|
|
|
|
|
ব্রহ্মপুত্র মেল |
নিগ্রহ এড়াতে আগেও ঝাঁপ দিতে যান মহিলা
নিজস্ব প্রতিবেদন |
|
ক্রমাগত নিগ্রহের হাত থেকে বাঁচতে আগেই এক বার চলন্ত ট্রেন থেকে ঝাঁপ দিতে চেষ্টা করেছিলেন ব্রহ্মপুত্র মেলের ওই মহিলা যাত্রী। ট্রেনের এক সহযাত্রীই তাঁকে বাঁচান। অভিযোগ, তার পরেও তাঁর উপরে অত্যাচার চলে। নিরুপায় হয়ে তিনি চলন্ত ট্রেন থেকে ঝাঁপ দেন। বিহারের আরায় ব্রহ্মপুত্র মেলের ধর্ষণের চেষ্টার তদন্তে নেমে এই কথা জানতে পেরেছে বিহার রেল পুলিশ।
ওই ট্রেনেরই যাত্রী অসম রাইফেলসের জওয়ান এ ডি উপাধ্যায় জেরায় পুলিশকে জানিয়েছেন, অনেক ক্ষণ ধরেই ওই মহিলাকে উত্যক্ত করছিল কয়েক জন যাত্রী। পটনা ছাড়ার পরেই মহিলা এক বার ঝাঁপ দিতে যান। তখন তিনিই মহিলাকে বাঁচান। কিন্তু দ্বিতীয় বারে আর সফল হননি।
ঘটনার কথা জানার পরে উত্তরপ্রদেশের মির্জাপুরে ট্রেন থামিয়ে কামরার সহযাত্রী ও টিকিট পরীক্ষককে জেরা করেছে পুলিশ। সেখান থেকেই এই চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে। এই সময়ের মধ্যে কোনও টিকিট পরীক্ষক বা তার আগে ট্রেনে কর্তব্যরত কর্মীরা কেন পুলিশকে খবর দেননি, দেখা হচ্ছে। বিহার রেল পুলিশের আইজি বিনয় কুমার বলেন, “তথ্যে কিছু অসংলগ্নতা রয়েছে। কিন্তু এটা স্পষ্ট, মেয়েটির উপরে অত্যাচার হয়েছে।”
পুলিশ সূত্রের খবর, নিগৃহীতা ওই মহিলার মাথায় ও পায়ে গুরুতর আঘাত থাকায় পুলিশ তাঁর সঙ্গে বেশি কথা বলতে পারেনি। পটনা মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাঁর কথার মধ্যেও কিছুটা অসংলগ্নতা আছে। সেটি এই ঘটনার জন্য, না আগে থেকেই ছিল, তা বোঝা যাবে বাড়ির লোকজন পৌঁছনোর পরে।
উত্তরবঙ্গের এক পুলিশকর্তা জানিয়েছেন, “মহিলা কনস্টেবল-সহ পুলিশের একটি দল তরুণীর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিহার রওনা হয়েছে।” তার আগে পুলিশকে ওই মহিলা যা জানিয়েছেন, তা হল, দু’জন ব্যক্তি তাঁর উপরে চড়াও হয়েছিল। এর বেশি তিনি সঠিক ভাবে কিছু বলতে পারছেন না বলে রেল পুলিশ থেকে দাবি করা হয়েছে। ফলে ওই ঘটনার সবিস্তার তথ্য এখনও পুলিশ জানতে পারেনি।
তবে বৃহস্পতিবার রাতেই ওই ঘটনায় অভিযুক্ত সন্দেহে জম্মু ও কাশ্মীর রাইফেলসের এক জওয়ানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার নাম রমেশ কুমার। বাড়ি হিমাচল প্রদেশে। তাঁর সঙ্গী দীনেশ টোঙ্গিয়াল নামের এক যুবককে শুক্রবার সকালে গ্রেফতার করা হয়। দীনেশের বাড়িও হিমাচল প্রদেশে। সে পটনায় একটি স্কুলে অধ্যক্ষের গাড়ি চালাত। শুক্রবার আরার এক কোর্টে তোলা হলে দু’জনকে ১৪ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া দিয়েছে। বৃহস্পতিবার ট্রেনটি বক্সার ছেড়ে কানপুরে পৌঁছলে রমেশের সঙ্গী আরও চার জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদেরও কানপুর থেকে বক্সার নিয়ে আসা হচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত ওই চার জনও জওয়ান। তারা অরুণাচলে কর্মরত। ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছিল।
রমেশ কুমার অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। রেল পুলিশের এডিজি পারশনাথ রায় এ কথা জানিয়ে বলেন, “সে দাবি করেছে, ওই মহিলার সঙ্গে সে কিছুই করেনি।” ধৃতেরা জেরায় এ-ও দাবি করেছে যে, ওই মহিলা কেন ট্রেন থেকে ঝাঁপ দিলেন, তারা জানে না। রেল পুলিশ জানিয়েছে, বক্সার এবং আরা, দু’জায়গাতেই এই ঘটনার এফআইআর করা হয়েছে।
রেল সূত্রের খবর, ওই মহিলার বাড়ির লোক জন জানিয়েছেন, গত ১৯ ডিসেম্বর তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। তার পর থেকে আর তাঁর কোনও খোঁজ ছিল না। পূর্ব-মধ্য রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক অমিতাভ প্রভাকর বলেন, “ওই মহিলার কাছ থেকে কোনও টিকিট পাওয়া যায়নি। তাঁর নামে কোনও আসনও সংরক্ষণ করা ছিল না।” তাঁর পরিজনরা পুলিশকে জানান, বছর পাঁচেক আগে বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়ার পর থেকে ওই মহিলা তাঁর দুই ছেলেকে নিয়ে উত্তরবঙ্গে বাপের বাড়িতে থাকেন। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি ভিন্ রাজ্যের এক বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। ছুটি কাটাতে ডিসেম্বরে তিনি বাড়ি এসেছিলেন। ফের কর্মস্থলে যাওয়ার পথে এই ঘটনা।
উত্তরবঙ্গের একটি রাজনৈতিক সংগঠনর পশ্চিমবঙ্গের স্বরাষ্ট্রসচিবকে ফোন করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছে। তাদের আরও দাবি, তরুণীর চিকিৎসার দায়িত্ব নিতে হবে পশ্চিমবঙ্গ ও বিহার সরকারকে। |
|
|
|
|
|