বর্ষার সময়ে কোন মাসে কতটা বৃষ্টি হবে তার আগাম পূর্বাভাস এখনও দিতে পারছে না কেন্দ্রীয় আবহবিজ্ঞান দফতর। কী ভাবে এই পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব তা নিয়ে এ বার বিশ্বের বিজ্ঞানীদের মতামত চাইল কেন্দ্রীয় সরকার। এ নিয়ে গবেষণার জন্য অর্থ বরাদ্দও করতে চায় ভূবিজ্ঞান মন্ত্রক।
বর্ষার চার মাসে কত বৃষ্টি হবে তার পূর্বাভাস প্রতি বছরই মোটামুটি মিলিয়ে দেয় মৌসম ভবন। কিন্তু জুন, জুলাই কিংবা অগস্ট মাসে আলাদা আলাদা ভাবে কত বৃষ্টি হবে তার সঠিক পূর্বাভাস এখনও দিতে পারছেন না আবহবিজ্ঞানীরা। গত কয়েক বছরের তথ্য বলছে, অক্টোবরের শেষে অঙ্কের হিসেবে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ মিলে গেলেও জুন, জুলাই বা অগস্ট মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টি হচ্ছে না।
এর ফলে কী হচ্ছে?
কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রকের তথ্য বলছে, স্বাভাবিক বর্ষার পূর্বাভাস পেয়ে জুন মাস থেকেই কৃষকেরা জমি তৈরি করে আকাশের দিকে তাকিয়ে বসে থাকছেন। কিন্তু তেমন বৃষ্টি হচ্ছে না। আর মাঝ-অগস্ট থেকে বৃষ্টি সব ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রথম দেড় মাসের বর্ষার ঘাটতি মিটিয়ে দেয় পরের দেড় মাস। যার ফলে মরসুমের শেষে বৃষ্টির হিসেব মিলে গেলেও মার খাচ্ছে কৃষি উৎপাদন। ক্ষতির মুখে পড়ছেন কৃষকেরা। আর এর প্রভাব পড়ছে জাতীয় অর্থনীতিতে। চলতি মরসুমেও এর ব্যতিক্রম হয়নি।
কেন বর্ষার সময়ে মাস ভিত্তিক বৃষ্টির দীর্ঘকালীন পূর্বাভাস দেওয়া যাচ্ছে না, তা নিয়ে অনেকেই
ইতিমধ্যে প্রশ্ন তুলেছেন। শুক্রবার ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের একটি মঞ্চে ফের একই প্রশ্নের মুখে পড়লেন কেন্দ্রীয় ভূবিজ্ঞান মন্ত্রকের সচিব শৈলেশ নায়ক। আমেরিকার জর্জ ম্যাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহবিজ্ঞানী জগদীশ শুক্লর অভিযোগ, ভারতে এত দিন যে পদ্ধতিতে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হত তাতে প্রযুক্তিগত ত্রুটি রয়েছে। তাই সেই পূর্বাভাস তৃণমূল স্তরে পৌঁছচ্ছে না। তাঁর দাবি, এর সমাধানে নতুন ‘মডেল’ প্রয়োজন।
এমআইটি-র সেন্টার ফর গ্লোবাল চেঞ্জ অব গ্লোবাল সায়েন্স- এর অধিকর্তা রোলান্ড প্রিন যথাযথ আবহাওয়া পূর্বাভাসের জন্য বিশ্ব উষ্ণায়নের উপরে কড়া নজরদারির প্রয়োজন রয়েছে বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, “প্রকৃতিতে যে সব পরিবর্তন হচ্ছে তার একটির সঙ্গে অন্যটির সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। আর সব কিছুই জড়িয়ে রয়েছে আবহাওয়ার পূর্বাভাসের সঙ্গে।” শুক্ল বলেন, “বিশ্বে বর্তমানে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার যে ২৩টি মডেল কার্যকর রয়েছে তাদের সম্মিলিত বিশ্লেষণ, আগামী ৫০ বছরে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়বে। পাশাপাশি বাড়বে বর্ষার বৃষ্টিও।” কিন্তু বর্ষার চারমাস ধরে সেই বৃষ্টির সামঞ্জস্য থাকবে কি না, শুক্লের বক্তব্য থেকে সেই প্রশ্নের জবাব মেলেনি।
ভূবিজ্ঞান মন্ত্রকের সচিব সুশীল নায়ক অবশ্য দাবি করলেন, এ দেশে এখন আবহাওয়ার পূর্বাভাসে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে তা যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্য। সুপারকম্পিউটারের মাধ্যমে বিশ্বের নানা জায়গার জলবায়ু পরিবর্তনের হালহকিকত বিশ্লেষণ করে বর্ষার দীর্ঘকালীন পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। কোন বছর কম বৃষ্টি অথবা খরা হবে, তা-ও আগে থেকে বলে দেওয়া যাচ্ছে। তবে এ সব সত্ত্বেও বর্ষার কোন মাসে কতটা বৃষ্টি হবে তার সঠিক পূর্বাভাস দেওয়া যাচ্ছে না, সেটা স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি।
এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় কী?
নায়ক বলেন, “বিশ্বের সব বিজ্ঞানী, গবেষকদের এ ব্যাপারে আমাদের পথ দেখানোর জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। ওঁরা প্রয়োজন হলে আমাদের এখানে কাজ করুন। আমরা এর জন্য অর্থ বরাদ্দ করতেও প্রস্তুত।” |