শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই ছাত্র ধর্মঘট |
শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই ঘর্মঘট। সর্বভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য আনতে গত বছর থেকেই জানুয়ারি থেকে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা দফতর। সেই নির্দেশে বুধবার ২ জানুয়ারি থেকেই তা শুরু হয়েছে। শিক্ষাবর্ষ শুরুর দ্বিতীয় দিনেই রাজ্যে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে এসইউসি-র ছাত্র সংগঠন। দিল্লিতে গণধর্ষণ কাণ্ডের প্রতিবাদ এবং রাজ্য জুড়ে ছাত্রীদের নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে বৃহস্পতিবার বনধ ডেকেছে ডিএসও-ও। বনধের বিষয় নিয়ে বিভিন্ন মহল সহানুভূতি দেখালেও শিক্ষাবর্ষের দ্বিতীয় দিনেই ছাত্র ধর্মঘটের ফলে ভর্তির প্রক্রিয়া যেমন বিঘ্নিত হবে, তেমনই পাঠ্য পুস্তক বিলিও ব্যাহত হবে বলে আশঙ্কা করছে বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষ। উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু স্কুল বৃহস্পতিবারেও খোলার কথা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে স্কুল শুরুর দিনেই ছাত্র ধর্মঘটের কারণে পঠন পাঠন বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সামগ্রিক ভাবে শিক্ষানুরাগী মহলের বক্তব্য শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই ছাত্র ধর্মঘট রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়েই বিরূপ বার্তা দেবে।
যদিও এসইউসি-র ছাত্র সংগঠন ডিএসওর রাজ্য সভাপতি সুজিত ঘোষ বলেন, “ধষর্ণ বা নির্যাতনের ঘটনা দিনক্ষণ দেখে আসেনি। সারা দেশ জুড়ে ছাত্র ছাত্রীরা পথে নেমেছে। আমাদের রাজ্যও পিছিয়ে নেই। সে কারণেই শিক্ষাবর্ষের শুরু থেকে প্রতিবাদ শুরু করা হয়েছে। এবং এতে সাধারণ ছাত্র ছাত্রী এবং শিক্ষকদের বিপুল সমর্থন পাচ্ছি।” বুধবার শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিন থেকে পড়ুয়াদের পাঠ্যপুস্তক বিলি শুরু হয়েছে। শুরু হয়েছে ভর্তি প্রক্রিয়া। জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশিরভাগ স্কুলেই প্রথম দিনে বই বিলি শেষ হয়নি, কিছু স্কুলে বৃহস্পতিবার থেকেই বই বিলি শুরু করার কথা রয়েছে। একই অবস্থা শিলিগুড়ি, কোচবিহারেও। ছাত্র ধর্মঘটের জেরে কোচবিহার জেলার উচ্চ মাধ্যমিক এবং উচ্চ প্রাথমিক মিলিয়ে ৪৭১টি স্কুলে ভর্তি প্রক্রিয়া, বই বিলির মত কাজ ব্যাহত হবে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ছাত্র ধর্মঘটের জেরে সব জেলাতেই এই কাছ পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ডুয়ার্সের ক্রান্তির দেবীঝোড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মকসুদ আলম বলেন, “এখন স্কুলে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই অবস্থায় স্কুল বন্ধ রাখলে সমস্যা।” তৃণমূলের মাধ্যমিক শিক্ষা সেলের কোচবিহার জেলা নেতা পার্থপ্রতিম রায় বলেন, “অন্য ভাবে প্রতিবাদ জানালেই ভাল হত।” উত্তর দিনাজপুরের রাজ্য মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সদস্য বিপুল মৈত্র বলেন, “শিক্ষক-পড়ুয়াদের কেউ স্কুলে ঢুকতে বাঁধা দিলে পুলিশের সাহায্য নেওয়া হবে।” জেলা ছাত্র পরিষদ নেতা তুষারকান্তি গুহ, এসএফআই জেলা সম্পাদক প্রাণেশ সরকার দু’জনেই জানিয়েছেন, শিক্ষাবর্ষের মুখে ছাত্র ধর্মঘট সমর্থন করা যায়না।
জলপাইগুড়ি শহরের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুজন সোমরায় এই প্রসঙ্গে বলেন, “নারী নির্যাতন বা ধর্ষণ নিসন্দেহে ন্যক্কারজনক এবং স্পর্শকাতর বিষয়। তবে শিক্ষাবর্ষের একেবারে শুরুতেই ছাত্র ধর্মঘট শিক্ষার পরিবেশের স্বার্থেই বাঞ্ছনীয় নয়।” এআইডিএসও কোচবিহার জেলা সম্পাদক মৃণালকান্তি রায় এই প্রসঙ্গে বলেছেন, “মানবিক কারণেই এই ধর্মঘট। স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে সবাই সাড়া দেবেন বলে আশা করছি।” |