পানীয় জল সরবরাহ বন্ধ। প্রতিবাদে অনশনে বসলেন বাসিন্দারা। বুধবার মানবাজার থানার শালপাড়া গ্রামের কয়েকশো পুরুষ-মহিলা স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলের পাশে তাঁবু খাটিয়ে অনশনে বসেন। তাঁদের অভিযোগ, আট মাস ধরে গ্রামে জল সরবরাহ বন্ধ। দূর থেকে জল এনে খেতে হচ্ছে। প্রশাসনকে জানিয়েও কাজ না হওয়ায় অনশনে বসা হয়েছে। প্রশাসনের তরফে অবশ্য সমস্যা সমাধানের আশ্বাস মেলেনি।
এ দিন সকালে শালপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, বাসিন্দারা জলের দাবি লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অনশন শুরু করেছেন। বাসিন্দারা জানান, জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর থেকে শালপাড়া, বাঁদরবেড়িয়া, দমদা ও বড়তোড় গ্রামে পাইপলাইনের মাধ্যমের জল সরবরাহ করা হত। স্থানীয় হরেকৃষ্ণপুর গ্রামে কাঁসাই নদী থেকে জল তুলে এই এলাকায় পাঠান হত। নদী থেকে জল তুলে আগে বলুডি গ্রামের জলাধারে মজুত করে রাখা হত। তারপর সেখান থেকে গ্রামে গ্রামে পাঠান হত। কিন্তু সংস্কারের অভাবে জলাধার জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায়, ওই জলাধার ব্যবহার করা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তার বদলে নদী থেকে সরাসরি জল তুলে এখন সরবরাহ করা হচ্ছে। জলের বেগ বেশি না থাকায় এখন শালপাড়া, বাঁদরবেড়িয়া, দমদা ও বড়তোড় প্রভৃতি গ্রামে জল এসে পৌঁছচ্ছে না। |
মানবাজার ব্লকে অনশন। —নিজস্ব চিত্র। |
গ্রামবাসী উমা বাউরি, দিলীপ বাউরিরা বলেন, “গত বছরের মে মাস থেকে এই গ্রামগুলিতে জল সরবরাহ বন্ধ। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে আবেদন জানিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি। তাই অনশনে বসতে বাধ্য হয়েছি।” বাসিন্দাদের সঙ্গে অনশনে সামিল হয়েছেন তৃণমূলের জেলা নেতা দিলীপ পাত্রও। তিনি বলেন, “তিনটি গ্রামে প্রায় হাজারখানেক বাসিন্দার বাস। রয়েছেন শালপাড়া গ্রামে শুধু মাত্র প্রাথমিক স্কুলেই একটি নলকূপ রয়েছে। কিন্তু সেখানে জলের জন্য প্রচণ্ড ভিড় হয়। বাধ্য হয়ে অনেকে এক কিলোমিটার দূরের মানবাজার গ্রামীন স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে জল আনতে যান।” তাঁর অভিযোগ, সমস্যার কথা স্থানীয় বিডিও থেকে জেলা শাসক ও জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের কর্তাদের জানিয়েও সুরাহা হয়নি। বাসিন্দারা জানান, জলসঙ্কটের সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা অনশন চালিয়ে যাবেন।
মানবাজারের বিডিও সায়ক দেব বলেন, “গ্রামবাসীদের অনশনে বসার কথা শুনেছি। আমিও ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বেশ কয়েকবার জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরে চিঠি দিয়েছি।” বিষয়টি নিয়ে ওয়াকিবহাল এক জেলা আধিকারিক এক কদম এগিয়ে বলেন, “যে সব এলাকায় সরাসরি নদীর জল কোনও রকম শোধন ছাড়াই পাঠান হচ্ছে, সেই সব এলাকায় দূষিত জলজনিত কোনও ছড়ায়নি, এটাই আশ্চর্যের।”
মহকুমাশাসক (পুরুলিয়া সদর) সৌম্যজিৎ দেবনাথ বলেন, “এই সমস্যার কথা আমাকে আগে কেউ জানায়নি। খোঁজ নেব।” জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের পুরুলিয়ার অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার নিত্যানন্দ আচার্য বলেন, “এক সপ্তাহ আগে সমস্যার কথা জেনেছি।” তিনি জানান, আজ বৃহস্পতিবার ওই গ্রামে যাবেন। |