টাকার অভাবে কোচবিহার জেলায় একশো দিনের প্রকল্পের কাজ কার্যত শিকেয় উঠেছে বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর। এতে জেলার রাস্তা তৈরি, পুকুর খনন, সবুজায়ন, নর্দমা তৈরির মত অনন্ত সাড়ে ৪ হাজার প্রকল্পের কাজ ব্যহত হয়ে পড়েছে। এতে প্রশাসনের জবকার্ডধারীদের কাজ দেওয়ার দিন সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনাকে ঘিরে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
পরিস্থিতি সামলাতে দ্রুত আর্থিক বরাদ্দ দেওয়ার ব্যাপারে রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের আর্জি জানিয়েছেন কোচবিহারের বাসিন্দা তথা বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন। বনমন্ত্রী বলেন, “আর্থিক বরাদ্দ দেওয়ার ব্যাপারে পঞ্চায়েত মন্ত্রীর সঙ্গে সোমবার কথা বলেছি। কেন্দ্রীয় সরকার ঠিকমতো বরাদ্দ না দেওয়ায় সমস্যা হচ্ছে বলে উনি জানিয়েছেন। কেন্দ্রীয় বরাদ্দ এলেই টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন পঞ্চায়েত মন্ত্রী।” জেলাশাসক মোহন গাঁধী বলেন, “প্রকল্পের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আর্থিক বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ এলেই ফের কাজ শুরু হয়ে যাবে।” প্রশাসন সূত্রের খবর, জেলায় ১০০ দিনের প্রকল্পের জন্য ৫ লক্ষ ৯১ হাজার বাসিন্দার জবকার্ড রয়েছে। তারমধ্যে ২ লক্ষ জবকার্ডধারী কাজের আবেদন জানান। তাঁদের সকলকেই গত ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত গড়ে ২০ দিন কাজ দেওয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে প্রকল্পে খরচ হয়েছে ৬৫ কোটি টাকা। অক্টোবর মাসে শেষবার ১১ কোটি টাকা আর্থিক বরাদ্দ দেওয়া হয়। তার পরে ৫০ হাজার জবকার্ডধারীর প্রায় ১০ কোটি টাকা কাজের বকেয়া পড়ে রয়েছে। নতুন করে আর্থিক বরাদ্দ না আসায় প্রকল্পের কাজ ব্যাহত হয়ে পড়েছে। গত ২০১১ সালে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত জেলায় আগ্রহী জবকার্ডধারীদের গড়ে ১৭ দিন কাজ দেওয়া হয়। আর্থিক খরচের পরিমাণ ছিল ৩৮ কোটি টাকা। তুফানগঞ্জ মহকুমা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, তুফানগঞ্জ-১ ব্লকে ২০১১ আড়াই কোটি টাকা খরচ করা হয়। সেখানে ২০১২ সালের ডিসেম্বর অবধি ৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। তার পরে দেড় কোটি টাকার প্রকল্প তৈরি হয়েছে। কিন্তু টাকার অভাবে কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। একই অবস্থা মাথাভাঙা, দিনহাটা, মেখলিগঞ্জ মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকাতেও। জেলা প্রশাসনের কয়েকজন কর্তা জানান, গত অক্টোবর প্রকল্পের ৮৫ শতাংশ খরচের ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট পাঠানো হয়েছে। দুই মাস আগে প্রাথমিকভাবে জেলার জন্য ২০ কোটি টাকা আর্থিক বরাদ্দ চাওয়া হয়। কবে টাকা পাওয়া যাবে সেটাও কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না।
জেলার মাথাভাঙার পচাগড় গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান কাজল রায় বলেন, “গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে আমাদের হাতে এক টাকাও নেই। নতুন প্রকল্প এবং অসম্পূর্ণ প্রকল্পের জন্য ৩৭ লক্ষাধিক টাকার বরাদ্দ চেয়ে আর্জি জানানো হয়েছে। কিছুই হচ্ছে না। এইভাবে চললে তো প্রকল্প জেলার মুখ থুবড়ে পড়বে।” |