ধর্ষণে প্রাণদণ্ড চাইছে না কেন্দ্র, রাজ্যগুলিও
দিল্লির গণধর্ষণের পরে গোটা দেশ জুড়ে অপরাধীদের ফাঁসির দাবি উঠেছে। কিন্তু কেন্দ্র ও বেশির ভাগ রাজ্য সরকারই এই বিষয়ে একমত নয়। তারা চাইছে, আক্ষরিক অর্থেই আমৃত্যু জেলবাসের সাজার ব্যবস্থা হোক। বরং দ্রুত তদন্ত ও আইনি প্রক্রিয়া শেষ করার উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে। তাদের যুক্তি, ধর্ষণের ক্ষেত্রে ফাঁসির বিধান থাকলে অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করা আরও কঠিন হয়ে যাবে। এ দিন রাজ্যের মুখ্যসচিব ও পুলিশের ডিজিদের বৈঠকেও এই মনোভাবই স্পষ্ট হয়েছে। সেখানে পশ্চিমবঙ্গের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায় দাবি করেছেন, এ ক্ষেত্রে গ্রেফতার বাধ্যতামূলক করা হোক। বস্তুত, তাঁদের যুক্তি এ দিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তাদের প্রশংসা কুড়িয়েছে।
গত মাসে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ফৌজদারি দণ্ডবিধি সংশোধনের জন্য যে বিল পেশ করেছে, তাতে ধর্ষণের শাস্তি আমৃত্যু কারাদণ্ড করার সুপারিশ করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা এখনও সেই মতই পোষণ করছেন। তাঁদের বক্তব্য, আমৃত্যু কারাদণ্ড আক্ষরিক অর্থেই সারা জীবন হাজতবাস। কোনও ভাবেই তা লঘু হবে না বা দোষীদের প্যারোলেও ছাড়া হবে না। এর পাশাপাশি আইনের আরও কঠোর রূপায়ণ, দ্রুত তদন্ত ও আইনি প্রক্রিয়ার নিষ্পত্তি, আরও বেশি মহিলা পুলিশ-কর্মী নিয়োগ ও সার্বিক ভাবে পুলিশের মানসিকতা বদলের উপরে জোর দিতে চাইছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। খুব বেশি হলে ভয়ঙ্করতম ধর্ষণের অপরাধের ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে।
আজ পশ্চিমবঙ্গের তরফেও এই বিষয়টির উপরেই জোর দেওয়া হয়েছে। মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক কালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের মনোভাব নিয়ে একাধিক বার প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু নপরাজিতবাবু যুক্তি দিয়েছেন, তাঁরা এই সব ক্ষেত্রে কঠোর আইনেরই পক্ষপাতী। সরাসরি ফাঁসির পক্ষে সুপারিশ না করলেও ডিজি মনে করিয়ে দিয়েছেন, সাম্প্রতিক অতীতে পশ্চিমবঙ্গেই হেতাল পারেখ ধর্ষণ-খুনের অপরাধে ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের ফাঁসি হয়েছে। ২০০৯ সালে মালদহে এক কিশোরীর ধর্ষণ ও খুনের অপরাধীদের এক বছরের মধ্যেই ফাঁসির সাজা ঘোষণা হয়েছে। হাইকোর্ট দোষীদের বেকসুর খালাস করে দিলেও সেই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছে রাজ্য।
একই সঙ্গে সময়সীমা বেঁধে দিয়ে তদন্ত, চার্জশিট পেশ ও নির্যাতিতার মেডিক্যাল পরীক্ষার উপরে জোর দিয়েছেন নপরাজিত। তাঁর যুক্তি, মহিলাদের উপর নির্যাতনের অপরাধে অভিযুক্তদের জামিনে ছাড়া দেওয়ার বিষয়েও আইন আরও কঠোর করা হোক। ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৪১ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, যে সব অপরাধে সর্বাধিক সাজা ৭ বছরের কম, সেখানে পুলিশ চাইলে অভিযুক্তকে গ্রেফতার না-ও করতে পারে। নপরাজিতের দাবি, এই সব ক্ষেত্রে পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ ওঠে। তাই আইন সংশোধন করে গ্রেফতার বাধ্যতামূলক করা হোক। ডিজি-র সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিনিধিত্ব করেন রেসিডেন্ট কমিশনার ভাস্কর কুলবে।
দিল্লির ঘটনার পরে নাগরিক প্রতিবাদের মুখে এই মুহূর্তে প্রকাশ্যে এ নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ কেন্দ্র। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে তাই জানিয়েছেন, যে সব প্রস্তাব এসেছে, তা বিচারপতি জে এস বর্মা কমিটির কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তবে নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী কৃষ্ণ তিরথ জানিয়ে দিয়েছেন, “সব ক্ষেত্রেই মৃত্যুদণ্ড শাস্তি হলে অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করাই কঠিন হবে।” তাঁর আরও বক্তব্য, “কেমিক্যাল ক্যাস্ট্রেশন বা ওষুধের মাধ্যমে যৌন তাড়না নাশের প্রস্তাবও এসেছে। সেটাও বাস্তবসম্মত নয়।” তবে তিনি বলেছেন, ভয়ঙ্করতম অপরাধ, যেখানে নির্যাতিতা আর স্বাভাবিক জীবনযাপনের অবস্থাতেই নেই, সেখানে অবশ্যই মৃত্যুদণ্ডের শাস্তির বিধান থাকা উচিত। এ দিন বর্মার কমিটির কাছে সিপিএমের প্রতিনিধিদল তাদের প্রস্তাব পেশ করেছে। সেখানেও বিরলের মধ্যে বিরলতম ধর্ষণের ক্ষেত্রেই শুধু প্রাণদণ্ডের কথা বলা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব রাজকুমার সিংহের বক্তব্য, অভিযোগ দায়ের করা থেকে তদন্ত প্রক্রিয়া, সবটুকু যাতে সংবেদনশীল হয়, তার জন্য নতুন এসওপি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর) তৈরি হবে। এফআইআর না নিলে পুলিশ অফিসারকে সাসপেন্ড করার পক্ষে সওয়াল করেছেন তিনি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.