লোকসানে নাভিশ্বাস, সামলাতে ভাড়া বৃদ্ধি হতে পারে মেট্রোয়
ছরের পর বছর ধরে চেপে বসা লোকসানের বোঝা হাল্কা করার পাশাপাশি আয় বাড়িয়ে পরিষেবাকে চাঙ্গা করার লক্ষ্যে কলকাতার মেট্রো রেলে যাত্রিভাড়া বৃদ্ধির চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছে রেল মন্ত্রক। বাড়তি স্বাচ্ছন্দ্য, সময়ানুবর্তিতা ও সুষ্ঠু পরিষেবা জোগানোর স্বার্থে মেট্রোর ভাড়া বাড়াতে হলে তাতে অযৌক্তিক কিছু দেখছেন না যাত্রীদের একাংশও।
আগামী বাজেটে রেলের সব শ্রেণিতে যাত্রিভাড়া বাড়ানোর ইঙ্গিত ইতিমধ্যে দিয়ে রেখেছেন রেলমন্ত্রী পবন বনশল। কিন্তু বাজেট পর্যন্ত অপেক্ষা করতেও মন্ত্রকের একাংশের আপত্তি। তাদের দাবি, লোকসানে মুমূর্ষু মেট্রোকে বাঁচাতে এখনই ভাড়া বাড়ুক। যদিও তেমন সম্ভাবনা খুব একটা দেখছে না রেল বোর্ডের একটি বড় অংশ। “আগামী বাজেটে রেলের সব শ্রেণিতে ভাড়া বাড়তে চলেছে। তাই এখন না-হলেও বাজেটের সময়ে কলকাতা মেট্রোয় ভাড়া-পুনর্বিন্যাস মোটামুটি নিশ্চিত বলা যায়।” মন্তব্য এক রেল-কর্তার।
রেলভবনের খবর: কলকাতা মেট্রোর আর্থিক হাল যে কত নড়বড়ে, পরিসংখ্যান সহকারে সেই ছবিটা মন্ত্রকের কর্তাদের সামনে গত সপ্তাহে তুলে ধরেন সংস্থার জেনারেল ম্যানেজার রাধেশ্যাম। তিনি জানান, এখন কলকাতা মেট্রোয় ন্যূনতম দূরত্ব যেতে (পাঁচ কিলোমিটার) লাগে ৪ টাকা। স্মার্ট কার্ডে গড়ে মাত্র ২ টাকা ১৯ পয়সা। অথচ একই শহরে সরকারি-বেসরকারি বাসে একই দূরত্ব যেতে গুনতে হয় ৬ টাকা! বেঙ্গালুরুতে প্রথম পর্যায়ে চালু হওয়া মেট্রো পরিষেবায় ন্যূনতম ভাড়া ১০ টাকা, স্মার্ট কার্ডে গড়ে সাড়ে আট। দিল্লির মেট্রো রেলে ন্যূনতম দূরত্ব যেতে এক জনের খরচ হয় ৮ টাকা। স্মার্ট কার্ড থাকলে গড়ে ৭ টাকা ২০ পয়সা!
ফলে সময়ের সঙ্গে পরিষেবার ন্যায্য মূল্য আদায় করে দিল্লি মেট্রো যেখানে লাভের মুখ দেখছে, নিত্যনতুন জায়গায় সম্প্রসারিত হচ্ছে তার শাখা-প্রশাখা, সেখানে ভাড়া-স্থবির কলকাতা মেট্রো দিনকে দিন ন্যূব্জ হয়ে পড়ছে লোকসানের ভারে। টাকার অভাবে রক্ষণাবেক্ষণ মার খাচ্ছে, পরিণামে মাঝে-মধ্যে ব্যাহত হচ্ছে পরিষেবা।
মূল্যে বৈষম্য
শহর ন্যূনতম ভাড়া
সাধারণ স্মার্ট কার্ড
দিল্লি ৭.২০
বেঙ্গালুরু ১০ ৮.৫০
কলকাতা ২.১৯
* অঙ্ক টাকায়। স্মার্ট কার্ডে গড় হিসেব
পরিস্থিতি এমনই যে, নিত্যযাত্রীদের অনেকেও চাইছেন, প্রয়োজনে ভাড়া কিছুটা বাড়িয়ে পুরনো গরিমা ফিরিয়ে আনুক কলকাতা মেট্রো। বিষয়টি নিয়ে রাধেশ্যাম রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীর কাছেও দরবার করেছেন। কী বলছেন অধীরবাবু?
