|
|
|
|
পরিবর্তনের শহরে আজ প্রত্যাবর্তনের খোঁজ
রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায় • কলকাতা |
|
|
ছোটখাটো ‘ক্লাস’-ই চলছে বলতে গেলে। ‘ছাত্রে’র নাম বিরাট কোহলি! পাখি পড়ার মতো তাঁকে ইডেন ড্রেসিংরুমে বুঝিয়ে চলেছেন দুই ‘গুরু’ বীরেন্দ্র সহবাগ এবং মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। “আট বছর আগে বিশাখাপত্তনমে পাকিস্তানকে বেধড়ক মেরেছিলাম আমরা। পনেরো ওভারে দেড়শো উঠেছিল। তুই ইডেনে ও রকম একটা খেল!” বিরাট শুনছেন আর মাথা অল্প অল্প নড়ছে।
চেন্নাইয়ের বিপর্যয়ের ‘ভূত’ কলকাতাতেও রেহাই দিচ্ছে না সুরেশ রায়নাকে। নইলে সন্ধেয় টিম হোটেলে বসে এক ঘনিষ্ঠকে কেন বিলাপ শুনতে হবে, “আরে, চিপকে রানটা তো খারাপ ওঠেনি। বোলাররাই পারল না। এখানে কিছু না হলে...।”
ফাঁকা ক্লাবহাউসে কোথা থেকে বিশাল তেরঙ্গা এসে হাজির। দোলাচ্ছেন মাথা ন্যাড়া, লম্বা টিকি-র এক অদ্ভুতদর্শন যুবক। এক হাতে পতাকা, অন্য হাতে শঙ্খ। ওঁর নাম সুধীর। ভারতীয় দল যেখানে যায়, উনিও যান। এই বিপর্যয়েও দলের সঙ্গ ছাড়েননি। অক্লেশে বলে দিচ্ছেন, “হবে, এই ইডেন থেকেই হবে।” মাঠে ধোনি একবার স্টেপ আউট করলেন, আর সঙ্গে সঙ্গে শাঁখে ফুঁ! |
|
যুদ্ধে যেন একলা। ছবি উৎপল সরকার |
গলায় এতটুকু তাপ-উত্তাপ নেই। সামনে মরণ-বাঁচন ম্যাচ, তবু। ভিড়ে ঠাসা সাংবাদিক সম্মেলনে নির্বিকার মুখে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি বলছিলেন, “আমরা একটু চাপে। কিন্তু বাঁচা-মরার কিছু নেই এখানে। জিততে হবে, জানি। চেষ্টা করছি। রেকর্ডটাও পাল্টাতে হবে।”
ভিন্ন সময়, ভিন্ন প্রেক্ষাপট। অন্দরমহলের কিছু, কিছু প্রকাশ্য। বুধবার এ ভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকল টিম ইন্ডিয়ার মনন।
এবং আজ ইডেনে ভারত-পাকিস্তান মহাযুদ্ধের আগে সেই মননকে যদি এক ফ্রেমে আনতে হয়, বাঁধতে হবে একটা লাইনে।
পরিবর্তনের শহরে প্রত্যাবর্তনের খোঁজ।
চৌত্রিশ বছর বাম-জমানার শেষে এই শহর এখন পরিবর্তনের। সেখানে যেমন টিম ইন্ডিয়ার সিরিজে প্রত্যাবর্তনের গল্প লুকিয়ে থাকছে, তেমনই পরিবর্তনের খোঁজও থাকছে। পঁচিশ বছরের পুরনো এক রেকর্ড। অতীব কষ্টের, অসহ্য যন্ত্রণার। যে মাঠ দেশজ ক্রিকেট-ঐতিহ্যের শেষ কথা, যে স্টেডিয়ামকে তৃতীয় বিশ্ব নিজ-লর্ডস মনে করে, সেখানে আজ পর্যন্ত চিরশত্রুদের হারানো যায়নি! পাঁচ দিনের যুদ্ধে নয়, একদিনেও নয়। কখনও দেখতে হয়েছে সেলিমের ইডেনের ‘মালিক’-এ রূপান্তর। কোথাও আবার আশ্চর্য সেঞ্চুরিতে নিশ্চিত হার বাঁচিয়ে দিয়েছেন ইউনিস খান। সলমন বাটকেও ভুলতে পেরেছে ইডেন? সাত বছর আগের সেই ওয়ান ডে-তে এখানে তাঁর সেঞ্চুরি আজও ক্রিকেটপাগল বাঙালির স্বপ্নে কাঁটাতারের সমগোত্রীয়।
অতএব, পরিবর্তন চাই।
|
আমরা একটু চাপে। কিন্তু বাঁচা-মরার কিছু নেই। জিততে হবে, জানি। রেকর্ডটাও পাল্টাতে হবে।
মহেন্দ্র সিংহ ধোনি |
ইনশাল্লাহ, ইডেন আমাদের অনেক সুখের মুহূর্ত উপহার দিয়েছে। আশা করব আরও একটা দেবে।
মিসবা উল হক |
এখন ভারতীয় দলের অংশ না হলেও সব সময় আমার সমর্থন দলের সঙ্গে থাকবে। ধোনিরা দ্রুত সিরিজে লড়াইয়ে ফিরবে। আমার শুভেচ্ছা রইল।
সচিন তেন্ডুলকর |
|
• বৃষ্টির মোকাবিলায় চারটে সুপার-সপার, অতিরিক্ত কর্মী। দরকারে ম্যাচের সময় বাড়বে।
• বিরাট কোহলি খেলছেন। সম্ভবত রোহিতের জায়গায় জাডেজা।
