|
|
|
|
‘ভোট কিনতে টাকা ছড়ানোর’ অভিযোগ
সভাধিপতির, উৎসবে ব্যয় কোটি-কোটি |
সুমন ঘোষ • মেদিনীপুর |
মেলায় থাকবে যাত্রা থেকে শীতলামঙ্গল। নাচবে ছৌ থেকে চ্যাঙ। মেলায় মিলবে সাইকেল, মোটর বাইক। ক্লাবদের (ফুটবল দল) পঁচিশ হাজার টাকা।
এই ভাবেই কোটি-কোটি টাকা ব্যয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের সদর মেদিনীপুরে হচ্ছে জঙ্গলমহল বিবেক ছাত্র ও যুব উৎসব। এখন রাজ্য জুড়েই চলছে বিবেক ছাত্র ও যুব উৎসব। প্রতিটি জেলার প্রতিটি ব্লক ও পুরসভাতেই তা হচ্ছে। মেদিনীপুরেও হয়েছে। আবার আলাদা করে জঙ্গলমহল উৎসব করার যুক্তি নিয়ে তাই উঠছে প্রশ্ন। বিশেষ করে যেখানে মুখ্যমন্ত্রী প্রতি দিনই ‘শূন্য ভাঁড়ারে’র দোহাই দিচ্ছেন।
বৃহস্পতি থেকে শনিতিন দিনের জঙ্গলমহল বিবেক ছাত্র উৎসবে কত টাকা খরচ হবে?
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সাধারণ খাতে আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে দেড় কোটি টাকা (৭০-৮০ লক্ষ টাকাতে মিটে যেতে পারে)। মণ্ডপ, প্রচার, শিল্পীদের সাম্মানিক ও যাতায়াত খরচ, যাত্রা প্রভৃতিতে এই খরচ হবে। আর পুলিশ-প্রশাসনের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি ৪৭ লক্ষ টাকা। এর বাইরে রয়েছে জঙ্গলমহলের তিনটি জেলার মাওবাদী উপদ্রুত ব্লকের ১৫৩১টি ক্লাবকে (বলা ভাল ফুটবল দলকে) ২৫ হাজার টাকা করে অর্থ সাহায্য। অর্থাৎ ৩ কোটি ৮২ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা। ক্লাবগুলি চিহ্নিত করেছে পুলিশ। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরীর কথায়, “যে সব ক্লাব জঙ্গলমহল ফুটবল প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়েছিল, তাদেরই অর্থ সাহায্য করছে সরকার।” এই দলগুলির মধ্যে অনেকেরই ক্লাবের রেজিস্ট্রেশন নেই। |
|
জঙ্গলমহল উৎসবে নীল-সাদায় সাজছে মঞ্চ। —নিজস্ব চিত্র। |
তা মেনে নিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, “আমরা জঙ্গলমহলের যুব সমাজকে মূল স্রোতে ফেরাতে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উপর জোর দিয়েছিলাম। হাজার-হাজার যুবকদের খেলার আঙিনায় আনতে পেরেছি। পুলিশ ও সরকারের প্রতি তাঁদের আস্থা ফেরাতে পেরেছি। এ বার এই অর্থ তাঁদের ক্লাব তৈরিতে সাহায্য করবে। সুস্থ সাংস্কৃতিক পরিবেশ গড়ে উঠবে। আমরাও সে দিকে নজর রাখব।”
যদিও রেজিস্ট্রেশন না থাকা সত্ত্বেও টাকা দেওয়ার অর্থ ‘ভোট কেনাই’ দাঁড়ায় বলে মত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্যের। তিনি বলেন, “পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে মেলার নাম করে সরকারি উদ্যোগে মানুষকে টাকা পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে। বর্তমান রাজ্য সরকারের কোনও উন্নয়ন পরিকল্পনা নেই, শৃঙ্খলা নেই। এটা মানুষ বুঝে গিয়েছে। মানুষ বিমুখ হচ্ছে বুঝেই টাকা ছড়িয়ে ভোট কেনার খেলায় মেতেছে এই সরকার।” অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে মেদিনীপুরের তৃণমূল বিধায়ক মৃগেন মাইতি বলেন, “জঙ্গলমহলের মানুষকে মূলস্রোতে ফেরাতেই ফুটবল দলগুলিকে অর্থ সাহায্য করা হচ্ছে। যাতে তাঁরা ক্লাব তৈরি করে সুস্থ সংস্কৃতির বাতাবরণ তৈরি করেন। গরিব শিল্পীদের উপকার করারও চেষ্টা আছে। এর সঙ্গে কোনও রাজনীতির সম্পর্ক নেই।”
আর কী খরচ হবে?
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ছৌ, করম, চ্যাং, পাইক, ঝুমুর, শবর প্রভৃতি লোকশিল্পীরা আসছেন উৎসবে। শীতলা মঙ্গল, পটচিত্র পাঠ, যাত্রাপালাও হচ্ছে। প্রতিটি দলই ৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা সাম্মানিক পাবেন। শনিবার জঙ্গলমহলে ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় যোগদানকারী ফুটবল ও তীরন্দাজ দলের ২৭ হাজার ৬০০ জন প্রতিযোগীকেই হাজির করানো হবে মুখ্যমন্ত্রীর সামনে। চারটি পুলিশ জেলার চারটি মহিলা ফুটবলে শ্রেষ্ঠদের দেওয়া হবে স্কুটি ও পুরুষদের ক্ষেত্রে মোটরবাইক। বিজয়ী দলের (পুরুষ ও মহিলা, প্রতি দলে ১৫ জন) প্রত্যেক সদস্যদের দেওয়া হবে ট্রাক স্যুট ও সাইকেল। তীরন্দাজ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী দু’জনকে ট্রাক স্যুট ও দু’জনকে সাইকেল দেওয়া হবে। এর মধ্যে কিছুর স্পনসর পাওয়া গিয়েছে।
বাকি পুরস্কার, প্রতিযোগীদের নিয়ে আসা, খাওয়ানোর খরচ সরকারের। জনগণের করের টাকায়। |
|
|
|
|
|