তান্ত্রিকের সঙ্গে সহবাসে বাধ্য হয়ে আত্মঘাতী বধূ
স্বামীর অসুখ সারাতে বন্ধ ঘরে পুজো করছিল তান্ত্রিক। সেই পুজোর নামে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তিন দিন ধরে সেই তান্ত্রিকের সঙ্গে সহবাসে বাধ্য করায় আত্মঘাতী হয়েছেন এক গৃহবধূবুধবার জলপাইগুড়ির কুমারগ্রাম থানায় মৃতার মায়ের এমনই অভিযোগের ভিত্তিতে স্বামী-সহ শ্বশুরবাড়ির চার জনকে ধরেছে পুলিশ। ধৃতদের বিরুদ্ধে ধর্ষণে মদত দেওয়া, বধূ নির্যাতন এবং আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা হয়েছে। পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, “ওই তান্ত্রিকের খোঁজ চলছে।” পুলিশ সূত্রের খবর, অভিযুক্ত তান্ত্রিক অসম বা মেঘালয়ের বাসিন্দা।
বছর আটত্রিশের বধূটির বাপের বাড়ি শামুকতলা থানা এলাকায়। ১৩ বছর আগে তাঁর সঙ্গে কুমারগ্রামের গাড়িচালক সুকুমার রায়ের বিয়ে হয়। দম্পতির ৮ ও ১০ বছরের দু’টি মেয়ে রয়েছে। মাস তিনেক আগে ডান কুঁচকিতে টিউমার হয় সুকুমারের। ডাক্তার এবং ওষুধ বদলেও তা সারেনি। গাড়ি চালানো ছেড়ে বাড়িতে বসেছিলেন তিনি। সুকুমারের অবিবাহিত বোন দ্রৌপদী নাম সংকীর্তন করেন। সেই সুবাদে পরিচিতদের সাহায্যে ১৩ ডিসেম্বর এক তান্ত্রিককে বাড়িতে আনেন তিনি।
পুলিশের কাছে অভিযোগে ওই বধূর মা জানান, সেই তান্ত্রিক সুকুমারকে সারাতে তিন দিন পুজো করার বিধান দেয়। পুজোর সময় দরজা বন্ধ করে সুকুমারের স্ত্রী-কে সঙ্গে রাখবে বলেও জানায়। শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাতে আপত্তি না করে উল্টে তান্ত্রিককেই সাহায্য করেছিল। ১৪ ডিসেম্বর থেকে পুজো শুরু হয়। ১৭ ডিসেম্বর বন্ধ ঘরের দরজা খুলে বেরিয়ে বধূটি শ্বশুরবাড়ির লোকেদের জানান, স্বামীকে সুস্থ করার আশ্বাস দিয়ে তান্ত্রিক জোর করে তাঁর সঙ্গে সহবাস করেছে। মেয়েটির মায়ের ক্ষোভ, “শ্বশুরবাড়ির লোকেরা সে কথা শুনেও কিছুই করেনি। তান্ত্রিক দিব্যি পালিয়ে যায়। লোকলজ্জার ভয়ে ওই দিনই মেয়ে গায়ে আগুন দেয়।”
অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় বধূটিকে প্রথমে আলিপুরদুয়ার হাসপাতাল পরে সেখান থেকে কোচবিহার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। গত ২৮ ডিসেম্বর সেখানে তিনি মারা যান। মৃত্যুকালীন বয়ানে মেয়ে তাঁকে এ সব জানিয়েছেন বলে পুলিশের কাছে করা অভিযোগে উল্লেখ করেছেন তাঁর মা। তাঁর দাবি, মেয়ে হওয়ায় তাঁর মেয়ের উপরে অত্যাচার করত শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। বাপেরবাড়ি থেকে টাকাপয়সা আনার জন্যও তাঁকে নিগ্রহ করা হত। বছর তিনেক আগে অপয়া অপবাদে বাপের বাড়ি পাঠানো হয় বধূটিকে। এক বছর আগে তিনি শ্বশুরবাড়িতে ফিরলেও পরিস্থিতি বদলায়নি। এমনকী, স্বামীর অসুস্থতার জন্যও তাঁকে দায়ী করা হচ্ছিল। বধূটির মায়ের কথায়, “মেয়ের শ্বশুরবাড়ি আরও টাকা চাইছিল। আমার দিনমজুর স্বামী অসুস্থ থাকায় ওই দাবি মেটাতে পারিনি। তাই অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যায়। যারা এই অকথ্য অত্যাচার চালিয়েছে তাদের শাস্তি হোক।” কুমারগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান নির্মলচন্দ্র বর্মন বলেন, “অভিযুক্তদের কঠিন শাস্তির জন্য পুলিশকে বলেছি।” মেয়েটির বাপেরবাড়ি এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য অসীম সরকার বলেন, “টাকার জন্যই হোক বা কুসংস্কারের জন্য এমন ঘটনা মানা যায় না।”
সুকুমার ছাড়া, তাঁর বাবা সুরেন রায়, মা শোভারানি রায় এবং বোন দ্রৌপদীকে ধরেছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রের খবর, ধৃতেরা দাবি করেছেন, ওই তান্ত্রিক যে এমন কাণ্ড করবে তা বুঝতে পারেননি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.