• উমর গুলের জ্বর। নাসির জামশেদের সামান্য চোট। |
|
• সকাল থেকে মেঘলা আবহাওয়া।
• বৃষ্টির আশঙ্কা থাকছে।
• তাপমাত্রা ২৪ ডিগ্রির কাছে
ঘোরাঘুরি করতে পারে।
সন্ধ্যার পর আরও কমবে। |
|
|
হাল্কা বৃষ্টির সম্ভাবনা |
আজ, বৃহস্পতিবার কলকাতায় হাল্কা বৃষ্টির পূর্বাভাস দিল আলিপুর আবহাওয়া দফতর। তবে তা ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে কোনও প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করছেন আবহবিদেরা। তাঁরা বলছেন, মেঘ থাকার জন্য দিনের বেলা অস্বস্তিকর আবহাওয়ার সৃষ্টি হচ্ছে। হাল্কা বৃষ্টির পরে সেটা অনেকটা কেটে যাবে। হাল্কা বৃষ্টি হলে খেলা দেখার পক্ষে আবহাওয়া আরও মনোরম হবে বলেই আশা দিচ্ছেন তাঁরা।
|
|
• ইডেন ঘিরে পুলিশের ওয়াচ টাওয়ারের সংখ্যা বেড়ে গিয়ে হচ্ছে ৯। |
• বালির বস্তা দিয়ে তৈরি ১৫টি বাঙ্কার থাকবে ইডেন ঘিরে। |
• ইডেনের মধ্যে ও বাইরে বসছে ১৩৩টি ক্যামেরা।
যা গ্যালারি ছাড়াও আশে পাশের রাস্তার ছবি তুলবে। |
• গ্যালারির বিভিন্ন জায়দায় ডগ স্কোয়াডের সদস্যরা। |
• গ্যালারির প্রতিটা ব্লকে থাকবে ডেপুটি কমিশনার মর্যাদার পদস্থ পুলিশ অফিসার। |
• ৫ হাজার মতো পুলিশ থাকবে গ্যালারির বিভিন্ন জায়গায়। |
|
ত্রিস্তর নিরাপত্তার বলয়ে ইডেনকে মুড়ে ফেলা হবে। টিকিট ব্ল্যাক
হচ্ছে কিনা আমরা কড়া নজর রাখছি।
পল্লবকান্তি ঘোষ, যুগ্ন কমিশনার (অপরাধ দমন) |
|
চেন্নাইয়ের পর ইডেনেও ধোনির ‘হামার’ যদি জীবনের হাইওয়েতে না ফেরে, ভবিষ্যতে কী ওঁত পেতে বসে আছে ক্লাস ফাইভের বাচ্চাও বলে দেবে। তবে বৃহস্পতিবারের বারবেলায় ক্যাপ্টেন কুলের সামনে হাজারো সমস্যা। আকাশ ছোঁয়া ইরফান যেমন আছেন, তেমন কলকাতার আকাশও আছে। পূর্বাভাস বলছে অল্প বিস্তর বৃষ্টির আশঙ্কা। ম্যাচ ভেস্তে গেলে টি-টোয়েন্টির মতো ওয়ান ডে সিরিজটা জেতারও কোনও সুযোগ থাকবে না ধোনির সামনে। থেমে যাবে প্রত্যাবর্তনের কাহিনি।
ইডেনের বাইশ গজও কি তাঁকে টেনশনে রাখছে? ধোনি যথারীতি ‘কুল’ এবং মস্করার মেজাজে। ইডেনের উইকেট নিয়ে বছরখানেক আগে বলেছিলেন ‘আগলি’। এ বারেরটা কী? মুচকি হেসে ধোনি উত্তর, “প্র্যাক্টিস উইকেট যা দেখলাম, তুলনায় মিস ইউনিভার্স!” শুনে মিডিয়ার অট্টহাস্য। আর ‘ক্যাপ্টেন কুলে’র মুখে হাসি ফোটাচ্ছে একটা ছোট্ট খবর। বিরাট কোহলি ফিট। ইডেনে নামছেন। পরে ধোনি বলেও গেলেন, “আর কত খারাপ হবে? যা হওয়ার তো হয়েই গিয়েছে।”
আঁধার কাটিয়ে উত্তরণের স্বপ্ন?
মুশকিল হচ্ছে, ধোনি এবং তাঁর স্বপ্নের মাঝে এমন একটা দল দাঁড়িয়ে, যারা পূর্বসূরিদের মতো অনিশ্চয়তার সরণি ধরে হাঁটে না। পরিবর্তনটা শুরু হয়েছে আজ নয়, অনেক দিন থেকে।
কী রকম? করাচিতে গুলি চলে, ম্যাচ গড়াপেটার অন্ধকার গলিতে ঢুকে পড়ে পাকিস্তান ক্রিকেট। তবু ফের সম্মানের রাজপথে উঠে আসতে অসুবিধা হয় না। অস্ট্রেলিয়াকেও হার মানতে হয় আজমলদের কাছে। গড়াপেটার অভিযোগে কুড়ি বছরেই প্রায় শেষ হয়ে যায় মহম্মদ আমেরের ক্রিকেটজীবন। উত্তরে উঠে আসেন জুনায়েদ, ইরফানরা।
প্রত্যাবর্তনের বৃত্তটা সম্পূর্ণ করতে মিসবাদের সামনে এ বার ‘মিশন ইন্ডিয়া’। যেখানে পাকিস্তান তিনটে ম্যাচের মধ্যে জিতে বসেছে দু’টো। টি-টোয়েন্টি আর ওয়ান ডে ধরে। মিসবার কথায়, “ওয়খ্ত বহত আচ্ছা চল রহা হ্যায়।”
পরিবর্তনের শহরে তাই আজ প্রত্যাবর্তনের যুদ্ধ। একা ভারতের নয়, পাকিস্তানেরও। |
|
|
|
|
|