মেট্রোর ভাড়া বৃদ্ধি যে প্রয়োজন, অধীরবাবু তা মানছেন। তবে এ-ও বলছেন, “এমন ভাবে ভাড়া বাড়াতে হবে, যাতে যাত্রীদের উপরে চাপ না-পড়ে।” রেলের ভাড়া সংক্রান্ত কমিটির (রেল ট্যারিফ রেগুলেটরি অথরিটি) পরামর্শ নিয়েই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
বস্তুত আমজনতার উপরে ‘চাপ ঠেকাতেই’ লালুপ্রসাদ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হয়ে মুকুল রায় আগের রেলমন্ত্রীরা অধিকাংশই ভাড়াবৃদ্ধির পথ যথাসম্ভব পরিহার করেছেন। তাই দশ বছরে দূরপাল্লার ট্রেনে ভাড়া বাড়েনি, মেট্রো-ভাড়াতেও হাত পড়েনি। এমনকী, ট্রেনের যাত্রিভাড়া বাড়িয়ে মমতার কোপে পড়েন তদানীন্তন রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী। তাঁকে মন্ত্রিত্ব ছাড়তে হয়েছে, ফেরানো হয়েছে ভাড়াবৃদ্ধির প্রস্তাব। আর জনপ্রিয়-নীতির মাসুল গুনতে
গিয়ে মেট্রোর ঘাড়ে ক্ষতির পাহাড় জমলেও যুক্তি দেওয়া হয়েছে, সব দেশেই মেট্রো ক্ষতিতে চলে, কলকাতা ব্যতিক্রম হবে কেন?
এ বার পরিস্থিতির বদল চাইছে রেল মন্ত্রক। যে কারণে ভাড়া পুনর্বিন্যাসের ভাবনা। মমতা রেলমন্ত্রী থাকাকালীন দিল্লির ধাঁচে কলকাতা জুড়ে মেট্রো রেলকে ছড়িয়ে দিতে একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন, যা রূপায়ণের জন্য মেট্রো রেলকে আলাদা একটা জোন হিসেবে গঠনের ঘোষণা করেন তিনি। রেলভবনের কর্তাদের আশঙ্কা, অবিলম্বে আয় বাড়াতে না-পারলে পরিষেবায় বিঘ্নের পাশাপাশি সম্প্রসারণ-প্রকল্প রূপায়ণেও বিস্তর সমস্যা হতে পারে।
উল্লেখ্য, মমতার আমলে ঘোষিত সেই প্রকল্পগুলো কী অবস্থায় রয়েছে, তা জানাতেই গত সপ্তাহে কলকাতা মেট্রোর জেনারেল ম্যানেজার দিল্লি এসেছিলেন। এবং সেই প্রসঙ্গেই তিনি দিয়ে গিয়েছেন আর্থিক দুরবস্থার বর্ণনা। রেল মন্ত্রকের তথ্য: বর্তমানে কলকাতা মেট্রোয় একশো টাকা আয় করতে গেলে খরচ হচ্ছে প্রায় তিনশো। গত অর্থবর্ষে আয় হয়েছে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার তিন হাজার কোটি টাকা কম। চলতি অর্থবর্ষে লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে আরও প্রায় চার হাজার কোটি টাকা দরকার, হাতে সাকুল্যে তিন মাস। এ বছরও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের আশা কার্যত ছেড়ে দিয়েছেন কর্তারা। যাত্রী কিন্তু বেড়েছে যথেষ্ট।
অতএব যাত্রিভাড়া বাড়ানো ছাড়া মেট্রো বাঁচানোর আর কোনও পথ নেই বলেই মনে করছে রেল মন্ত্রক।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.