কলকাতা পুরসভায় কী ভাবে মিড-ডে মিলের চাল লোপাট হল, তথ্য-সহ সাত দিনের মধ্যে তা জাননোর জন্য সংশ্লিষ্ট অফিসারদের নির্দেশ দিয়েছে পুর-প্রশাসন। যাঁদের গাফিলতিতে ওই ঘটনা ঘটেছে, তাঁদের সাসপেন্ড করা হবে বলে শুক্রবার পুরসভা সূত্রে জানানো হয়। ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না-ঘটে, সেই ব্যাপারে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে পুরসভার শিক্ষা দফতরকে।
তবে ওই চাল লোপাটের ঘটনা কোন আমলে ঘটেছে, তা নিয়ে মতবিরোধের মীমাংসা এখনও হয়নি। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় এ দিন বলেন, “বাম আমলে ওই ঘটনা ঘটেছে।” কিন্তু এই অভিযোগ মানতে রাজি নন প্রাক্তন বাম মেয়র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। পুরসভার এক পদস্থ অফিসার জানান, চালের প্রামাণ্য নথি মিললেই সব কিছু জানা যাবে। তাই প্রাসঙ্গিক সমস্ত তথ্য চাওয়া হয়েছে অফিসারদের কাছে।
পুরসভার গুদাম থেকে মিড-ডে মিলের ৯০৯৩ কুইন্টাল চাল উধাও হওয়ার খবর প্রকাশিত হতেই এই নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে পুরসভার অন্দরমহলে। বিষয়টির গুরুত্ব বুঝে এ দিন উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক ডাকা হয় পুরসভায়। হাজির ছিলেন মেয়র-পারিষদ (শিক্ষা) শশী পাঁজা, পুর কমিশনার খলিল আহমেদ, যুগ্ম পুর কমিশনার তাপস চৌধুরী এবং পুরসভার অর্থ ও শিক্ষা দফতরের আধিকারিকেরা। পুর সচিবালয়ের এক পদস্থ আধিকারিক জানান, চাল উধাওয়ের সময় পুর শিক্ষা বিভাগ ছিল তৎকালীন যুগ্ম কমিশনার সইদুল ইসলামের অধীনে। তিনি সম্প্রতি বদলি হয়ে গেলেও তাঁকে এ দিনের বৈঠকে ডাকা হয়েছিল।
মেয়র-পারিষদ (শিক্ষা) শশীদেবী বলেন, “কেন ওই চালের হিসেব রাখা হয়নি, তার জবাব দিতে হবে সংশ্লিষ্ট অফিসারদেরই।” চাল লোপাট হল কী ভাবে, এ দিনের বৈঠকে তৎকালীন চিফ ম্যানেজার (শিক্ষা)-এর কাছে তা জানতে চান পূর্বতন যুগ্ম কমিশনার। তবে সদুত্তর মেলেনি বলে পুর সচিবালয় সূত্রের খবর। বৈঠকের শেষে পুর কমিশনার নির্দেশ দেন, কী করে অত চাল বেরিয়ে গেল, এক সপ্তাহের মধ্যে নথিপত্র পেশ করেই তা জানাতে হবে সংশ্লিষ্ট অফিসারদের।
ওজন ছাড়া গুদামে চাল দেওয়া ও নেওয়ার কাজ হত কী ভাবে, সেই বিস্ময় প্রকাশ করা হয় এ দিনের বৈঠকে। প্রশ্ন ওঠে, শীর্ষ স্তরের অফিসারেরাই বা এটা দেখেননি কেন? কেন বছরের পর বছর দেখা হয়নি গুদামের রেজিস্ট্রার? বৈঠকের পরে শশীদেবী জানান, কোনও কোনও অফিসার নিজস্ব ডায়েরির হিসেব দেখিয়ে চালের গরমিল মেলানোর চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু ব্যক্তিগত ডায়েরির ওই হিসেব যে মানা হবে না, সেটা তাঁদের দেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, দু’জন অফিসার ইতিমধ্যে অবসর নিয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে তাঁদেরও। |