত। মানবাধিকার-কর্মীদের যুক্তি, দোষীদের সংশোধনই প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত।
|
ছবি: পিটিআই |
|